আমি বললাম, তোমার মাকে কি খবর দেব ভাইয়া? তিনি এসে তোমাকে দেখে যাবেন।
না।
কোঁকড়া চুলের তোমার ঐ বন্ধুটাকে আমার খুব দরকার। ওকে কোথায় পাব বলতে পারো?
না।
ঠিকানা জানোনা?
ওর কোনো ঠিকানা নেই।
নামটা বলে।
নাম দিয়ে কী হবে?
কিছুই হবে না। নাম জানতে ইচ্ছা করছে।
ওর নাম টুলু।
ভাইয়া খুব আগ্রহ করে চায়ে ডুবিয়ে কেক খাচ্ছে। তার ঠোঁটের কোনায় হাসি লেগেই আছে। আমি বললাম, ভাইয়া তুমি আমাকে একটা কথা বলে তো— তুমি কি তোমার বন্ধুদের মতো বড় ধরনের কোনো অপরাধ করেছ?
ভাইয়া চা-য়ে চুমুক দিয়ে বলল, তোর কী মনে হয়?
আমি সহজ গলায় বললাম, আমার এখন তোমাকে দেখে মনে হয় তুমি করেছ। শুধু যে করেছ তা না, তুমি ওদের লীডার জাতীয় কেউ। আড়ালে বসে সুতা খেলাও।
ভাইয়া আবারো হাসল। আমি বললাম, তুমি কিন্তু আমার প্রশ্নের জবাব দাও নি।
ভাইয়া বলল, যে আমাকে যা ভবে আমি সে রকম।
আমি বললাম, এটা তো প্রশ্নের উত্তর হলো না। আমি জিজ্ঞেস করলাম নেপাল দেশটা কোথায়? তুমি বললে যেখানে নেপালের থাকার কথা সেখানে।
তুই খুব সুন্দর করে কথা বলিস, তোর খুব বুদ্ধি।
তুমি আমার প্রশ্নের জবাব দেবে না?
এখন দেব না। কোনো একদিন হয় তো দেব। কিংবা জবাব দিতে হবে না। নিজেই জবাব পেয়ে যাবি।
আমি ভাইয়ার দিকে ঝুঁকে এসে বললাম, তুমি কি জানো ছোটবেলায় আমার বিয়ে হয়েছিল?
ভাইয়া সহজ গলায় বলল, জানি। আজহার চাচার ছেলের সঙ্গে। ওটা তো বিয়ে না। বিয়ে বিয়ে খেলা।
সব কিছুই তো খেলা।
তোর মতো বুদ্ধি আমার নেই। ফিলসফির কথা আমি কিছুই বুঝি না। তবে এই বিয়ে নিয়ে তুই মোটেও চিন্তা করবি না। ওটা কোনো ব্যাপার না। মাথা থেকে ঝেড়ে ফেল। তুই তোর ঐ টিচারটাকে বিয়ে করে ফেল।
টিচারের কথা তুমি জানলে কীভাবে?
ভাইয়া আবারও হাসল। আমি বললাম, ভাইয়া তুমি ঘর অন্ধকার করে চুপচাপ বসে থাক। কিন্তু তুমি অনেক কিছু জানো। তাই না?
তা জানি। মৃ শোন, ছোটবেলার বিয়েটা নিয়ে তুই মোটেও ভাববি না। বাবা তোকে পাগলের মতে ভালবাসেন। তোর কোনো রকম সমস্যা বাবা হতে দেবেন না। এই বিষয়টা নিয়ে তুই আর ভাববি না।
আমি নিচু গলায় বললাম, ব্যাপারটা ভুলতে পারছি না। আমার কেন জানি মনে হচ্ছে কোনোদিন যদি আজহার চাচার ছেলেটা এসে বলে, মৃন্ময় এসো তোমাকে নিতে এসেছি। তাহলে আমি তার সঙ্গে চলে যাব।
পাগলের মতো কথা বলবি না।
যেটা সত্যি আমি সেটাই বলছি।
অনেকক্ষণ কথা হয়েছে। এখন বাসায় যা। মাথা ঠিক রাখ। ভালো কথা, টুনু এসে আমার জিনিসটা নিয়ে যাবে।
কবে আসবে?
আসবে কোনো একদিন। আজও আসতে পারে।
ভাইয়া, সেও কি তোমার মতো? প্রশ্ন করলে জবাব দেয় না।
প্রশ্ন করে দেখিস। সে তোকে খুব পছন্দ করে। তুই না-কি একদিন তাকে খুব যত্ন করে ভাত খাইয়েছিলি।
হ্যাঁ।
ঘটনাটা বলতে বলতে টুনু কেঁদে ফেলেছিল। কেঁদে ফেলে সে নিজের উপর খুবই রেগে গেল। তারপর করল কী ঠাশ ঠাশ করে দেয়ালে মাথা ঠুকে মাথা ফাটিয়ে ফেলল। হা হা হা।
এর মধ্যে হাসির কিছু নেই ভাইয়া, আসবে না।
আচ্ছা যা হাসব না।
ভাইয়া তোমার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আমি কোথায় যাব জান?
জানি না তবে অনুমান করতে পারি।
আচ্ছা অনুমান কর তো দেখি।
প্রথম যাবি শালবনের দিকে। কিছুক্ষণ একা একা ঘুরবি। হয়েছে?
হ্যাঁ হয়েছে। তারপর যাবি আজহার চাচার কাছে। এটা কি হয়েছে?
হ্যাঁ এটাও হয়েছে। আর কোথায় যাব বল। শেষটা বলতে পারলে আমি ধরে নেব তোমার ইএসপি পাওয়ার আছে।
তুই আমার মা-কে দেখতে যাবি। হয়েছে?
হ্যাঁ হয়েছে। মা-র সঙ্গে দেখা করতে চাচ্ছিস কেন?
এম্নি। কোনো কারণ নেই। তুমি বাবার কাছ থেকে কতটুকু পেয়েছ, আর মা-র কাছ থেকে কতটুকু পেয়েছ এটা আমার জানার শখ।
একদিন দেখেই সব বুঝে ফেলবি?
না তা বুঝব না। তবে চেষ্টা করে দেখব।
ভাইয়া হাসিমুখে বসে আছে। পা নাড়ছে। মনে হলো হাজত ঘরে থেকে সে খুব মজা পাচ্ছে।
হাজত থেকে বের হয়েছি। ওসি সাহেব আমাকে এগিয়ে দিতে এসেছেন। স্বাভাবিক সৌজন্যবোধ থেকে তিনি যে এটা করছেন তা মনে হচ্ছে না।
ম্যাডাম আপনি আপনার ভাই এর ব্যাপারে মোটেও চিন্তা করবেন না।
আমি চিন্তা করছি না।
তাকে যতটুকু সুবিধা দেয়া যায় আমরা দিচ্ছি।
আমি গাড়িতে উঠতে উঠতে বললাম, কেন দিচ্ছেন?
ওসি সাহেব প্রশ্নের জবাব দিলেন না। মনে হলে তিনি কেমন যেন। ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেছেন। তিনি প্যাকেট থেকে সিগারেট বের করতে করতে বললেন, ম্যাডাম আপনার যখনই ভাইকে দেখতে ইচ্ছা করলে আপনি চলে আসবেন। আমি যদি নাও থাকি অসুবিধা হবে না। আমি ইন্সট্রাকশান দিয়ে দেব।
থ্যাংক য়্যু।
আমার গাড়ি চলতে শুরু করেছে। ওসি সাহেব হাসিমুখে দাঁড়িয়ে আছেন। সুন্দর একজন মানুষ। পুলিশের পোশাক ফেলে পায়জামা পাঞ্জাবি পরলেই তাঁকে মনে হবে কোনো এক প্রাইভেট কলেজের বাংলার অধ্যাপক। পুলিশ এবং মিলিটারিদের যেমন পোশাক আছে অন্য সবারই তেমন পোশাক থাকলে। ভালো হতো। পোশাক দেখেই বোঝা যাবে তার পেশা কী। শুধু পুলিশ এবং মিলিটারিদের আমরা চিনব আর অন্যদের চিনতে পারব না, তা কেন হবে? কেরানিদের এক রকম পোশাক হবে, বড় সাহেবদের আরেক রকম, সন্ত্রাসীদের আরেক রকম। আমরা সবাই সবাইকে চিন। কোনো রাখ ঢাক থাকবে না।
আপা কোনদিকে যাব?
আমি ঠিকানা দিয়ে দিলাম। ভাইয়ার মা-র ঠিকানা। দ্রমহিলাকে আমি কী ডাকব? মা ডাকব? নাকি অন্য কিছু?