মেব্ল্ শেষ অঙ্কটা দেখতে পেয়ে মাটিতে গড়াগড়ি দিয়ে হাসছিল।
কী করে জানব, বলো, কোনটা প্রেমের ন্যাকরামোর চিৎকার আর কোনটা ধষর্ণভীতির সকরুণ আতাঁরব! একেই বলে বাকিঙ আপ দি রঙ ট্রী।
সেই আমি কলকাতার ডাক্তারদের শেষ রায় শুনে ফিরে এলুম মধুগঞ্জে। মেকে আদর না করে ঝুপ করে বসে পড়লুম ডেকচেয়ারে ঘণ্টা তিনেকের তরে। ডন তখন হ্যামলেটের রূপ নিতে আরম্ভ করছে। মেব্ল্ তখন আমার কপালে হাত বুলিয়ে আদর করেছিল–আমি সাড়া দিইনি।
সব কথা মেকে খুলে বলার প্রয়োজন হয়নি। কলকাতা থেকে ফিরে আসার পর আমি তার গাত্র স্পর্শ করছিনে দেখেই সে সমস্ত ব্যাপার নিশ্চয়ই বুঝে নিয়েছিল। পরের দিন ভোর বেলা দেখি, মেবল্ ঘরে নেই। বারান্দায় পেলুম তাকে, একটা মোড়ার উপর দুহাত দিয়ে মুখ ঢেকে বসে আছে। আমি তার মাথায় হাত বুলিয়ে দেবার সাহস পর্যন্ত করতে পারলুম না।
তোমাদের দেশে নাকি নিষ্কাম প্রেমের আদর্শ আছে। যৌনক্ষুধাকে অবহেলা করে তোমাদের বহুলোক জীবনধারণ করে। আমাদের দেশে যে একদম নেই সে কথা আমি বলছিনে। ক্যাথলিক পাদ্রী আর মিষ্টিকরা রমণী-সঙ্গ কামনা করে না, তোমাদের বিধবারা যে রকম যৌনক্ষুধার নিবৃত্ত করে থাকেন। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে এঁরা সর্বপ্রকার প্রেমকেও কাটার মতো দেহ-মন থেকে তুলে দুরে ফেলে দেন। তাদের শুধু লড়তে হয় শারীরিক প্রলোভনের সঙ্গে। আমার বেলা তো তা নয়। আমি ভালোবাসতে পারি, বাসিও, কিন্তু শরীর দিয়ে বাসতে পারব না। সেও হয়তো অসম্ভব কঠিন মনে হত না যদি মেব্ল্ আর আমি একসঙ্গে প্রতিজ্ঞা করে নিতুম, আমরা আমাদের প্রেম দেহের স্তরে নিয়ে যাব না।
তোমার মনে আছে, সোম, তোমার আমার সামনে আমাদের জেলের একটা ঘটনা? স্বদেশী কয়েদীকে শেষ বিদায় দিতে এসেছে তার স্ত্রী, বাচ্চাকে কোলে করে। বাপ চেয়েছিল ছেলেকে কোলে নিতে, বাচ্চাটাও মায়ের কোল থেকে ঝাঁপ দিচ্ছিল বাপের দিকে। মাঝখানে লোহার জাল।
আমরা দুজনাই সে জায়গা ছেড়ে চলে এসেছিলুম। অবান্তর তবু যখন সুবাদটা এল তাই বলি, পরে আমার কাছে খবর এল, তুমি নাকি গোপনে তাদের মিলনের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলে। খবরটা আমাদের দিয়েছিল জেলার আরো গোপনে তোমার বিরুদ্ধে আমাকে তাতানোর জন্য। আমার ইচ্ছে হচ্ছিল ব্যাটাকে ধরে হান্টার নিয়ে তার ন্যাংটো পাছায় আচ্ছা করে চাবকাই। ভাষাটা একটু অস্র হল, না সোম? কিন্তু আমি তখন খুনিয়া রাগের মাথায় যে অভদ্র ভাষা মনে মনে ব্যবহার করেছিলুম, তারই স্বহু প্রকাশ দিলুম মাত্র। আহির মনকে মেনে নিয়েও ভণ্ডামি মেনে নিতে পারিনি সে কথা আমি পূর্বেই বলেছি। সে কথা থাক।
আমার অবস্থা তখন আরো কঠোর। আমার আর মেলের মাঝখানে যে জাল রয়েছে সেটা একদিন ছিন্ন হয়ে গেলে যেতেও পারে কলকাতার ডাক্তাররা সেই অতি ক্ষীণ আশাই দিয়েছিল এবং প্রতিদিন প্রতি রাত্রি সেই আশাই আমাকে মুখ ভেঙচিয়েছে।
নিষ্কাম প্রেমের কথায় ফিরে যাই। কাব্য যদি মানব-জীবনের দর্পণ হয় তবে শুধাই তোমাদের সে দর্পণে নিষ্কাম প্রেমের কতটুকু আভাস মেলে? রায়বাহাদুর কাশীশ্বর আমাকে দিয়েছিলেন দুখানি সংস্কৃত কাব্যের ইংরেজি অনুবাদ। মেঘদূত, আর গীতগোবিন্দ। (পর্নোগ্রাফি আর রিয়েল আর্টের মধ্যে তফাত কী তাই নিয়ে তখন একটা মোকদ্দমা চলছিল; রায়বাহাদুরের মতে মেঘদূত-গীতগোবিন্দ আর্ট আর মিসটিজ অব দি কোর্ট অব লণ্ডন অশ্লীল, যদিও তাতে শরীরের খুঁটিনাটি বর্ণনা অনেক, অনেক কম)। এই বই দুখানিতে কী নিষ্কাম প্রেমের ছড়াছড়ি? অন্য বইয়ে থাকতে পারে এই ভেবে আমি রায়বাহাদুরের দ্বারস্থ হই। তিনি কবুল জবাব দিয়ে বললেন, সংস্কৃতে নিষ্কাম প্রেমের বালাই নেই, সে বস্তু এসেছে মুসলমান আগমনের পর বাঙলা-হিন্দীতে। খবু সম্ভব সুফীদের নিষ্কাম প্রেম থেকে এ বস্তু এ-দেশে পাচার হয়েছে। আমি তা হলে বলব, তোমরা যতদিন ভিরাইল, বীৰ্বান ছিলে ততদিন নিষ্কাম প্রেম সম্বন্ধে ছিলে সম্পূর্ণ অচেতন। নিষ্কাম প্রেম অনৈসর্গিক। কিন্তু থাক তোমাদের দিসাস্য। আমি ক্রীস্টানের ছেলে। আমি বরঞ্চ বাইবেলে যাই।
আমি বিলক্ষণ জানি বুড়ো পাদ্রী তোমাকে অনেক বাইবেল উপহার দিয়েছেন, বদ্বার তোমাকে বইখানা পড়বার জন্য অনুরোধ করেছেন, কিন্তু তুমি পড়নি। কাজেই যে কটি লাইন তোমাকে শোনাব সেগুলো তুমি আগে কখনো শোননি।
How beautiful are thy feet with shoes. O prince’s daughter!! the joints of thy things are like jewels, the work of the hands of cunning workman.
Thy navel is like a round goblet, which wanteth not liquor: thy belly is like and heap of wheat set about with lilies.
Thy two breasts are like two young roes that are twins.
Thy neck is a tower of ivory : thine eyes like the fishpools in Heshbon, by the gate of Bathrabbim: thy nose is as the tower of Lebanon which looketh toward Demascus.
Thine head upon thee is like Carmel, and the hair of thine head like purple: the king is held in the galleries.
How fair and how pleasant are thou. O love for delights.