বাবাও একটা প্রবলেম বটে।
বহুত গভীর কঠিন প্রবলেম। বাপের জন্যই তোর লাইফটা বিলা হয়ে যাচ্ছে। শালা পাবলিকের কাছে ইমেজ খারাপ হয়ে যাবে, ভোটে টান পড়বে, তাই তোর বাপ তোর পিছনে হরকত লোক লাগিয়ে রেখেছে। তুই বাঁচতে চাস তো পালা। ফোট।
ধ্রুব দুহাতে কান ঢেকে বলে, ওঃ এমন চেঁচাচ্ছিস! মাথা ধরে যাচ্ছে!
চেঁচালুম? আচ্ছা, ক্ষমা।
ধ্রুব একটু বিরক্তির গলায় বলে, সিগারেটের ফুলকি আসছে। ঠিক করে ধর। জানালার কাচটা পুরো তুলে দে।
দিচ্ছি গুরু।
প্রবলেমের কথাটা শুনতে চাস? তোকে বলেই বলছি।
বল না।
কাউকে বলবি না। বাবা রিসেন্টলি এনিমি প্রপার্টির অনেক টাকা পেয়ে গেছে। কয়েক লাখ টাকা।
এনিমি প্রপার্টি? সেটা কী জিনিস?
ধুস শালা! ইস্টবেঙ্গলে আমাদের মেলা প্রপার্টি ছিল না?
ওঃ, সে প্রপার্টি!
সেই প্রপার্টি।
টাকা পেলে আর প্রবলেমের কী?
আছে। টাকাটা আমাদের তিন ভাইয়ের মধ্যে ভাগ হওয়ার কথা।
তোর ভাগে কত পড়বে?
ঠিকমতো ভাগ হলে অনেক। কিন্তু হচ্ছে না।
কেন?
বাবারা যে চার ভাই। দলিল বাবার কাছে ছিল বলে বাবা পেয়ে গেছে। কিন্তু টের পেয়ে আমার জ্যেঠতুতো ভাইরা অবজেকশন দিয়েছে।
গাড্ডা। কিন্তু তোর বাপ ঠিক বেরিয়ে আসবে। খচ্চর লোক।
ধ্রুব মাথা নাড়ে। বলে, পারছে না। বহুত গাড্ডা। এখনকার আইনের অনেক প্যাঁচ। বাপের প্রপার্টিতে মেয়েদেরও দাবি আছে। তাই পিসিরাও নেমে পড়েছে।
তোর বাপ তা হলে করছে কী?
বাবা খুব খেপে আছে। আমি ভেবেছিলাম এ টাকাটা হাতে পেলে কেটে পড়ব। একদম হাওয়া হয়ে যাব।
কোথায় যাবি?
যেখানেই যাই, তোর বাপের কী? —ধ্রুব ধমকে ওঠে।
প্রশান্ত খিলখিল করে হাসে, ন্যাকড়াবাজি শালা?
ধ্রুব সিগারেটে একটা টান মেরে বলে, আরে বাবা, এ সেই বাড়ি থেকে পালানো নয়, আমার বাবাও সিরিয়াসলি চাইছে, আমি কেটে পড়ি।
মাইরি?
চাইবেই। আফটার অল হি ইজ এ লিডার। আমি থাকলে বাবার কনস্ট্যান্ট হেডেক। আমাকে কাটিয়ে দেওয়ার জন্য বাবা একটা অ্যারেনজমেন্ট করেছিল। নাসিকে বাবার এক বন্ধু আছে। তার সঙ্গে আমাকে ভেড়াতে চাইছে বাবা। আমি বাবাকে বলেছি, রাজি আছি তবে লাখ দুই টাকা ছাড়ুন।
দু লাখ! সে তো অনেক টাকা!–প্রশান্ত চোখ বড় করে।
দুর শালা! ঘরের টাকা নাকি? বাবা তো এনিমি প্রপার্টির টাকাটা ফালতু পেয়ে গেছে। সেটা থেকেই দেওয়ার কথা ছিল। ঘরের টাকা হলে বাবা রাজি হত নাকি?
সে কেসটা তো বিলা হয়ে গেছে বলছিস!
হ্যাঁ। দারুণ কিচান হচ্ছে। মামলা-টামলাও হতে পারে। তবে বাবাকে সবাই ভয় খায় বলে এখনও তেমন কিছু করছে না।
তোর বাবা পুরো টাকাটা ঠিক হজম করে দেবে। লিডাররা সব পারে।
যা বুঝিস না, জানিস না, তা নিয়ে কথা বলিস কেন?
এ আর না বোঝার কী আছে গুরু?
আছে। সম্পত্তিটা আসলে বাবারই ছিল। শেষ বয়সে দাদু বাবার নামে সব লিখে দিয়ে যায়। উইলের প্রবেটও আছে। কিন্তু উইল কেউ মানছে না বলে ঝামেলা। বাবা সকলের সঙ্গে নেগোশিয়েসন চালাচ্ছে, আত্মীয়দের বলছে, কিছু ছাড়ছি, তোমরা মেলা ঝামেলা কোরো না।
তোর বাপকে সব দিয়ে গেল কেন?
বাবা ছিল যাকে বলে ড্যাডিজ ব্লু আইড বয়। সে অনেক কথা। আমাদের ফ্যামিলি অ্যাফেয়ার তোর অত জানার কী দরকার?
প্রশান্ত একটা হাই তুলে বলে, কে জানতে চাইছে গুরু? তখন থেকে তুইই তো ফ্যাচ ফ্যাচ বকে যাচ্ছিস। আমার মাথা ধরে গেছে। পাকিস্তানে তোদের ক পহার সম্পত্তি ছিল রে? তোর বাপ লিডারি করে তার চেয়ে ঢের বেশি কামিয়েছে। ওসব বাত ছোড়।
কামিয়েছে তা কী? আমার বাবা সাফারও করেছে। হি ওয়াজ এ পোলিটিক্যাল সাফারার।
প্রশান্ত আবার খিক খিক করে হেসে বলে, জানি বাবা জানি। ব্রিটিশ আমলে তিন দিন যে জেল খেটেছে তারও এখন রবরবা। তামার তকমা পাচ্ছে, মাসে মাসে পেনসন। বিজঘুট্টি কারবার। ওয়াঃ ওয়াঃ।
মুড়ি মিছরির কি এক দর রে শালা? আমার বাবার নাম স্বাধীনতার ইতিহাসেও লেখা আছে। পড়ে দেখিস। বাপ তুলে কথা বলিস শালা? আমার বাপ যখন জেল খাটছে তখন তোর বাপ কী করত জানিস? ধুতির মধ্যে শার্ট খুঁজে পরে হাফ সাহেব সেজে সাহেবদের তেল দিত। ইয়েস স্যার, নো স্যার, ভেরি গুড স্যার।
প্রশান্ত একটু মাথা চুলকে বলে, তা হতে পারে। তবে আমাদের ফ্যামিলিতে অত ঝুট ঝামেলা নেই। ফালতু কেউ চুলকে ঘা করতে যেত না।
চামচা ফ্যামিলি।
ঠিক কথা। কিন্তু স্ট্রেট ফ্যামিলি। চামচা তো সবাই চামচা। তোর ফ্যামিলিটা জগাখিচুড়ি, একটা চামচা, একটা বিপ্লবী, একটা কেপ্লন তো আর-একটা হাড় বজ্জাত।
সবচেয়ে বজ্জাত কোনটা জানিস?
কোনটা?
লালটুদা।
আরে বাবা! যে লোকটা ইস্টবেঙ্গলে খেলত সে-ই না?
সে-ই। এখন ব্যাংকের অফিসার। সাপের পাঁচ পা দেখেছে।
বহোত খানেপিনেওলা লোক মাইরি।
খায়। আবার খাওয়ায়ও। ওসব ঠিক আছে। কিন্তু বাবার সঙ্গে যে সবচেয়ে বেশি লড়ে যাচ্ছে সে হল লালটুদা।
প্রশান্ত হঠাৎ একটু ঝুঁকে রাস্তাটা দেখে নিয়ে ড্রাইভারকে বলে, আরে ব্যস, ব্যস। আমার গাড়ায় এসে গেছে।
ট্যাকসি থামে। প্রশান্ত নেমে যায়। জানালা দিয়ে উঁকি মেরে বলে, গুড নাইট গুরু! ফির মিলেঙ্গে।
চোখ বুজে মাছি তাড়ানোর মতো একবার হাত নাড়ে ধ্রুব। কোথায় যেতে হবে ড্রাইভার জানে। সুতরাং সে আর বাকি রাস্তাটা মুখ খোলে না।
ধ্রুব যখন তাদের কালীঘাটের বাড়ির সামনে এসে ট্যাকসি থেকে নামে তখনও তিনতলার একটা ঘরে আলো জ্বলছে। অনেক রাত পর্যন্ত সেই ঘরে আলো জ্বলে।