আমি আপ্রাণ চেষ্টা করবো।
থ্যাঙ্ক ইউ মিঃ রাও, আপনার ওপর আমার ভরসা রইলো। দেখুন এ ব্যাপারে আপনার যত টাকা-পয়সা এবং লোকজনের প্রয়োজন হবে পাবেন, পুলিশ ফোর্স সব সময়ের জন্য আপনাকে সাহায্য করবে।
মিঃ আহমদের গাড়ি বেরিয়ে যেতেই মিঃ রাওয়ের সহকারী গোপালবাবু এসে এজির হলেন, মিঃ রাওকে লক্ষ্য করে বলেন–কি হে, ব্যাপার কি? হঠাৎ যে পুলিশ সুপারের আগমন?
একটা সিগারেটে অগ্নিসংযোগ করে বলেন মিঃ রাও-ব্যাপার নতুন নয়, পুরানো।
পাশের সোফায় বসে পড়ে বলেন গোপালবাবু—পুরোনো? তাহলেই সেরেছে, রোগ সারতে অনেক ঔষধের প্রয়োজন হবে।
ঠাট্টা নয়, শুনো গোপাল।
বল, সব শুনতে রাজি আছি।
দস্যু বনহুরকে গ্রেপ্তারের নোটিস নিয়ে পুলিশ সুপারের আগমন হয়েছিল।
কি বললে, বনহুরকে গ্রেপ্তার? তুমি ঐ কেস হাতে নিলে নাকি?
না নিয়ে কি আর উপায় ছিল। পুলিশ সুপার যখন এসেছেন।
কিন্তু এ কথা ভেবে দেখলে না শঙ্কর, কোথায় দস্যু বনহুর, আর কোথায় তুমি। আজ পর্যন্ত পুলিশবাহিনী যার টিকিটি দেখতে পায়নি, তাকে গ্রেপ্তার করবে তুমি? যা খুশি করোগে, আমি কিন্তু ওসবের মধ্যে নেই।
গম্ভীর কন্ঠে বলে ওঠেন শঙ্কর রাও-কেউ যখন তার টিকিটি পর্যন্ত দেখতে পায়নি, সে কারণেই আমি এগুতে চাই। দেখতে চাই কে এই বনহুর, কেমন তার শক্তি। গোপাল শনো, আরও সরে এসো আমার কাছে।
এলাম বল।
গোপাল, গত পরশু রাতে জমিদার বাসব নারায়ণের বাড়িতে হানা দিয়ে দস্যু বনহুর সর্বস্ব লুটে নিয়ে গেছে।
এ কথা আমি শুনেছি।
শুনো, সব কথা মন দিয়ে শুনো, তারপর যা হয় বল। আমি একটা বুদ্ধি এঁটেছি।
কি বুদ্ধি শুনি? হাতি ধরবার মত বনহুরকে গ্রেপ্তারের ফাঁদ পাততে চাও নাকি?
এক রকম তাই।
বল, তাহলে শুনি তোমার বুদ্ধির ফাঁদ কত মজবুত হবে?
শুনো, আমাকে পুলিশ ইন্সপেক্টার মিঃ হারুনের নিকট যেতে হচ্ছে। কিছু সংখ্যক পুলিশ প্রয়োজন।
তা তো বুঝলাম, কিন্তু তোমার বুদ্ধির কৌশল কিছুটা শুনাও। পুলিশ নিয়ে বনহুরের সঙ্গে যুদ্ধ ঘোষণা করবে নাকি?
না না, তা নয়, কথা হচ্ছে আগামী শনিবারে রায় বাহাদুর শ্যামাচরণের তিন লাখ টাকা তার দেশের বাড়ি থেকে শহরের বাড়িতে আনবে।
একথা তুমি জানলে কি করে?
জানতে হয় না, জেনেছি।
তার মানে?
মানে এই রকম একটা অভিনয় করতে হবে। আমি আজই একবার রায় শাহাদুর শ্যামাচরণ মহাশয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবো। তিনি যেন এই রকম একটা কথা সকলের মধ্যে রটিয়ে দেন এবং নিজের সই করা কয়েকটা কাগজ-যাক সব বলে আর কাজ নেই, পরে সব জানতে পারবে।
তবু একটু বল না?
তারপর কয়েকজন পাহারাদার সঙ্গে করে শ্যামাচরণ মহাশয়ের নায়েব দেশের বাড়ি থেকে মোটরে তিন লাখ টাকা নিয়ে রওনা দেব, কিন্তু আসলে তাদের কাছে কোন টাকা-পয়সা থাকবে না। দস্যু বনহুর জানবে তিন লাখ টাকা যাচ্ছে। এ সুয়োগ কিছুতে নষ্ট করা যায় না, তখন নিশ্চয়ই সে গাড়িতে হানা দেবে।
খাসা বুদ্ধি তোমার!
হ্যাঁ, খাসা বুদ্ধি এটেছি গোপাল। যে গাড়িতে টাকা আসছে, সে গাড়িকে অনুসরণ করবে পুলিশ ফোর্স, সকলের হাতেই থাকবে গুলিভরা রাইফেল। অতি গোপনে থাকবে, যেন কেউ জানতে না পারে।
উঠে পড়েন মিঃ শঙ্কর রাও-গোপাল তৈরি হয়ে এসো, এক্ষণি বেরুবো।
হাই তুলে উঠে দাঁড়ায় গোপালবাবু যাত্রা তোমার জয়যুক্ত হউক!
০৫.
বনহুর কক্ষে পায়চারী করছে। এক পাশে বিরাট একটা মশাল জ্বলছে। সম্মুখে দণ্ডায়মান তার অনুচরবৃন্দ। মশালের আলোতে দস্যু বনহুরের জমকালো পোশাক চকচক করে উঠছে। বনহুরের আসনের সামনে একটা টেবিল, টেবিলে একখানা চিঠি খোলা অবস্থায় পড়ে আছে।
বনহুর কাগজখানা হাতে নিয়ে গম্ভীর কণ্ঠে বলেন-এ চিঠি কোথায় পেলে?
একজন দস্যু বলে ওঠে—সূর্দার, একটা লোকের পকেট থেকে চিঠিখানা পড়ে গিয়েছিল, রহমান কুড়িয়ে এনে আমাকে দিয়েছে।
হঠাৎ বনহুর হেসে ওঠে হাঃ হাঃ করে। তারপর প্যান্টের পকেট থেকে ঐ রকম আর একখানা কাগজ বের করে ঐ কাগজখানার পাশে রাখে। তারপর ঐ দস্যুটিকে বলে—কাগজ দুখানা পড়ো।
দস্যুটি কাগজ দু’খানা হাতে তুলে নিয়ে বলে ওঠে—একি সর্দার, দুটোতেই যে একই কথা লেখা রয়েছে!
চিঠি দুটোতে লেখা ছিল—
নায়েব বাবু, আমার তিন লাখ টাকার
প্রয়োজন। আগামী পরশু আমার গাড়ি
পাঠাবো। কয়েকজন পাহারাদার সহ
ঐ টাকা নিয়ে আপনি স্বয়ং চলে আসবেন।
—রায় বাহাদূর শ্যামচরণ।
দস্যুটি কাগজ দু’খানা পড়া শেষ করে আবার টেবিলে রাখে। আশ্চর্য। দু’খানা কাগজের লেখা একই লোকের।
বনহুর গম্ভীর কণ্ঠে বলে—দস্যু বনহুরকে গ্রেপ্তারের এটা একটা নতুন ফন্দি। শুধু ঐ দুটি নয়, অমনি আরও অনেক চিঠি এখানে সেখানে গোপনে ছড়ানো হয়েছে। হাঃ হাঃ হাঃ, দস্যু বনহুরকে গ্রেপ্তার করে এমন লোক পৃথিবীতে আছে নাকি? যাক এবার তোমরা বিশ্রাম করোগে।
দস্যুগণ বেরিয়ে যায়। বনহুর নিজের বিশ্রামঘরে প্রবেশ করে।
এমন সময় নূরী এসে দাঁড়ায় সেখানে। মধুর কন্ঠে ডাকে—হুর!
নূরী বনহুরকে আদর করে ‘হুর’ বলে ডাকতো।
বনহুর মাথার পাগড়িটা বিছানার ওপর ছুঁড়ে দিয়ে বলে–কি খবর নূরী?
—হুর, তোমার দেখাই যে পাওয়া যায় না। সারাটা দিন তুমি কোথায় কাটাও?
বনহুর বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে মৃদু হেসে বলে–সারাটা দিন আমি তোমার পাশেই থাকি, তুমি আমাকে দেখতে পাও না নূরী?