কী বলেছিল বিজিত?
কী বলতে পারে বলে আপনার মনে হয়?
প্রেম ভালবাসার কথা তো!
পুরুষরা তো তাই বলে। অ্যান্ড হি ওয়াজ ম্যাড অ্যাবাউট দ্যাট। সে পরিষ্কার বলেছিল নম্রতাকে সে ভালবাসে না, সে আমাকে চায়।
আপনি কী করলেন?
করুণ হেসে গার্গী বলল, আমার ফের ন্যাড়া হয়ে যেতে ইচ্ছে হয়েছিল।
একজন বড় ডাক্তার আর একজন বড়লোকের জামাই। দু’জনেই পাওয়ারফুল এবং দু’জনেই মরিয়া। আপনার বেশ বিপদই গেছে, তাই না?
নিজের চেহারার জন্য তাই আজকাল আমার লজ্জা হয়।
কিন্তু দোষটা তো আপনার নয়, সৃষ্টিকর্তার, তাই না? ভাল কথা, আপনি কি মডেলিং এর কন্ট্রাক্টটা পেয়েছিলেন শেষ অবধি?
হ্যাঁ।
বিগ অফার?
হ্যাঁ, মোটামুটি ভাল অফার।
গত আট মাসে আমার হিসেব মতো আপনি অন্তত আটটা কোম্পানির হয়ে ভিডিও মডেলিং করেছেন। তা ছাড়া খবরের কাগজের বিজ্ঞাপন, প্রোডাক্ট লেবেল এবং পোস্টারিং তো আছেই। টিভি সিরিয়ালে আপনার মুখ খুব সম্প্রতি দেখা দিতে শুরু করেছে।
এসব তো আর গোপন খবর না। সবাই জানে।
ঠিক কথা মিস মিত্র। কিন্তু সবাই যা জানে তার আড়ালে গোপন খবরও কি কিছু তৈরি হয় না?
ঠিক বুঝতে পারলাম না।
আপনার হয়তো জানা থাকতেও পারে যে, সেই বিউটি কনটেস্টের তিন মাস পর ডাক্তার সঞ্জিত চৌধুরীর স্ত্রী অসুস্থ হয়ে পড়েন। হেপাটাইটিস ই। কীভাবে রোগটা হয়েছিল তা খুবই রহস্যময়। কেউ জানে না। আমিও না। কিন্তু অনেক অনুসন্ধান করে শুধু এটুকু জেনেছি যে, ক্রনিক সর্দি কাশির জন্য তিনি একটা বিদেশি অ্যান্টিজেন ইঞ্জেকশন নিচ্ছিলেন। হতে পারে সেটা থেকে ইনফেকশনটা আসে।
তো?
মাথা নেড়ে শবর বলল, ব্যাখ্যা দেওয়া আমার পক্ষে অসম্ভব। ইট ওয়াজ এ ভেরি ন্যাচারাল ডেথ।
গার্গী চুপ করে রইল।
কিছু ভাবছেন?
ভাবছি আমার কিছু ভাবা উচিত কি না।
আরে না মিস মিত্র, আপনাকে চিন্তায় ফেলার জন্য কথাটা বলিনি। আসলে ঘটনাগুলিকে একটা পরম্পরায় বা কার্যকারণসূত্রে বিন্যস্ত করা যায় কি না সেটাই দেখছিলাম। কিন্তু না, মিসেস চৌধুরীর আকস্মিক মৃত্যু কোনওভাবেই পচা ইঁদুরের গন্ধ ছড়াচ্ছে না।
তা হলে কথাটা উঠল কেন?
পুলিশের মন হল সন্দেহ পিশাচ। বিউটি কনটেস্টের ছয় মাসের মাথায় যে নার্সিংহোমে ডাক্তার চৌধুরী অ্যাটাচড ছিলেন সেখানে তার এক পেশেন্টের মৃত্যু হয় এবং রুগির বাড়ি আর পাড়ার লোক এসে এমন হামলা করে যে নার্সিংহোমে প্রচণ্ড ভাঙচুর হয়েছিল। ডাক্তার চৌধুরীও উন্ডেড হয়েছিলেন।
জানি। শুনেছিলাম। এটাও কি অস্বাভাবিক ঘটনা?
না। কলকাতায় এরকম প্রায়ই হয়।
তা হলে?
একটা শাস ফেলে শবর বলে, ব্যাপারটা বাইরে থেকে দেখলে একটা আবেগজনিত ঘটনা মাত্র। কিন্তু তদন্ত করতে নেমে দেখা গিয়েছিল হামলাকারীরা কেউই পেশেন্টের বাড়ির বা পাড়ার লোক ছিল না। তারা কারা তাও জানতে পারা যায়নি। তবে যেটুকু জানা গেছে তা হল, এরা ছিল পেশাদার বা ভাড়াটে গুন্ডা।
কেন যে আমাকে এসব শোনাচ্ছেন।
শবর একটু হেসে বলল, সঞ্জিত চৌধুরী একজন বড় ডাক্তার। কীভাবে তার স্ত্রীর হেপাটাইটিস ই হয়েছিল তা আমরা না জানলেও তিনি অবশ্যই জানবেন। আমরা শুধু জানতে চাই, কেন হয়েছিল? একটা বিশেষ সময়ে সঞ্জিত চৌধুরীর স্ত্রীর মরাটা কি প্রয়োজন হয়ে দাঁড়িয়েছিল?
আমি কিছু বুঝতে পারছি না যে!বুঝতে যে আমিও পারছি, তা নয়। শুধু এটুকু বলতে পারি যে, একজন ডাক্তারের পক্ষে কারও মৃত্যুর আয়োজন করা খুব শক্ত ব্যাপার নয়।
ও মা! আপনি কি বলতে চান ওটা খুন?
এখনও বলিনি। কারণ প্রমাণ নেই। তবে মোটিভ হয়তো আছে।
কী মোটিভ?
ডাক্তার চৌধুরীর সঙ্গে তার স্ত্রীর বিয়ে হয় প্রায় ছয় বছর আগে। তাদের একটি বছর তিনেকের মেয়েও আছে। মোটামুটি একটা সেট পরিবার। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে খুব একটা ঝগড়া বিবাদেরও ব্যাপার ছিল না। কিন্তু তাঁদের মধ্যে হঠাৎ একটা মিস আন্ডারস্ট্যান্ডিং শুরু হয়েছিল বলে বাড়ির দু’জন কাজের লোক আমাদের জানিয়েছে। ভদ্রমহিলা অসুস্থ হয়ে পড়বার আগে নাকি একদিন দু’জনের মধ্যে তুমুল ঝগড়া হয় এবং ভদ্রমহিলা নাকি বলেছিলেন, তুমি ডিভোর্স করতে চাও? তোমাকে আমি নাকে খত দিইয়ে ছাড়ব। ইত্যাদি ইত্যাদি। তারপরেই হঠাৎ অসুখ এবং মৃত্যু।
শুধু ঝগড়া থেকেই কি কেউ কাউকে খুন করে?
না ম্যাডাম। দেখতে হবে ঝগড়ার উৎসে কী আছে। সেইটেই আসল। পৃথিবীতে স্বামীরা যখনই স্ত্রীকে হত্যা করেন তখন বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় হত্যার পিছনে আর একটি স্ত্রীলোক রয়েছেন। তবে আগেই বলেছি আমাদের হাতে প্রমাণ নেই। আরও একটা কথা হল, ডাক্তার চৌধুরী একজন গায়নোকোলজিস্ট। মহিলাদের সঙ্গেই তাঁর নিত্য কাজ। সুতরাং মহিলাদের সম্পর্কে একটা ইমিউনিটি তৈরি হয়ে যাওয়াটা স্বাভাবিক ব্যাপার, যদি কোনও এক্সট্রা অর্ডিনারি মহিলার সঙ্গে ইনভলভমেন্ট ঘটে।
আমি আবার এক গলা জলে।
আমিও। ডাক্তার চৌধুরী তার স্ত্রীকে খুন করেছেন এমন সন্দেহ কেউ করেনি। প্রশ্নটাও ওঠেনি। কোনও মহিলার সঙ্গে তার সম্পর্কের কথাও কেউ জানে না।
তা হলে?
তা হলেও একটা কথা আছে। স্ত্রীর মৃত্যুর পর দেখা যায় ডাক্তার চৌধুরী রাত জেগে কাউকে অনেকক্ষণ ধরে লম্বা ফোন করতেন। একজন বিশেষ কাউকে। সে সময়ে তার মুখ চোখ অন্যরকম হয়ে যেত। কিছুদিন পরেই নার্সিংহোমে তার ওপর হামলা হয়। এর মধ্যেও কেউ কোনও কার্যকারণসূত্র খোঁজেনি।