পৃথিবীর জমিতে শয়তানের স্বত্ব নেই। তাই শর্ত হল, নুহ দেবেন জমি, শয়তান দেবে আঙুরের বীজ। গাছের তদারকিও ৫০-৫০।
নূহ তো যত্ন করে সকাল-সন্ধ্যা চারার গোড়ায় ঢালেন সুমিষ্ট, সুগন্ধি বসরাই গোলপজল আর শয়তান ঢালে গোপনে গোপনে নাপাক শুয়রের রক্ত।
নুহের পাক পানির ফলে, ফলে উঠল মিষ্টি আঙুর ফল। আঙুরের মতো ফল পৃথিবীতে আর নেই। কিন্তু শয়তানে যে দিয়েছিল না-পাক চীজ; তারই ফলে আঙুর পচিয়ে তৈরী হয় মদ। সেই মদ খেয়ে মানুষ করে মাতলামো, যত রকমের জঘন্য পাপ।
আহুর মজদা আমার জীবনের প্যাটার্ন গড়েছিলেন অতি যত্নে, ভালো কোনো রঙই তিনি সে প্যাটার্নে বাদ দেননি, সেকথা তোমাকে পূর্বেই বলেছি।
আহির মন আড়ালে দাঁড়িয়ে মুচকি মুচকি হাসছিল। সে তার শক্তি সম্বন্ধে সচেতন। প্যাটার্ন যখন শেষ হবার উপক্রম তখন সে তার ভিতর ছেড়ে দিল মাত্র একটি পোকা এক রাত্রেই প্যাটার্ন কুটিকুটি হয়ে গেল।
বিশ্বকর্মা তিন ভুবনের সুন্দর সুন্দর জিনিস নিয়ে তিলে তিলে গড়লেন অনবদ্যা তিলোত্তমা। আহির মন তার রক্তে ঢেলে দিল গলিত কুষ্ঠের ব্যাধি।
এ প্যাটার্ন রিপু-করা, এ গলিত কুষ্ঠকে নিরাময় করা আহুর মজদার মরদের
.
১৮ই আগষ্ট
যৌবনে বেঁচে থাকার আনন্দেই (জোয়া দ্য ভি) মানুষ এত মত্ত থাকে যে, মোক্ষের সন্ধান সে করে না। শেলি না কে যেন বলেছেন,
I have drunk deep of joy
And I will taste no other wine to-night.
যখন মানুষ সে আনন্দ থেকে বঞ্চিত হয়, অথবা যখন বৃদ্ধ বয়সে মৃত্যুর সম্মুখীন হয়ে ভয় পায় তখনই সে ওসব জিনিস খোঁজে। এ কথা শুধু ব্যক্তির পক্ষে সত্য নয়, গোটা জাতির পক্ষেও খাটে। তোমাদের জাতি যে কত পুরনো সেটা শুধু এই তত্ত্ব থেকেই স্পষ্ট বোঝা যায় তোমরা মোক্ষের অনুসন্ধান আরম্ভ করেছ খ্রীষ্ট-জন্মের প্রায় দু শ বছর পরে। তাই দেখো, এই মধুগঞ্জের মুসলমানরাই তোমাদের তুলনায় ফুর্তিফার্তি করে বেশী; কামায় টাকাটা, খর্চা করে পাঁচ দিকে।
আইরিশমেনদের কাছেও মোক্ষ-সন্ধান এসেছে সম্প্রতি–তাও পাঁচ হাত হয়ে, ঘষা মাজা খেয়ে। তাই আমার না ছিল মোক্ষ-সন্ধানের জাতীয় ঐতিহ্য, না ছিল কণামাত্র ব্যক্তিগত প্রয়োজন। যে সব ধর্মের কথা এসে যাচ্ছে সেগুলোর অনুসন্ধান আমি করেছি আহির মনের মার খেয়ে। এবং যে সব মীমাংসায় পৌচেছি (তার কটা সম্বন্ধেই বা আমি সম্পূর্ণ নিঃসন্দেহ?–সম্পূর্ণ সত্য তো ভগবানের হাতে, মানুষের চেষ্টা তো ক্রমাগত যতদূর সম্ভব কাছে আসবার।) সেগুলো মাত্র কিছুদিন হল।
তাই আমার এ জবানবন্দিতে আহুর মজাদা আহির মনের কথা আসা ছিল উচিত হয়ত সর্বশেষে। কিন্তু তা-ই বা বলি কী করে? আমরা ইতিহাস লিখি ক্রনোলজিকালি– কোন ঘটনা আগে ঘটেছিল, কোনটা পরে সেই অনুযায়ী। কিন্তু অভিধান লেখায় সময় অ্যালফাবেটিকালি; যে শব্দ পৃথিবীতে প্রথম জন্ম নিয়েছিল সেইটে দিয়েই আমরা অভিধান লেখা আরম্ভ করিনে। আমার জীবন অভিধান তো নয়ই, ইতিহাসও নয়। আমি মরে যাওয়ার পর আমার জীবন তোমার কাছে ইতিহাসের রূপ নেবে। ইতিহাসের বর্তমান থাকে না, ভবিষ্যৎ নেই, তার আছে শুধু ভূত। আমি বেঁচে আছি, কাজেই আমার ভবিষ্যৎ আছে, কিন্তু সে থেকেও নেই ভূত আর বর্তমান এমনভাবে জড়িয়ে গিয়েছে যে, তার জট ছাড়িয়ে পাকাপাকি কালানুক্রমিকভাবে সব কিছু বলতে পারব না।
আহির মনকে স্বীকার করে আমি অধর্ম করেছি? অধর্ম অন্যায় যাই করে থাকিনে কেন, আমি কিন্তু ভণ্ডামি করিনি। সেই আমার সবচেয়ে বড় সান্তনা। কিন্তু আবার দেখো, আরেক নূতন ডিলেমায় পড়ে গেলুম। আমি যদি ভণ্ডামি ঘৃণা করি তবে আমি আবার আহুর মজদাপন্থী হয়ে গেলুম! ভণ্ডামি তো আহির মনের, সত্যনিষ্ঠা মজদার। এ দ্বন্দ্বের কি অবসান নেই?
হয়ত আছে, হয়তো নেই। তাই হয়তো তখন অন্তরের দ্বন্দ্ব মূলতবী রেখে দেখতে হয় কর্মক্ষেত্রে মানুষ কী করে। সেখানে তো মানুষকে অহরহ ডিসিশন-মীমাংসা, নিষ্পত্তি করতে হয়। এ সংসারে সকলের ভিতরেই কিছু না কিছু হ্যামলেট লুকিয়ে আছে যে সর্বক্ষণ টু বি অর নট টু বির সন্দেহ-সমুদ্রে দোদুল দোলায় দোলে, কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে ডন কিকস্টও রয়েছে যে ক্ষণমাত্র চিন্তা না করে নাঙ-তলোয়ার হাতে নিয়ে যাকে তাকে তাড়া লাগায় আমরা যাকে বলি বার্কস আপ দি রঙ ষ্ট্রি–যে গাছে বেড়াল ওঠেনি তারই তলায় দাঁড়িয়ে উপরের দিকে তাকিয়ে করতে থাকে ঘেউ ঘেউ।
বেচারী মেব্ল্। সে আমার ডন কিকসট রূপটাই চিনত। লণ্ডনে আস-আঁ–প্রভাসে কিছুটা ঘটলেই আমি তড়িঘড়ি অ্যাকশন নিয়ে তার একটা সমাধান করে দিতুম। ভুল যে করিনি তা নয়। একটা ঘটনার কথা বলি। আকসের বনে গিয়েছি মেব্ল্কে নিয়ে বেড়াতে। হঠাৎ শুনি নারীকণ্ঠে পরিত্রাহি চিৎকার। ছুটে গিয়ে দেখি এক ছোকরা একটা মেয়েকে জাবড়ে ধরে চুমো খাবার চেষ্টা করছে আর মেয়েটা বাপরে বাপ সে কী তীক্ষ্ণকষ্টে–চেঁচাচ্ছে। আমি ডন কিকসটের মতো ছোঁড়াটার কলারে ধরে দিলুম হ্যাঁচকা টান, তার গালে গোটা দুই চড়! মেয়েটা আমার দিকে তাকালে। আমি ভাবলুম, সে বুঝি আমার শিভালরির কদর জানাতে গিয়ে আমাকেই না চুমো খেয়ে বসে! কী হল জান, সোম? মেয়েটা দৃঢ়পদে এগিয়ে এল আমার কাছে। তারপর বলা নেই কওয়া নেই, দুহাত দিয়ে ঠাস ঠাস করে মারলে আমার গালে ছোঁড়াটার গালে নয় আমার গালে গণ্ডা পাঁচেক চড়! মোজাবুনুনির স্পীডে। আমি তো বিলকুল বেকুব। তারপর মেয়েটা ছোঁড়াটার হাত ধরে হনহন করে চলে গেল বনের ভিতর।