আমি করি না। লোভী পুরুষদের অনেক অ্যাডভানসেস আমাকে সহ্য করতে হয়েছে। আমার অভিজ্ঞতা খুব ঘিনঘিনে। এমনকী আমার এক জেঠতুতো দাদা অবধি আমাকে বিয়ে করার জন্য পাগল। এসবের ফলে আমার সৌন্দর্য জিনিসটার ওপরেই আকর্ষণ চলে গেছে। এতটাই চলে গেছে যে, আমি একবার ন্যাড়া হওয়ার জন্য একটা সেলুনে গিয়ে হাজির হয়েছিলাম।
বলেন কী?
গার্গী হাসতে হাসতে বলে, তা হলেই বুঝুন। কিন্তু নাপিতটা আমার প্রস্তাব শুনে হাত গুটিয়ে বলল, আপনার মাথা চেঁছে দিলে আমার হাতে কুষ্ঠ হবে দিদি। কিছুতেই ন্যাড়া করতে রাজি হল না।
আমার হিসেব মতো আপনার বয়স মাত্র কুড়ি। এই বয়সেই এরকম যোগিনী হয়ে যাওয়ার কথা তো নয় আপনার। আপনি কি একটু পিউরিটান?
আমার বাবা খুব পিউরিটান। মা আবার ঠিক উলটো। আমি পিউরিটান না হলেও আমার আর ওসব ভাল লাগে না। আপনি যেন কী বলছিলেন শবরবাবু!
ও হ্যাঁ। আশ্চর্যের বিষয় হল বিমলাপ্রসাদ শার পরিবারও কিন্তু ভীষণ পিউরিটান। ওদের বাড়ির কোনও মেয়ে বিউটি কনটেস্টে নামছে এটা ভাবাই যায় না।
তবে নম্রতা নামল কেন?
নম্রতা ইজ রেবেল। কলকাতায় পড়তে এসে খুব অল্প বয়সেই সে একটি বাঙালি ছেলেকে বিয়ে করে। ছেলেটির তেমন কোনও গুণ নেই। তবে ভেরি হ্যান্ডসাম। ওরকম সুপুরুষ খুব কম দেখা যায়। এই বিয়ের ব্যাপারে শা পরিবারে খুব অশান্তি হয়েছিল। ছেলেটি ওদের স্বজাতি তো নয়ই, উপরন্তু বাপে তাড়ানো মায়ে খেদানো ভ্যাগাবন্ড টাইপের। বউয়ের ভরণপোষণের ভার নেওয়ার যোগ্যতা ওর ছিল না।
এই গল্পটাও কি আমার শোনা দরকার?
না চাইলে নয়। বলেছি তো শুধু গল্প করতে আমি আসিনি।
তা হলে বলুন।
নম্রতা এ ছেলেটাকে বিয়ে করায় শা পরিবার রেগে গেলেও তাদের কিছু করার ছিল না। বিমলাপ্রসাদ মেয়ে-জামাইকে তার কলকাতার বালিগঞ্জ প্লেসের বাড়িটা দিয়েছিলেন এবং জামাইকে তার অফিসে একটা মোটা মাইনের চাকরিতেও বহাল করেন। ছেলেটার অবশ্য চাকরিতে কোনও মন ছিল না। সারাদিন মদ খেত আর বাড়ির সুইমিং পুলের ধারে বসে থাকত। বিয়েটা অবশ্য সুখের হয়নি। নম্রতার সঙ্গে তার বর বিজিত রায়চৌধুরীর প্রায়ই প্রবল ঝগড়া হত। শোনা যায় মারপিট অবধি গড়াত ব্যাপারটা। অথচ নম্রতা বিজিতকে ডিভোর্স করার কথাও ভাবতে পারত না। লাভ-হেট রিলেশনই হবে বোধহয়। প্রচণ্ড আক্রোশ, আবার প্রচণ্ড ভালবাসা। কিন্তু এর একটা সাইকোলজিক্যাল রিঅ্যাকশনও আছে। নম্রতা অসম্ভব ডিপ্রেশনে ভুগতে থাকে মাঝে মাঝে। সাইকিয়াট্রিস্টের কাছেও যেতে হয়েছিল তাকে। বিজিত তার প্রতি ফেথফুল কি না তা নিয়েও সে ভয়ংকর সন্দেহ বাতিকে ভুগত। সুইসাইডাল টেন্ডেন্সিও ছিল। যাই হোক, ছেলেমেয়েদের কাছে ডাকসাইটে বাবা-মাও জব্দ হয়ে যায়। বিমলাপ্রসাদের মতো গোঁড়া, রক্ষণশীল মানুষও মেয়ের এই অবস্থা দেখে সে যখন যা বায়না করত তখনই তা মেটাতেন। বিউটি কনটেস্টে নামার ব্যাপারেও বাবা কোনও আপত্তি তোলেননি। আপনি কিন্তু আর কোনও প্রশ্ন করছেন না।
আমি শুনছি তো!
হ্যাঁ। কিন্তু নম্রতা তেমন সুন্দরী না হয়েও বিউটি কনটেস্টে কেন নামতে গেল তা জানার কৌতূহল নেই?
নম্রতা সুন্দরী নয় বুঝি! আমার তো তা মনে হয়নি! ওর ফিগার খুব ভাল, মুখশ্রীও চমৎকার।
একটা শ্বাস ফেলে শবর বলে, আপনি সত্যিই একটু অদ্ভুত আছেন। নম্রতা জাস্ট সো সো, বিউটি কনটেস্টে নামবার মতো চটক বা গ্ল্যামার ওর নেই। যাক গে, ও কেন নেমেছিল জানেন? জাস্ট টু মেক বিজিত জেলাস। নম্রতার সব প্রবলেম বিজিতকে নিয়ে। বিজিতকে ও পুরোপুরি গ্রাস করতে চায়। বিজিতের চোখে ও সর্বোত্তমা নারী হয়ে থাকতে চায়। এক ধরনের পাগলাটে অবসেশন। কনটেস্টে জয়ী হওয়া ওর কাছে খুবই জরুরি ব্যাপার ছিল। বিমলাপ্রসাদকে একজন সাইকিয়াট্রিস্ট সাবধান করে দিয়েছিলেন, ওঁর মেয়ের যা অবস্থা তাতে ইগোতে আঘাত লাগলে ম্যাসিভ নার্ভাস ব্রেকডাউন হতে পারে। সুতরাং বিমলাপ্রসাদ ওঁর মেয়ের হয়ে কলকাঠি নেড়েছিলেন। কনটেস্টের মাঝপথে যখন সবাই বুঝতে পেরেছে যে গার্গী মিত্র নামে মেয়েটি তার প্রতিদ্বন্দ্বীদের চেয়ে অনেক এগিয়ে আছে তখনই তিনজন বিচারকের কানে কানে কিছু বলে দেওয়া হল এবং কয়েকটা মুখ আঁটা মোটা খামও হল হাতবদল। বুঝেছেন?
গার্গী হাসছিল। বলল, বুঝেছি।
কিন্তু নম্রতা শা বিউটি কুইন হওয়ার পর দর্শকদের মধ্যে থেকে কিছু বিরূপ প্রতিক্রিয়া হয়েছিল। আপনার কি মনে আছে একজন যুবক বিচারকদের পিছন থেকে উঠে চিৎকার করে বলেছিল যে, এটা সম্পূর্ণ জালি ব্যাপার, সাজানো জিনিস, জোচ্চুরি ইত্যাদি। ছেলেটা রেগে জাজদের শিটও কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছিল। সিকিউরিটির লোকেরা তাকে ধরে বাইরে নিয়ে যায়।
হ্যাঁ। একটা গোলমাল হয়েছিল শুনেছি। সেই সময় আমাদের র্যাম্প থেকে সরিয়ে ভেতরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। আমার খুব লজ্জা করছিল।
যে ছেলেটা ওরকম রি-অ্যাক্ট করেছিল সে কে জানেন?
না।
নম্রতার হাজব্যান্ড বিজিত রায়চৌধুরী।
তা হবে।
এবার আমার প্রশ্ন, বিজিতকে কি আপনি চেনেন?
গার্গী একটু চুপ করে থেকে বলল, একথার জবাব দেওয়া কি খুব জরুরি? নিজস্ব সুত্রে আপনি বোধহয় সব খবরই রাখেন।
শবর দাশগুপ্ত একটু হাসল, আমি কিন্তু সবজান্তা নই। আমার খবর সবই সেকেন্ড হ্যান্ড। সেগুলো যাচাইয়ের অপেক্ষা রাখে। বিজিতের কথা থাক। সঞ্জিত চৌধুরীর প্রসঙ্গে যদি কিছু প্রশ্ন করি জবাব দেবেন কি?