আপনি কি বিজিতের কথা বলছেন?
অনুমান মাত্র। সত্যি কি না কে বলবে?
আমার অবশ্য অনুমান হল নম্রতা একদিন জানতে পারে যে তার স্বামী বিজিত কোনও বিশেষ একজনের প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে। আমার সন্দেহ যার প্রেমে সে পড়েছিল সেই নম্রতাকে জানিয়ে দেয়। না জানালে বিজিত তার জীবন বিষময় করে দিত। ক্রমশ বিজিত নানা লোভনীয় কন্ট্রাক্ট তাকে দিয়ে ফেলছিল। ওই জাল কেটেনা বেরোতে পারলে মেয়েটির রক্ষে ছিল না। আর আপনি জানেন নম্রতা কেমন মেয়ে। পজেটিভ, রাগী, খেয়ালি, জেলাস এবং ক্রুয়েল। বিজিত তার একার জিনিস। বিজিতের সামান্য বেচাল সে সহ্য করতে পারে না।
দৃপ্ত মুখে গার্গী বলে ওঠে, মিস্টার দাশগুপ্ত, আপনি কি এসব নোংরা ঘটনায় আমাকে জড়াতে চাইছেন?
শবর দাশগুপ্ত একদৃষ্টে কিছুক্ষণ গার্গী মিত্রের দিকে চেয়ে রইল। গার্গীর চোখ ধীরে ধীরে নেমে গেল কোলের ওপর।
শবর মৃদু হেসে বলে, আপনাকে দেবীপ্রতিমার মতো দেখাচ্ছে। না, আপনার দুশ্চিন্তা করার মতো কিছু নেই। শুধু বলি, আমার কল্পনাশক্তি একটা ঘটনাকে প্রত্যক্ষ করছে। সুইমিং পুলের ধারে হতচেতন মাতাল বিজিত বসে আছে। অনেক রাত। অন্ধকারে দ্রুত পায়ে একটি ছিপছিপে মেয়ে তার কাছে এল। মেয়েটি নম্রতা। সম্ভবত মদের সঙ্গে ঘুমের ওষুধও দেওয়া হয়েছিল বিজিতকে। নম্রতা তাকে সুইমিংপুলে চেয়ারসুদ্ধ ফেলে দেয়। তারপরে জলে নেমে মায়াভরে বিজিতের মাথাটা জলের নীচে চেপে ধরে রাখে কিছুক্ষণ। তারপর ঘরে ফিরে যায়। ইট ওয়াজ অ্যাজ ইজি অ্যাজ দ্যাট।
তা হলে আপনার তো নম্রতার কাছেই যাওয়া উচিত। তাকেই তো অ্যারেস্ট করার কথা আপনার।
হাত তুলে শবর বলে, ধীরে, মিস মিত্র, ধীরে। এখনও বিজিতের অটোপসি রিপোর্ট আমার হাতে আসেনি। কোনও সাক্ষী নেই, প্রমাণ নেই। তার ওপর বিমলাপ্রসাদের মেয়ের টাকা আর কানেকশানের জোর এত বেশি যে, সামান্য পুলিশের পক্ষে তাকে ফাঁসানো প্রায় অসম্ভব। সম্ভবত তাকে ধরলেও বেনিফিট অব ডাউট-এ মুক্তি পেয়ে যাবে। কারণ, বিজিতের মৃত্যুটা খুন না অ্যাকসিডেন্ট সেটাই তো বিরাট প্রশ্ন। সুইমিং পুল তার প্রিয় জায়গা ছিল, সে মাতাল ছিল, অ্যাকসিডেন্ট তো হতেই পারে।
কেন যে আমার কাছে এলেন।
শুধু এই কথাটা জানাতে যে এইসব ঘটনার কোথাও আপনি নেই। আপনি সম্পূর্ণ নিষ্কলঙ্ক। দেবীপ্রতিমার মতোই দেখাচ্ছে আপনাকে।
কেন একথা বলছেন? আমার যে কেমন লাগছে।
কেমন লাগছে মিস মিত্র? খারাপ। কিন্তু এসব ঘটনার একটা ভাল দিকও তো আছে। বিউটি কনটেস্টের তিনজন অসাধু বিচারকের একজন অন্তত চরম শাস্তি পেয়েছে। অন্যায়ভাবে যে আপনাকে হারিয়ে বিউটি কুইন হয়েছিল সে নিজের হাতে তার প্রিয়তম পুরুষটিকে খুন করে উন্মাদের মতো দেওয়ালে মাথা ঠুকে প্রলাপ বকছে। এ তো প্রকৃতিরই প্রতিশোধে–তাই না? আপনি যদি সেই প্রক্রিয়াটাকে একটুখানি সাহায্য করেই থাকেন তা হলেও ইন্ডিয়ান পেনাল কোড আপনাকে ছুঁতেও পারবে না। অভিনন্দন মিস মিত্র, অভিনন্দন।
গার্গী মিত্র হঠাৎ দু’হাতে তার মুখ চাপা দিল।
আমি চলি মিস মিত্র। আপনি বরং একটু কাঁদুন। কাঁদলে মন হালকা হয়ে যায়।