শুধু আপনিই খুঁজেছেন?
হ্যাঁ। এই হামলাটা একজন বিশেষ কেউ করেছিল। যার সঙ্গে সেই পেশেন্টের সম্পর্ক ছিল না।
সে কে?
সেটা বলা আন্দাজে ঢিল ছোঁড়ার মতো হয়ে যাবে। তবে এমন কেউ যে পাওয়ারফুল, স্ট্রং মোটিভ আছে এবং বেপরোয়া। এসব ঘটনা যখন ঘটে তখন আমি পিকচারে ছিলাম। কোনও তদন্তের ভারও আমাকে দেওয়া হয়নি এবং এসব ঘটনা যে ঘটছে তাও আমার জানার কথা নয়। আমি এই এত সব ঘটনা জেনেছি মাত্র সাত দিন আগে। যখন আমাকে ডাক্তার সঞ্জিত চৌধুরীর বাই দি বাই, আপনি কি জানেন যে সঞ্জিত চৌধুরী মারা গেছেন?
অবাক গার্গী তার বিস্ফারিত চোখে চেয়ে বলল, মারা গেছেন! কই, জানি তো!
চিন্তিত শবর তার মুখের দিকে চেয়ে বলে, জানেন না!
না।
ও, আপনি তো আবার খবরের কাগজ পড়েন না।
না, পড়ি না।
খবরটা অবশ্য তেমন গুরুত্ব দিয়ে ছাপাও হয়নি। সঞ্জিত চৌধুরী মারা যান একটি মোটর অ্যাক্সিডেন্টে।
ইস। দুঃখের খবর!
সব মৃত্যুই দুঃখের। আমি–শবর দাশগুপ্ত কোনও মৃত্যুই পছন্দ করি না।
কেউই করি না শবরবাবু। কিন্তু তবু মৃত্যু তো আছেই তাই না?
হ্যাঁ মিস মিত্র, মৃত্যু আছেই আমাদের পেছনে। কত সুন্দর মুখ, কত সুন্দর শরীর, কত প্রতিভা, কত মেধা, কত অতৃপ্ত বাসনা, কত লোভ, কত আসক্তি মৃত্যুতে শেষ হয়ে যায়।
হ্যাঁ। ব্যাপারটা ট্র্যাজিক, কিন্তু আমাদের তো কিছু করার নেই।
শবর মাথা নেড়ে বলে, সঞ্জিত চৌধুরীর মৃত্যু না হলে এত ঘটনা আমার জানা হত না, আপনার সঙ্গেও পরিচয় হত না। মোটর দুর্ঘটনায় মৃত্যু হলেও তার মধ্যে কিছু অসংগতি থাকায় তদন্তে আমার তলব পড়ে। দুর্ঘটনা ঘটেছিল বেশি রাতে বোধহয় বারোটা বা তারও পরে। ওঁদের নার্সিংহোমে একজন ভি আই পির স্ত্রী ভরতি ছিলেন। রাত বারোটায় হঠাৎ ফোন আসে যে রোগীর অবস্থা খারাপ, ডাক্তার চৌধুরীকে এক্ষুনি যেতে হবে। চৌধুরী তাড়াতাড়ি তার গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়েন। নিউ আলিপুরের নির্জন রাস্তায় একটা লোহা বোঝাই ট্রাক তার গাড়িকে প্রায় পিষে দেয়। ইনসিডেন্টালি গাড়িটা পরীক্ষা করে দেখা গেছে তাতে ব্রেক অয়েল ছিল না। অর্থাৎ বিপদের সময় চৌধুরীর গাড়ির ব্রেকও কাজ করেনি। লরিটা তাকে মেরে পালিয়ে যায়।
ইস রে।
ঘটনাটা এমনিতে উপেক্ষা করা যেত। কিন্তু তদন্তে নেমে দেখেছি নার্সিংহোম থেকে কোনও ফোন করা হয়নি এবং রুগির অবস্থা সেই রাতে ভালই ছিল।
ও মা! তা হলে?
শবর একটু হাসল, আপনি বুদ্ধিমতী, বুঝে নিন।
ইজ ইট মার্ডার এগেন?
খুব ছক কষে হিসেব করে চৌধুরীকে মারা হয়েছিল।
কে মারল তাকে?
আপনি কিছু অনুমান করতে পারেন?
না তো! আমি কী করে অনুমান করব?
মাপ করবেন। ভুল প্রশ্ন করেছি বোধহয়। আচ্ছা আপনার কি কোনও মোবাইল ফোন আছে?
না তো!
চৌধুরীর ছিল, বিজিতের ছিল, নম্রতার আছে।
কেন জিজ্ঞেস করছেন?
ডাক্তার চৌধুরীর মোবাইল ফোনের রেকর্ড চেক করে দেখা যাচ্ছে উনি একটা নম্বর খুব ফেবার করতেন। সেই নম্বরটা আপনার।
হ্যাঁ। বলেছি তো, উনি মাঝে মাঝেই আমাকে ফোন করতেন।
কী বলতেন তিনি আপনাকে?
খুব ইম্পর্ট্যান্ট কথা কিছু নয়। গল্প করতেন।
কখনও কখনও রাত বারোটাতেও?
আমার অত খেয়াল নেই।
একটু ভেবে বলুন।
বোধহয় এক-আধবার বেশি রাতেও করেছেন।
অত রাতে ফোন করার কি বিশেষ কারণ ছিল?
একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে গার্গী বলল, উনি পাগলামি করতেন।
কীরকম পাগলামি?
বিয়ে করার কথা বলতেন। অনেক কিছু প্রমিজ করতেন। লোভ দেখাতেন বিদেশে নিয়ে যাওয়ার।
আপনি কি তাকে প্রশ্রয় দিতেন?
প্রশ্নই ওঠে না। আমাকে তো ওরকম প্রস্তাব কতজন কতভাবেই দিয়েছে। প্রশ্রয় দেওয়ার কথা উঠছে কেন পুলিশসাহেব?
কারণ, কোনও কোনও ফোন কলের ডিউরেশন আধঘণ্টা বা তারও বেশি ছিল।
বললাম তো উনি অনেক কথা বলে যেতে। আমি তার কিছুটা শুনতাম, কিছুটা শুনতাম। তবে অভদ্রতা করে ফোনটা নামিয়েও রাখতে পারতাম না।
ঠিক আছে মিস মিত্র।
কোনও দোষ হয়নি তো।
আরে না, না। দোষের কী আছে। আমি শুধু জেনে নিচ্ছি।
আর কী জানতে চান?
বেশি কিছু নয়। আপনি কি জানেন যে, গত পরশু রাতে নষতার বাড়ির সুইমিং পুলে ডুবে বিজিত রায়চৌধুরী মারা গেছে?
ও মা! সত্যি বলছেন?
মিস মিত্র, গুজব ছড়ানো আমার কাজ নয়।
সুইমিং পুলে?
হ্যাঁ। ঘোর মাতাল অবস্থায়। সাক্ষ্য প্রমাণাদি বলে, নম্রতা আর বিজিত অনেক রাত অবধি সুইমিং পুলের ধারে বসে ছিল। তাদের মধ্যে রোজকার মতোই ঝগড়াঝাটিও হয়। তারপর নম্রতা শুতে চলে যায়। ভোরবেলা বিজিতের মৃতদেহ সুইমিং পুলের মধ্যে পাওয়া যায়।
স্যাড।
হ্যাঁ, স্যাড। বিজিত আপনার সঙ্গে টেলিফোনে অনেক কথা বলত, তাই না?
হ্যাঁ, আমার মডেলিং-এর ব্যাপারে উনি হেল্প করতেন।
কেন?
হি হ্যাড এ ক্র্যাশ অন মি। পুরুষদের তো ওইটাই দোষ। আমি তো কিছু লুকোইনি শবরবাবু।
না। আপনি এ পর্যন্ত তেমন কিছু লুকোননি। লুকোবার দরকারও আপনার নেই। আপনি এই কুড়ি বছর বয়সেই পুরুষদের সম্পর্কে বেশ হতাশ হয়ে পড়েছেন দেখছি।
একটু হতাশা তো হতেই পারে, তাই না?
হ্যাঁ। তা তো ঠিকই। ডাক্তার চৌধুরী যদি তার স্ত্রীকে খুন করে থাকেন তবে তার পেছনে তার একটা বিশেষ উদ্দেশ্য ছিল, নার্সিংহোমে হামলা করে মারধর যে করেছিল তারও একটা বিশেষ উদ্দেশ্য ছিল। হয়তো ডাক্তার চৌধুরীকে ভয় দেখিয়ে নিরস্ত করার জন্য। ডাক্তার চৌধুরী নিরস্ত হননি। ফলে তাকে খুন করার প্রয়োজন দেখা দিল। যে খুনটা করেছিল তারও একটা উদ্দেশ্য ছিল। সে হয়তো বিশেষ একজনকে খুশি ও নিষ্কণ্টক করার জন্য; হয়তো তারই অনুরোধে চৌধুরীকে খুন করায়। দ্বিতীয় লোকটা পাওয়ারফুল, প্রচুর টাকার মালিক, পিছনে শাঁসালো শশুর।