যেভাবে হোক যোগাড় কর ভাবি।
রবিক শোন–তুমি খুবই অসম্ভব কথা বলছি। সংসারের অবস্থা তো তুমি জান।
আমি সবই জানি। কিন্তু আমার কোনো উপায় নেই। ভাবি শোন আমি সন্ধ্যাবেলা একটা লোক পাঠাব, তার হাতে টাকাটা দিয়ে দিও।
রকিব কাউকে পাঠিও না। তুমি নিজে আস–তোমার ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলে একটা ব্যবস্থা কর।
রকিব টেলিফোন রেখে দিল। রীনা বোকার মতো খানিকক্ষণ হ্যালো হ্যালো করল।
পাঁচ হাজার টাকা সে কিছুতেই যোগাড় করতে পারবে না। হাসানের কাছ থেকে নিয়ে হাজার দুয়েক টাকা সে দিতে পারবে–এর বেশি না। এতে কি রকিবের বিপদ কাটবে? বিপদটা কী তাও সে স্পষ্ট করে নি। এমন কী বিপদ যে বাসায় এসেও টাকা নেয়ে যাবে না!
বাড়িওয়ালার স্ত্রী জাহেদা বললেন, মা বোস শরবত খেয়ে যাও।
রীনা বলল, জ্বি না চাচি–টগর-পলাশ এরা মাত্র স্কুল থেকে এসেছে। এদের গোসল করাব-খাওয়াব।
শরবত খেতে কয় মিনিট লাগে? তিন মিনিট। গরমে তেঁতুলের শরবত খেয়ে দেখ–শরীরটা কেমন ঠাণ্ডা হয়ে যায়। বোস খাটের ওপর বোস।
রীনা খাটে বসল। নিতান্ত অনিচ্ছার সঙ্গে বসল। জাহেদা গল্প করতে ভালবাসেন। তার হাতে ধরা খেলে সহজে মুক্তি পাওয়া মুশকিল। তার সব গল্পই ভাড়াটেদের কর্মকাণ্ডের ওপর। ভদ্রমহিলা কখনো কোনো ভাড়াটের ঘরে যান না। কিন্তু তাদের সব খবর জানেন।
কেমন আছ মা তুমি?
জ্বি ভালো।
তোমার দেওর যে হাসান সে চাকরি বাকরি কিছু পায় নি?
তেমন কিছু পায় নি, তবে বেকার না। হিশামুদ্দিন গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজে কাজ করছে।
কী কাজ?
হিশামুদ্দিন সাহেবের পার্সেনাল কিছু কাজ করে দিচ্ছে। পরে ওই ফার্মেই চাকরি দেবে।
ওর বিয়ে-টিয়ের কথা ভাবছি। ভাবলে বলবে–আমার হাতে ভালো মেয়ে আছে। খরচপাতি করে বিয়ে দেবে। দানসামগ্ৰী ছাড়া ক্যাশ টাকাও দেবে।
জ্বি আচ্ছা বলব।
ভাগ্য ফেরাবার জন্যে হলেও পুরুষমানুষের বিয়ে দিতে হয়। কথায় আছে না। স্ত্রীভাগ্যে ধন।
জ্বি।
শরবতটা কেমন লাগল। মা?
খুব ভালো লেগেছে চাচি। এখন উঠি?
দুটা মিনিট বোস মা। একটা ঘটনা বলি। এ রকম ঘটনা যে ঘটতে পারে বাপের জন্মে শুনি নাই। আমাদের চারতলায় ভাড়া থাকে যে ইয়াছিন সাহেব, উনাকে চেন?
জ্বি না।
ওই যে রোগা-চিমসা মুখ, মাথায় টাক, এজি অফিসে কাজ করে–তার ঘটনা।
চাচি আরেকদিন এসে শুনব?
এসেছ যখন শুনে যাও। ইয়াছিন সাহেবের ফ্যামিলি গিয়েছে দেশে। ভদ্রলোক ছুটি পায় নাই, যেতে পারে নাই। একদিন দেখি কী একটা মেয়ে নিয়ে ঘরে যাচ্ছে। সুন্দর মতো চেহারা। সতের-আঠার বছর বয়স। আমার হলো সন্দেহ–ব্যাপারটা কী? এই সময় তো তার অফিসে থাকার কথা। মেয়ে নিয়ে ঘরে কেন? বিষয় জানার জন্যে আমি নিজেই গেলাম।
কী জানলেন?
সে বিরাট ইতিহাস। ইয়াছিন সাহেব কেঁদে আমার পায়ে পড়ে গেল…
চাচি আরেক দিন এসে পুরো গল্প শুনব। মনে হচ্ছে খুব ইন্টারেষ্টিং।
রীনা উঠে দাঁড়াল। হাসান চলে যাবার আগেই তাকে ধরতে হবে। রকিবের জন্যে হাসানের টাকা রেখে দিতে হবে। ইয়াসিন সাহেব যা ইচ্ছা করুক। তার সংসার ঠিক থাকলেই হলো।
আশরাফুজ্জামান সাহেব দরজা খুলে হতভম্ব হয়ে গেলেন
আশরাফুজ্জামান সাহেব দরজা খুলে হতভম্ব হয়ে গেলেন। পুলিশ দাঁড়িয়ে আছে। ওয়াকিটাকি হাতে অল্প বয়েসী এক পুলিশ অফিসার। হাসি হাসি মুখ। যেন ঈদের দাওয়াত খেতে এসেছে। পুলিশের মুখের হাসিতে আশরাফুজ্জামান সাহেব বিভ্রান্ত হলেন না। শুকনো গলায় বললেন, কাকে চাই?
আপনি কি রকিবউদিনের বাবা?
জ্বি।
স্যার কেমন আছেন?
ভালো আছি।
একটু কথা ছিল আপনার সঙ্গে।
বলুন।
বাইরে দাঁড়িয়ে তো কথা হয় না। ঘরে গিয়ে বসি।
আশরাফুজ্জামান দ্রুত চিন্তা করলেন। ঘরের ভেতর পুলিশ ঢোকানো ঠিক হবে না। একবার পথ চিনে ফেললে এরা বারবার আসবে। লোকজন নানান সন্দেহ করবে। আশরাফুজ্জামান সাহেব বললেন–আমি তো এখন বেরোচ্ছি। আমার একজন আত্মীয় অসুস্থ। অক্সিজেন দেয়া হচ্ছে।
উনি কোথায় আছেন?
হলিফ্যামিলি হাসপাতালে। আমার ভাই হয়। চাচাতো ভাই।
আমি কি পরে আসব?
কখন বাসায় থাকি ঠিক নাই তো। রোগীর অবস্থা ভালো না। সারাদিন হাসপাতালে থাকতে হতে পারে। বুকে কনজেশান হয়েছে। ক্রিটিক্যাল অবস্থা।
তাহলে বরং একটা কাজ করুন–রোগী দেখে আপনি থানায় চলে আসুন। রমনা থানা। আমার নাম বললেই হবে। আমার নাম আব্দুল খালেক সাবইন্সপেক্টর।
জ্বি আচ্ছা!
আপনার ছেলের ব্যাপারে দু-একটা কথা জিজ্ঞেস করব। চিন্তিত হবার মতো কিছু না।
আমি চিন্তিত না।
তাহলে স্যার যাই? স্নামালিকুম।
ওয়ালাইকুম সালাম।
আশরাফুজ্জামান সাহেব পুলিশ অফিসারের সঙ্গে বের হয়ে এলেন। মোড়ের দোকান থেকে সিগারেট কিনলেন। সিগারেট তাঁর জন্যে পুরোপুরি নিষিদ্ধ। নিষিদ্ধ হলেও তিনি সমানে খেয়ে যাচ্ছেন। সিগারেট খাবার জন্যেই তাকে দীর্ঘ সময় বাসার বাইরে থাকতে হয়। সিগারেট হাতে তিনি ইস্কান্দরের চায়ের দোকানে ঢুকলেন। তার ডায়াবেটিস আছে। চিনি দিয়ে চা খাওয়া সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। ইস্কান্দরের চায়ের দোকানে তিনি এই নিষিদ্ধ কর্মটিও করেন। দু চামচের জায়গায় তিন চামচ চিনি দিয়ে চা খান।
ইস্কান্দর বলল, চাচামিয়া কেমুন আছেন?
তিনি হাসিমুখে বললেন, ভালো আছি। দেখি চা দাও। দই আছে?
আছে।
মিষ্টি না টক?