মানুষের কখন যে কী মনে পড়ে যায়। কেন যে! আমি হঠাৎ জিজ্ঞাসা করলাম, আচ্ছা মহীতোষ, আল কাপিতান এখান থেকে দেখা যায় না?
আল কাপিতান? সে তো অনেক দূর! কেন ওদের বাড়ি থেকে দেখেননি? ওখান থেকে স্পষ্ট দেখা যায়। ইনফ্যাক্ট, ট্যুরিস্ট গাইডে মার্সেদের নামই তো আপনার গেটওয়ে টু আল কাপিতান।
না, মানে, তোমার এখান থেকে… আহা। পাওয়ারফুল বায়নাকুলার দিয়ে এখান থেকেও দেখা যায়। আমার আছেও একটা, মহীতোষ বলল, দেখবেন?
মহীতোষ আমাকে দোতলার ব্যালকনিতে নিয়ে গেল। আমার হাতে একটা ফুট দেড়েক লম্বা বায়নাকুলার ধরিয়ে দিয়ে বলল, ওই দিকে খুঁজুন। দেখতে পাচ্ছেন?
হ্যাঁ। ওই যে। আজ বরফ পড়েছে নাকি!
বরফ? হ্যাঁ, তা পড়তে পারে। আপনি কিন্তু তাড়াতাড়ি নিচে আসবেন। আমি ব্রেকফাস্ট রেডি করছি। বাস আসতেও দেরি নেই।
ক্যালিফোর্নিয়ার গোটা পূর্ব সীমানা জুড়ে রেড ইন্ডিয়ান ঈশ্বরের নিজের হাতে তোলা উঁচু পাঁচিল: সিয়েরা নেভাদা পর্বতমালা। তার মাঝখানে আল কাপিতান। একখণ্ড সাদা গ্রানাইট দিয়ে তৈরি পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু সমাধিফলক। এখান থেকে শুধু তার সমতল চূড়াটি দেখা যায়। আজ, এই প্রথম কাপিতানের মাথায় বরফ।
কিন্তু… আমি কি ভুল দেখলাম? বরফে-ঢাকা আল কাপিতানের মাথায় আমি পলকের জন্য একবার দেখতে পেলাম একটি কালো হারমোনিয়াম। পর মুহূর্তে, অনন্ত শুভ্রতার ঢাল বেয়ে, উল্টে-পাল্টে সেটা নিচের দিকে গড়িয়ে এল। মাত্র একবার আমি স্পষ্ট দেখলাম। তারপর আর দেখা গেল না।
আমি কিদূরবীনের ভুল দিকটা দিয়ে দেখছিলাম?
বাবা, বাস এসে গেছে। কী করছ তুমি! শিগগির নেমে এসো।
আসুক বাস। জিনিসপত্র বলতে তো সঙ্গে কিছু নেই। শুধু উঠে পড়া। কাঠের সিঁড়ি দিয়ে ধীরে নামতে নামতে আমি ভাবলাম, না, দূরবীন নয়। এ আমার চোখেরই ভুল। তৃষিত মানুষ মরীচিকা দেখে। আমি দেখেছি সমাধি ফলকের মাথায় সুরযন্ত্র। এ হতেই পারে।