ম্যাডাম, ও আমাকে কিছু মিথ্যা ইনফরমেশন দিয়েছে।
মিথ্যা ইনফরমেশনের শাস্তি যদি কানে ধরা হয়, তাহলে সিগারেট ফেলে আপনারও তো কানে ধরে দাঁড়িয়ে থাকা উচিত। আপনিও আমাকে মিথ্যা ইনফরমেশন দিয়েছেন। বলেছেন, আপনি আমার স্বামীর ডিরেক্ট স্টুডেন্ট। যা আপনি না।
খলিল বলল, ম্যাডাম, কাদের একটি হত্যাকাণ্ডের সাসপেক্ট। আপনিও সাসপেক্ট। আমি তদন্তকারী অফিসার। মামলার তদন্তের সাহায্যের জন্য আমরা সাসপেক্টদের সঙ্গে কিছু মেন্টাল গেম খেলি। তার সঙ্গে আমি এক ধরনের মেন্টাল গেম খেলছি। কাদেরের মোরালিটি ভেঙে দেওয়া হয়েছে। এখন চট করে মিথ্যা বলবে না।
আমি একজন সাসপেক্ট?
জি ম্যাডাম। এ বাড়িতে যারা আছে সবাই সাসপেক্ট। আপনার মেয়ে পলিন, যার বয়স তের বছর, সেও সাসপেক্ট। চালুনি দিয়ে চেলে মূল আসামি বের করা হবে। এই কাজটি আমি ভালো পারি। কবি হিসেবে আমি ব্যর্থ হতে পারি, তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে আমার সুনাম আছে।
রুবিনা বলল, আমি যেহেতু সাসপেক্ট, আপনি নিশ্চয়ই আমার সঙ্গে মেন্টাল গেম খেলবেন বা খেলা শুরু করেছেন।
ম্যাডাম, আপনার সঙ্গে আমি মেন্টাল গেম এখনো শুরু করিনি। তবে অবশ্যই শুরু করব।
কখন শুরু করবেন?
আপনি অনুমতি দিলে এখনই শুরু করতে পারি। ম্যাডাম, আমি আপনার স্বামীর ডেডবডি নিয়ে এসেছি। বারান্দায় দাঁড়ালেই দেখতে পাবেন পুলিশের গাড়ির পেছনে একটা অ্যাম্বুলেন্স আছে। অ্যাম্বুলেন্সের ভেতর কফিনে ডেডবডি আছে। সুরতহাল যেহেতু শেষ হয়েছে, ডেডবডির কাজ শেষ।
খলিল পকেট থেকে হলুদ খাম বের করল। হলুদ খামের ভেতর সরকারি সিলের কাগজ। খলিল সাহেব কাগজ এগিয়ে দিয়ে বলল, ম্যাডাম, এখানেই সই করে ডেডবডি রিসিভ করুন।
রুবিনা সই করল। খলিল বলল, সুরতহালের ডেডবডি এভাবে হ্যান্ডওভার করা হয় না। নানা ঝামেলার ভেতর দিয়ে যেতে হয়। আমি দৌড়ঝাঁপ করে বিশেষ ব্যবস্থায় নিয়ে এসেছি। এটাই আমার মেন্টাল গেম। কাদেরকে আমি অ্যারেস্ট করে নিয়ে যাব ভেবেছিলাম। ওকে আপাতত রেখে যাচ্ছি। বাসায় ডেডবড়ি, আপনাকে অনেক কাজকর্ম করতে হবে। একজন পুরুষের সাহায্য দরকার।
রুবিনার ঠোঁটের কোনায় ক্ষীণ হাসির রেখা দেখা দিয়েই মিলিয়ে গেল। সে মেন্টাল গেমটা পছন্দ করেছে।
ম্যাডাম, অনুমতি দিলে আমি উঠি। আপনার এখন অনেক ঝামেলা। ডেডবডি দ্রুত কবর দেওয়ার ব্যবস্থা করুন। অতিরিক্তি গরম—ডেডবডি ডিকম্পোজ করা শুরু হয়েছে।
রুবিনা সিগারেট ধরাল। সে বড় রকমের ধাক্কা খেয়েছে—এ রকম মনে হচ্ছে না। খলিল ডাকল, কাদু কোথায়? কাদু।
রুবিনা বলল, কাদুটা কে?
কাদের অনেক লম্বা নাম তো, এজন্য শর্ট করে কাদু ডাকছি। আপনি যেমন আপনার স্বামীর বন্ধু রবিউলকে রবি ডাকেন অনেকটা সে রকম।
কাদু সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। সে এখনো কানে হাত দিয়ে আছে। চোখ লাল। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম।
খলিল বলল, অনেকক্ষণ তোমার সঙ্গে আপনি আপনি করে কথা বলা হয়েছে। এখন থেকে তুমি, তারপর তুই। ঠিক আছে।
কাদের বলল, জি স্যার, ঠিক আছে।
কাদু, কান থেকে হাত নামাও। তোমার এখন প্রচুর কাজ। তোমার স্যারের ডেডবডি নিয়ে এসেছি। কোথায় রাখবে ঠিক করো। প্রচুর বরফ লাগবে। বরফের ব্যবস্থা করো। গ্রামের বাড়িতে ডেডবডি নিতে চাইলে মাইক্রোবাসের ব্যবস্থা করো। চা-পাতা-ফাতা কী কী যেন লাগে। কোনো একটা শেষ বিদায় স্টোরে চলে গেলে সবকিছু পাবে।
রুবিনা বলল, উইল ইউ প্লিজ লিভ আস নাও!
খলিল দাঁড়াতে দাঁড়াতে বলল, অবশ্যই ম্যাডাম! এক্ষুনি চলে যাচ্ছি। আমার ধারণা, কেউ টেলিফোন করলে আপনি এখন ধরবেন না। দয়া করে আমারটা ধরবেন। আপনার নিজেকে ক্লিয়ার করার একটা পথ আছে। যদি আপনার স্বামীর লেখা কোনো কাগজ পান। যদি লেখা থাকে আমি স্বেচ্ছায় বিষপান করেছি। আমার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয়। এ রকম কিছু যদি না পান আপনি উদ্ধার পেতে পারেন। এখন একটা সৎ পরামর্শ দেব।
রুবিনা বলল, কী রকম?
এনায়েত নামে একজন লোক আছে, কারওয়ান বাজারে থাকে। মানুষের সই জাল করার ব্যাপারে তার দক্ষতা অসাধারণ। জাল পাসপোর্ট, জাল দলিলে তার ওপর কেউ নেই। তার টেলিফোন নাম্বার কি দেব?
রুবিনা জবাব দিল না। কঠিন চোখে তাকিয়ে রইল। এই প্রথম আমি খলিল কী চিন্তা করছে তা ধরতে পারলাম। এনায়েত নামের লোকটিও তার ফাদের অংশ। এনায়েত ডিবি পুলিশের লোক। রুবিনা তার কাছে জাল কাগজ তৈরি করতে যাবে এটাই ফাঁদ। কফিন রাখা হয়েছে শোবার ঘরের উত্তরের বারান্দায়। বাড়িতে থমথমে আতঙ্ক। কাদের মাথায় টুপি পরে ফেলেছে। টুপি মাথায় কাদেরকে কখনো দেখিনি। তাকে অদ্ভুত দেখাচ্ছে। টুপির কারণেই হয়তো মুখ লম্বাটে হয়েছে। কাদের কাপভর্তি চালে আগরবাতি জ্বালিয়ে দিয়েছে। আগরবাতিগুলো হয় ভেজা কিংবা কোনো ভেজাল আছে। একটু জ্বলেই নিভে যাচ্ছে। কাদের ব্যস্ত আগরবাতির তদারকিতে।
সালমা মাথায় ঘোমটা দিয়ে রান্নাঘরে সময় কাটাচ্ছে। ধোয়া বাসন আরেকবার ধুয়ে ফেলছে। মুখে বিড়বিড় করছে, আল্লাহ রহম করো। দুপুরে এই বাড়িতে রান্না হবে কি না তা বুঝতে পারছে না। মরা-বাড়িতে চুলা জ্বালানোর নিয়ম নেই, তবে বড়লোকের বাড়ির নিয়মকানুন থাকে। আলাদা। দুপুরে ম্যাডাম যদি বলেন, ‘খানা লাগাও, তখন সে কী করবে? কাদেরের কাছে সে পরামর্শ চেয়েছিল। কাদের মুখ ঝামটা দিয়ে বলেছে, আমারে দিক করবেন না। আমার সব বুদ্ধি শেষ। যা করার নিজের বুদ্ধিমতো করেন।