কারেকশান হোম! মাত্র ছবছর!আমি আর্তনাদ করে উঠি, কী বলছেন আপনি? এদের ফাঁসি হবে না?
অপ্রত্যাশিত। তবু অপ্রত্যাশিত কিছু নয়। অন্তত আমার কাছে। ওঁর গল-অস্থির ওঠা-নামা দেখতে দেখতে এর আগে আমি তিনবার চেষ্টা করেছি। পারিনি।
হঠাৎ, সত্যবানের টেবিলের ওপর আমি জ্বলন্ত চিতার লাফে ঝাঁপিয়ে পড়ি। খোলা ড্রয়ারে ব্ৰহ্মকমলের পাশে রাখা রিভলভারটা তুলে নিতে চেষ্টা করি।
বজ্রমুঠিতে আমার হাত চেপে ধরে আছেন সত্যবান। আমি হাত খুলে নেবার চেষ্টা ছাড়ি না। ক্রমে বুঝতে পারি, আমার সর্বশক্তির চেয়ে উনি কিছু বেশি শক্তিমান। তাছাড়া, ধুতি শার্ট পরা অনেকগুলো লোক আমাদের ঘিরে ধরেছে।
সত্যবান হাত ছেড়ে দেবার পরেও আমি চিৎকার করতে থাকি, ছেড়ে দিন। আমাকে ছেড়ে দিন। দীপ্তির মতো ইনোসেন্টকে যারা খুন করল, যারা এ-ভাবে সর্বনাশ করল আমার, চৈতি মাতৃহারা হল, তাদের কারও ফাঁসি হবে না? মাত্র ছবছর? ভেউ ভেউ করে কাঁদতে কাঁদতে আমি টেবিলে মাথা ঠুকতে থাকি, গেট মি দ্য রিভলভার, প্লিজ। প্লিজ, ডু মি দিস ওয়ান অ্যাক্ট অফ ফেবার। আই শ্যাল শ্যুট দেম। শ্যুট ইচ ওয়ান অফ দেম। শ্যুট ওয়ান বাই ওয়ান।
টেবিলে মুণ্ডু রেখে কতক্ষণ কেঁদেছিলাম আমি জানি না। খেয়াল হল তখন, যখন পিঠে হাত রেখে নৃপেন আমাকে বলছে, যে গেছে, তাকে যেতে দাও -–। যারা আছে তারা থাকুক।
. অনেকক্ষণ পরে আমি আবার বৃষ্টির শব্দ শুনতে পেলাম। সেই ৯০ কিলোমিটার বেগে সাইক্লোন, আমার অজান্তে, কলকাতার ওপর দিয়ে কখন বহে গেছে। এখন হাওয়া নেই। এখন শুধু অনর্গল বৃষ্টি। আকাশের স্টপকল খুলে গেছে।
***
———–
উল্লেখ থাকে যে এই রচনায় অধ্যায়ক্রমে কাজী নজরুল ইসলাম, গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার, জীবনানন্দ দাশ, আলোক সরকার, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, উৎপলকুমার বসু, ভারতচন্দ্র রায়গুণাকর, শক্তি চট্টোপাধ্যায়, বিনয় মজুমদার, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, শক্তি চট্টোপাধ্যায়, শ্যামল গুপ্ত ও শেষ অধ্যায়ে শঙ্খ ঘোষের কাব্যপঙক্তি ব্যবহার করা হয়েছে।
উপন্যাস মানেই যা কল্পনাপ্রসূত। তবু যদি কোনও পাঠক এই কাহিনী ও/বা এর কোনও চরিত্রের মধ্যে নিজেকে খুঁজে পান, তা হবে, তার নিজস্ব বিনির্মাণ। কৃতিত্বও একান্তভাবে তারই। –লেখক