অঞ্জন?
কী। বলো।
কোথায় গিয়েছিলে?
রিনো নেভাদা।
কেন?
গ্যাম্বলিং। হোয়াই?
তোমার সঙ্গে কথা আছে। বসো এখানে।
হোয়াই?
তুমি জুয়ো খেলতে গেলে, টাকা কোথায় পেলে?
বাবার পেজে ঘড়ি উল্টে ও বলল, আমরা তোমাদের মতো গরিব নই।
আমার নেশা না কমে ভীষণভাবে বেড়ে গেছে। মাথা টলে যাচ্ছে মাঝে মাঝে।
শোনো। তোমার বাবার ক্লাসমেট চুনীলাল রায় তোমার গার্জেন হয়েছেন।
চলে যাচ্ছিল। নিজের ঘরের দরজা পর্যন্ত চলে গিয়েছিল। আমার কথা শুনে ফিরে এল।
আমার মুখে প্রায় মুখ ঘষে জানতে চাইল, অ্যান্ড হু আর ইউ টু ডিসাইড দ্যাট?
আমি তোমার ন্যাচারাল গার্জেন। বিয়িং নিয়ারেস্ট কিন টু ইওর ফাদার।
আই হ্যাভ নো রিলেশানস ইন ইন্ডিয়া। নাইদার ড় আই নিড অ্যান ইন্ডিয়ান গার্জেন, মাটিতে পদাঘাত করে ও বলল, আই হেট ইন্ডিয়ানস। আই হেট বেগার্স।
বাট ইওর পেরেন্টস ওয়্যার ইন্ডিয়ানস।
দ্যাটস হোয়াই আই হেট দেম অলসো। আই হেট মাইসেলফ বিকজ আই হ্যাভ অ্যান ইন্ডিয়ান বডি। দিস ইন্ডিয়ান শিট! বলে নিজের দিকে তাকিয়ে ঠোঁট কাঁপিয়ে ও একটা বাতকর্মের শব্দ করে।
আমার পা দুটো ঠকঠক করে কাঁপতে শুরু করেছে। শেকড় থেকে গাছের পাতায় যেভাবে মাটির রস উঠে আসে, সেভাবে পায়ের পাতা থেকে লক্ষ লক্ষ কোষের সঙ্কোচন ও প্রসারণ পদ্ধতিতে আমার মাথায় রাগ উঠে আসছে। দশতলা থেকে লাফাবার আগে আত্মহত্যাকামী যেভাবে না-না, আমি লাফাবনা ভাবতে ভাবতে তবু লাফায়, সেভাবে ওর গালে একটা সপাটে চড় মারব বলে… চেঁচামেচি শুনে লেদু ওর ঘর থেকে বেরিয়ে এসেছে। ওর খুনি চোখমুখ দেখে
নন্দিন এই সময় বলে ওঠে, বাবা, তুমি চলে এসো।
শাট আপ, ইউ বিচ!–অঞ্জন।
মাথার মধ্যে এক মুহূর্তের লোডশেডিং। আলো জ্বলে উঠলে দেখলাম, আমার শক্তিসর্বস্ব দিয়ে ওর গালে আমি একটা থাপ্পড় মেরেছি।
টাচ মি ওয়ন্স এগেন, অ্যান্ড ইউ ডাই।
নন্দিন চিৎকার করে ছুটে এল আমাদের মাঝখানে। কিন্তু ততক্ষণে ওর গালে আর-একটা থাপ্পড় আমার মারা হয়ে গেছে।
সর তুই, ভাগ! ওকে ঠেলে মাটিতে ফেলে দিয়ে শুয়োরের বাচ্চাকে আমি আজ দেখে নেব বলতে বলতে চুলের মুঠি ধরে আমি ওকে কাছে টেনে আনি। মেঝে থেকে রঞ্জনের চটি খুলে আমি ওকে পেটাতে থাকি। বাঞ্চেৎ ছেলে! মারা আমি থামাতে পারি না, বাপ-মাকে পুড়িয়ে এসে শালা তুমি পার্টিতে যাও? আমি অনেক সহ্য করেছি—আজ তোর বাঁদরামি আমি ঘোচাব…
মারতে মারতে আমি ওকে মাঠে নিয়ে যাই। মারা আমি থামাতে পারি না। যত মারি, মারার প্রবণতা তত বেড়ে যায়।
১৬ মে।
ঘণ্টাখানেকের মধ্যে জেফ-এর ফোন।
অঞ্জন কোথায়?
বাড়ি নেই।
তুমি করেছ কী। ক্যালিফোর্নিয়ার আইনে মাইনরকে মারা গুরুতর অপরাধ। এখানে মাইনরকে বাড়িতে একা রেখে গেলে শাস্তি হয়। এভরি মাইনর হিয়ার, হু ইজ অ্যান আমেরিকান সিটিজেন, তার টু গার্ডিয়ান হল ইউনাইটেড স্টেটস অফ আমেরিকা। সরি টু সে, তোমাকে কিছুদিন মার্সে কাউন্টি জেলে থেকে যেতে হতে পারে।
এ আমি কী করলাম। রঞ্জনের বন্ধুরা সকলেই মার্সেদ ছেড়ে চলে গেছে এক চুনী ছাড়া। ছন্দাঅমিয়ও নেই। এখন কেউ আমাকে রক্ষা করতে পারে না।
মাথার চুল দুহাতে টেনে ধরে আমি মেঝের ওপর বসে পড়ি। কাল সোমবার ১৭ মে সকাল ১০টায় আমাদের কোর্টে গিয়ে পিটিশন দেওয়ার কথা। লিভিং রুমে উকিল এসে কাগজপত্র ঠিকঠাক করছে।
সকাল ১০টায় পুলিস আমাকে কোর্টে হাজির করল।
রবিবার সারাদিন অঞ্জন বাড়িতে এল না। শুনলাম হ্যারিদের বাড়িতে আছে। সে ফোনে আমাকে যাচ্ছেতাই গালাগালি করল। পুলিস আমাকে ঠিক অ্যারেস্ট করল না। তবে প্রচুর থমকে গেল। সোমবার সকাল ১০টায় জাজের সঙ্গে মার্সের্স কোর্টে দেখা করতে বলে গেল।
জাজ ওয়াল্টার গার্ডনার রঞ্জনের টেনিস কোর্টের বন্ধু। আদালত কক্ষে নয়, তিনি আমার সঙ্গে দেখা করলেন তাঁর চেম্বারে। আমার সঙ্গে গেল জেফ, আমার উকিল জন ব্রিড আর চুনী। লেদু ভয়ে গা-ঢাকা দিয়েছে।
একজন বিচারপতি যে এত সুপুরুষ, সজ্জন, মৃদুভাষী আর স্বর্ণকেশ হতে পারেন, এটা ছিল কল্পনাতীত। দেখতেও রোগা ছিপছিপে প্রেমিক-পুরুষের মতন। একটা ডাভ-গ্রে থ্রি-পিস স্যুট পরে উনি কফি খাচ্ছিলেন। আমাদের জন্যে কফি আনতে বললেন। কেউ আমাকে বলেনি, উনি কিছু বলার আগেই আমি মাথা নিচু করে নিজের থেকে ক্ষমা চাই। বিচারপতি স্মিতচক্ষে হেসে বললেন, আই অ্যাপ্রিসিয়েট ইওর কনসার্ন ফর ইওর নেফিউ। এত দুরে এভাবে, আত্মীয়স্বজনের মধ্যে তো শুধু তুমিই এসেছ। অ্যান্ড আই নো হোয়াই। তোমার মনের অবস্থা আমি বুঝতে পারছি তবে আমার মনে হয় গার্জেন ঠিক করে দিয়ে তুমি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব দেশে ফিরে যাও। ফিউনারাল এক্সপেন্স থেকে তোমাদের তিনজনের টিকিট কেটে দেওয়ার নির্দেশ আমি দিচ্ছি। কোনও শাস্তি আমি তোমাকে দিচ্ছি না। তুমি কোনও দোষ করোনি।
বেলা বারোটার মধ্যে গার্জেন-অ্যাডমিনিস্ট্রেটর হিসেবে চুনী শপথ নিল। সে কিছুদিন এখানে থাকবে। দেনা-পাওনা মিটিয়ে সে অঞ্জনকে এখন তার কাছে নিয়ে গিয়ে রাখবে। ওর মতে, সবার আগে দরকার অঞ্জনকে একজন ভাল সাইকিয়াট্রিস্ট দেখানো, ও আমাকে বলল।
১৭. দূরবীনের উল্টোদিক
এই দেখুন, সানফ্রান্সিসকো!
সানফ্রান্সিসকোর ডাক নাম ফ্রিসকো। মার্সেদ থেকে পাক্কা ১২০ মাইল। গতকাল সন্ধে সাড়ে ৮টা নাগাদ গ্রে-লাইন বাসে আমি, লেদু তার নন্দিন ফ্রিসকো এসে পৌঁছেছি। টার্মিনালে ছন্দাদের বন্ধু মহীতোষ সান্যাল দাঁড়িয়েছিল। হাতে চ্যাটার্জি লেখা পোস্টার।