তোমার সারাজীবন ধরিয়া পিতারূপ যে পাষাণভার চাপিয়া বসিয়াছিল আজ সেই ভার অপসৃত হইল। তোমাকে সুখী করিবার জন্য, তোমাকে স্বাধীনতা দেওয়ার জন্য, তোমাকে স্বাভাবিক জীবনযাত্রার পথে ফিরাইয়া আনিবার জন্য আজ স্বেচ্ছায় বিদায় লইতেছি। পোস্টমর্টেমের নামে আমার দেহটি লইয়া কিছু টানাহ্যাঁচড়া হওয়ার সম্ভাবনা। ডাক্তার বিকাশ জৈনের সঙ্গে দেখা করিয়ো। তিনি আমার সব জানেন। বিনা কাটাছেড়ায় আমার দেহটি তিনি হস্তান্তর করিতে সাহায্য করিবেন। কোনওক্রমেই এই মৃতদেহ কলিকাতায় নিয়ো না। দিল্লি ভারতবর্ষের রাজধানী, সেখানেই আমার শেষকৃত্য সম্পন্ন করিয়ো। আমার মৃতদেহ কলিকাতায় লইয়া গেলে বউমা বড় অস্থির হইবেন। সেটা অভিপ্রেত নহে।
আর-একটা কথা। দিব্য চিরকাল শিশু থাকিবেনা। বড় হইবে, ব্যক্তিত্ববান হইবে। তাহার প্রতি তুমি এমন আচরণই করিয়ো যাহাতে পিতাপুত্রে সহজ সম্পর্ক স্থাপিত হয়। তোমার ও আমার মতো দুস্তর দুরধিগম্য দূরত্বে দুজনকে বাস করিতে না হয়। আমি যাহা পারি নাই তুমি তাহা পারিয়ো।
আজ আমি সুখী ও তৃপ্ত। আমার কোনও ক্ষোভ নাই। আজ তোমাকে মুক্তি দিলাম, নিজেও মুক্তি লইলাম। আজ অনাবিল হৃদয়ে তোমাকে আশীর্বাদ করি, সুখী হও, সকলকে সুখী করিয়া তোলো। বউমা ও দিব্যকে আমার প্রাণভরা আশীর্বাদ করিলাম। মঙ্গলময়, তোমার ইচ্ছাই পূর্ণ হউক। ইতি,
শ্রীকৃষ্ণকান্ত চৌধুরী
ধ্রুব নিথর হয়ে বসে রইল কিছুক্ষণ। কান্না এল না, তেমন কষ্ট হল না। শুধু বুকের ভিতরটা মথিত হয়ে একটা ডাক উঠে আসতে চাইছিল— বাবা!