অ্যাঁ-হ্যাঁ। পিয়েত কী যেন ইঞ্জিনিয়ার বোধহয়। এ নিয়ে আরও কৌতূহল চাপা দিতে আমি মার্কার পেন দিয়ে শোল্ডার শব্দটার ওপর হলুদ বুলাতে বুলাতে তাড়াতাড়ি প্রশ্ন করলাম, আচ্ছা, শোল্ডার ব্যাপারটা কী?…
ইউ নো, অমিয় এতক্ষণে নড়ে-চড়ে চেয়ার টানল, দেঁয়ার আর সিক্স লেনস্ অন দ্য ফ্রিওঁয়ে। দিঁস হাইওয়ে অঁর ফ্রি-ওঁয়ে অ্যাজ উই প্রেফার টু কঁল ইট, রানস দ্য এনটাঁয়ার ইউনাইটেঁড স্টেটস, ইভন্ থ্রু দ্যঁ ডেঁজার্টস অফ আঁরিজোনা, গ্রু দ্য গ্রাঁন্ড ক্যানিয়ন। দিঁস ইজ দ্যঁ প্রিন্সিপাল আঁর্টারি দ্যাঁট কিপস ম্যারিকান ব্লাড অন দ্যঁ মুভ। আপ অ্যান্ড ডাউন-ও-কেঁ? লাইক দিঁস—সে প্যাডে ছবি আঁকতে শুরু করে, শোল্ডার হল এই ফ্রি-ওঁয়েতে গাড়ি পার্ক করার জায়গা। মাঝে মাঝে, একশো-দেড়শো মাইল অন্তর ওগুলো থাকে। এদিকে তিনটে রাস্তা, ওদিকে তিনটে রাস্তা মাঝখানে শোল্ডার। দুহাতের তালু জড়ো করে, ডাইনে ও বাঁয়ে দুদিকে দুলিয়ে, তারপর জোড়া তালু টেবিলের ওপর সশব্দে ঠকে সে ব্যাপারটা বিশদ করে।
রাত দশটায় ওরা গাড়ি পার্ক করল? যখন বাড়ি থেকে মাত্র ৩০ মাইল দূরে?
অ্যাঁট লিঁস্ট, দ্যাঁট ইঁজ দ্যঁ স্টোরি দ্যাঁট সান-অফ-আ বিচ জন পার্ল ওয়ান্ট টু সেঁএল…
আনুনাসিকতা-সহ দিব্যি একটা ক্যালিফোর্নিয়ান অ্যাকসেন্ট রপ্ত করেছে অমিয়, আমি লক্ষ্য করলাম, অথচ, বাংলা বলার সময় সেটা একদম আসে না ভাগ্যিস। তাহলে, নিঃসন্দেহে, ভূত মনে হত।
রি-রি-রি-রি-রি-রি। ফোন। নন্দিন?
এখানে রিসিভার লম্বালম্বি ভাবে হুকে ঝোলে। কিড়িং-কিড়িং শব্দে বেয়ারা ডাকা নয়। এর স্বর সবল ঝিঝি পোকার। প্রেস-বাটন ডায়াল। রিসিভারের সঙ্গে থাকে ৩০/৪০ গজ তার। রিসিভার নিয়ে ছন্দা লিভিং রুমে চলে গেল। ফিরে এসে বলল, না আপনার ফোন।
হিরণদা, আমি ফ্রিমন্ট থেকে বলছি।
আপনি?
আমি রঞ্জনদার ছোট ভাইয়ের মতো। আমাকে তুমি বলুন। আমার নাম ধূর্জটি পালিত। সাহেবরা সংক্ষেপে বলে ধুজ (হাসি)। স্বর পাল্টে, যাক। দেখুন, যা হওয়ার তা তো হয়ে গেছে। হ্যালো…
আমি শুনতে পাচ্ছি। আপনি বলুন।
দেখুন দাদা। কথা বলার মতো অবস্থা আপনার নয়। আমি জানি। এমন মর্মান্তিক ট্র্যাজেডি… এ তো আমরা কখনও শুনিনি। আই ওয়াজ দ্য লাস্ট ম্যান টু সি দেম অফ। ফ্রম এল-এ। কেন যে, ডি-ট্যুর করে ওরা ফ্রিকো গেল। কী জন্যে? ইটস্ রিয়েলি আ মিষ্ট্রি টু মি। যাক, আপনি এসে গেছেন। জানতাম, কেউ এলে আপনিই আসবেন। আপনিই তো নদা?
হ্যাঁ, আমিই ন’দা।
আপনার কথা সবসময় বলত। হি ওয়জ সো ভেরি প্রাউড অফ ইউ। বাট…মাই ব্রাদার ইজ আ গিফটেড রাইটার। একটু ড্রিঙ্ক করলেই শুরু করত। আমরা হাসাহাসি করতাম। এই রে, আবার নদা শুরু হল।
আর কারও কথা বলত না?
না! আর আপনাদের বাবার কথা।
তাই নাকি? জানতাম না তো।
ও ইয়েস। দ্যাটস ফর শিওর। তারপর যেন গোপন খবর, যেন কাছে ডেকে, ধূর্জটি কানে কানে বলল, হি ইউজড নট টু হোল্ড আ ভেরি হাই ওপিনিয়ন অ্যাবাউট দ্য রেস্ট অফ ইওর ফ্যামিলি, ইউ ননা।
আমি তা জানি। কিন্তু, ফ্ল্যাটার্ড হওয়ার বদলে, এখানে কারও মুখে সে-কথা শুনে খুবই কুৎসিত লাগল। ভীষণ খারাপ লাগল লোকটাকে। রিসিভারের ওপর আমার মুঠো শক্ত হয়ে চেপে বসে যাচ্ছে।
দেখুন, কী বলব, সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা আমার জানা নেই। তবে একটা কথা বলি। স্বর নামিয়ে, ওই যে ভদ্রলোক আর ভদ্রমহিলা পরিত্রাতার ভূমিকায় প্রথম দিন থেকে নিজেদের কাজকর্ম ছেড়ে ওখানে গেড়ে বসেছেন, ইউ মাস্ট হ্যাভ ওয়ান্ডার্ড— হোয়াই?
কী দিক দেখে বলুন তো?
শুনতে পাচ্ছে নাকি? দেখলাম, অমিয় আর ছন্দা জ্বলন্ত চোখে আমার দিকে তাকিয়ে। বোধহয় ভুল করলাম। টেলিফোন নিয়ে আমি চলে গেলাম পাশের ঘরে।
এই… টাকাকড়ি, গয়নাগাটি, দরকারি কাগজপত্র সবই তো ছড়িয়ে। ধূর্জটি বলে চলেছে, আই হ্যাভ ইনফর্মেশনস যে ওরা অঞ্জনকে নিয়ে ব্যাঙ্কে ভল্ট দেখতে গিয়েছিল। ছেলে মাইনর, হাউ কুড দে মেকআ প্রিপসটারাস মুভ লাইক দ্যাট! আপনি আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করা উচিত ছিল। হাউয়েভার, কিপ অল দ্য রুম আন্ডার লক অ্যান্ড কি। নো বড়ি শুড হ্যাভ এনি অ্যাকসেস টু দ্য কম্পিউটার রুম ইন পার্টিকুলার। ওখানেই সব আছে আমি জানি। উইল আছে। রঞ্জনদা ইউজড টু ট্রাস্ট মি আ লট। ফিউনারাল কবে করছেন?
ফিউনারাল?
হা। আপনার জন্যেই তো সাসপেন্ডেড হয়ে আছে। কিচেনে ফিরে গিয়ে আমি মাউথ পিসে হাত চাপা না দিয়েই জানতে চাই, ফিউনারাল কবে ছন্দা?
আঁই নিড, অ্যাঁট লিস্ট টু-টু-থ্রি ডেঁজ টাইম অমিয় গর্জন করে উঠল, সেঁফ ডিসট্যান্সে বসে খালি ফোন আর কৈফিয়ত। আঁস্ক হিম, হোয়ার ইজন্ট হি হিয়ার— দিস ইজ দ্য ফোর্থ ডে–নট আ সিঙ্গল সোল ইজ অ্যারাউন্ড আজ ইয়েট। হাঃ!
আস্তে, আস্তে ছন্দা বলল।
হোঁয়াট ফর? হোঁয়ায় দা হেল!
ধূর্জটি বলল, আচ্ছা দাদা, আমি আবার ফোন করব। জেনে নেব। মিন হোয়াইল কিপ আ ভিজিল অন মিঃ উইচ অ্যান্ড মিসেস উইচেস। বায়।
খুব সহজভাবে হেসে অথচ আমার চোখের তারায় তার চোখের তারা আটকে ছন্দা যেন কিছু নয়, এমনভাবে জানতে চাইল, কী বলছিল ধুজ?
ফিউনারাল কবে জানতে চাইছিল।
ছন্দা-অমিয় মুখ চাওয়াচাওয়ি করল। আমাকে বোঝবার চেষ্টা করছে। বুঝছে মনে হল, আমি তাদের মধ্যে পড়ি না, যাদের বলা হয় ওপেন-বুক।