বাবা বললেন, আমি প্লেনের সেকেন্ড ফ্লাইট ধরে ঢাকায় চলে আসছি। কোনো রকম দুশ্চিন্তা করবি না।
আচ্ছা।
খবরটা পড়ে তুই কি বেশি রকম আপসেট হয়েছিস? তোর গলা এরকম শুনাচ্ছে কেন?
বাবা আমার জ্বর। জ্বরের কারণে গলা এরকম হয়ে গেছে।
আমি দুপুরের মধ্যে চলে আসব। তুই মোটেও আপসেট হবি না।
আমি আপসেট না বাবা। আমি নিয়তীবাদী হয়ে গেছি। নিয়তিবাদী মানুষ আপসেট হয় না। বাবা এই ঘটনাটি তুমি ঘটিয়েছ? এন্ড গেমে জয়লাভ হয়েছে।
বাবা বিরক্ত গলায় বললেন, কী আজেবাজে কথা বলছিস? এয়ারপোর্টে গাড়ি পাঠিয়ে দে। তোর মা কোথায়?
মার নাটকের শুটিং চলছে বাবা। তিনি শুটিং-এ গেছেন।
খবরের কাগজ কি তোর মা দেখেছে?
দেখেছেন হয়তো। মা নিয়মিত কাগজ পড়েন।
তারপরেও শুটিং-এ চলে গেল!
খবরের কাগজের খবরটা তোমার জন্যে যতটা গুরুত্বপূর্ণ মার জন্যে হয়ত ততটা নাবাবা টেলিফোন রেখে দেই? কথা বলতে পারছি না। ব্যথায় মাথা ছিঁড়ে যাচ্ছে।
তস্তুরী বেগম হঠাৎ ঘরে ঢুকে উত্তেজিত গলায় বলল, আফা আজহার চাচা মারা গেছেন খবর জানেন?
খবরের কাগজের প্রথম পাতায় আজহার চাচার একটা ছবি ছাপা হয়েছে। ছবির ক্যাপশান–সন্ত্রাসীর গুলিতে বিশিষ্ট ব্যবসায়ীর মৃত্যু। হত্যাকাণ্ডের দীর্ঘ বর্ণনাও আছে। দিনে দুপুরে একটা সুন্দর চেহারার ছেলে কী কাজের কথা বলে তার অফিস ঘরে ঢুকেছে। সবার সামনে পর পর তিনবার গুলি করেছে। ছেলেটার চেহারা সুন্দর। মাথা ভর্তি কোঁকড়ানো চুল। পুলিশ সন্দেহ করছে হত্যাকাণ্ডের নায়কের নাম টুলু। সে পেশাদার খুনি।
ছবিতে আজহার চাচা চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছেন। একটা ছেলে তাকে জড়িয়ে ধরে ব্যাকুল হয়ে কাঁদছে। কী পবিত্র দৃশ্য।
তস্তুরী বেগম বলল, আজহার চাচাজীর ছেলে আসছে আফা। আফনের সাথে দেখা করতে চায়। তারে কি চইল্যা যাইতে বলব? সে খুবই কানতেছে।
তাকে ড্রয়িংরুমে বসাও। তাকে বলে আমি আসছি।
আসছি বলেও আমি শুয়ে আছি। তাকিয়ে আছি আকাশের দিকে। আকাশ জোড়া মেঘ! কী সুন্দর মেঘমালা। কখন বৃষ্টি নামবে?