আজ ক্লাসে আসেন নি এই কারণেই এমন গুজব?
তিনি গত তিনদিন কোনো ক্লাসে আসছেন না। তিনদিন আগে থেকেই বাজারে গুজব ভাসছে। দুই রকমের গুজব। একটা হলে তিনি চাকরি করবেন না রেজিগনেশন লেটার দিয়েছেন। দ্বিতীয়টা হলো ইউনিভার্সিটি তার চাকরি নট করে দিয়েছে। দুটা গুজব যখন বাজারে চালু থাকে তখন দুটা গুজবের একটা সত্যি হয়। কোনটা সত্যি কে জানে!
যেটাই সত্যি হোক ফলাফল তো একই।
তা ঠিক। আমরা গুজব অনুসন্ধান কমিটি করেছি। আমি সেই কমিটির সেক্রেটারি জেনারেল। আমার দায়িত্ব হচ্ছে আজ বিকাল চারটার মধ্যে রিপোর্ট দেয়া। তুই আমার সঙ্গে কাজ করবি?
না।
আমি কাজ শুরু করে দিয়েছি। স্যারের নাম্বারে টেলিফোন করেছি। সেই নাম্বারে কেউ ধরছে না। ইউনিভার্সিটি থেকে ঠিকানা নিয়ে তার বাসায় গিয়েছি। সেখানেও কেউ নেই। তবে বিভিন্ন জায়গায় স্পট লাগানো আছে। খোজ বের হয়ে পড়বে। তোকে দেখে মনে হচ্ছে হয় তোর প্রচণ্ড মন খারাপ নয় তোর খুব ক্ষিধে লেগেছে। কোনটা সত্যি?
দুটাই সত্যি। আমি সকালে নাশতা করি নি। এবং আমার মনও খারাপ।
ক্যান্টিনে নাশতা করে নে। ভেজিটেবল রোল আছে, গরম গরম ভাজছে। নাশতা খেয়ে আয় তোর সঙ্গে গোপন কথা আছে। খুবই গোপন। সিক্রেট টু দা হাইয়েস্ট ওয়ার্ভার।
মুখ প্যাঁচার মতো করে রাখলে–গোপন কথা বলা যাবে না। মনের দুঃখ এক পাশে সরিয়ে–আমার কাছে আয়। গোপন কথা শুনে যা।
আমি ফরিদার দিকে তাকালাম। যত দিন যাচ্ছে এই মেয়ে তত মোটা হচ্ছে। মজার ব্যাপার হচ্ছে সে তার বিশাল শরীর নিয়ে মোটেই চিন্তিত না। মনের সুখে খাওয়া দাওয়া করছে। ক্লাসের শেষে বাড়ি যাবার আগে অবশ্যই সে আইসক্রিম খাবে। সে একা খাবে না। সঙ্গে যারা থাকবে তাদের সবাইকে খেতে হবে। মানুষকে নানান ক্যাটাগরিতে ফেলা যায়। ফরিদী এমন মেয়ে যাকে কোনো ক্যাটাগরিতে ফেলা যাবে না।
ফার্স্ট ইয়ারের প্রথম সেমিস্টার শুরুর দিনে ফরিদা সবাইকে একটা কাগজ পাঠাল। কাগজের ওপর লেখা জন্মদিন–জানিয়ে দিন।
তার নিচে গুটি গুটি করে লেখা–
সহযাত্রী বন্ধুদের অনুরোধ করা যাচ্ছে–তাঁরা যেন তাদের জন্মদিন এই কাগজে লিখে দেন। যাতে ক্লাসের পক্ষ থেকে এবং আমার নিজের পক্ষ থেকে আমরা জন্মদিন পালন করতে পারি।
ফরিদা তার দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। জন্মদিন পার্টি হচ্ছে। ফরিদা একাই একশ। কথায় কথায় ‘খুবই গোপন। সিক্রেট টু দি হাইয়েস্ট ওয়ার্ডার’ বলা তার মুদ্রাদোষ।
ভেজিটেবল রোল খেতে খেতে মাকে টেলিফোন করলাম। মা তাঁর স্বভাব মতো উল্লসিত গলা বের করলেন, মৃ তুই বিশ্বাস করবি না এক মিনিট আগে। মনে হলো তোর টেলিফোন আসছে। আমার মোবাইলের ব্যাটারি শেষ হয়ে আসছে। মোবাইল অফ ছিল। এক মিনিট আগে অন করেছি। কারণ আমি নিশ্চিত তুই টেলিফোন কবি। টেলিপ্যাথির কথা অনেক শুনেছি এই প্রথম নিজের চোখে দেখলাম। কী যে অবাক হয়েছি। এখনো গায়ের সব লোম খাড়া হয়ে আছে। তোর সঙ্গে গাড়ি আছে না? তুই এক কাজ কর গাড়ি নিয়ে হুট করে চলে আয়–আমার গায়ের নোম যে খাড়া হয়ে আছেনিজের চোখে দেখে যা। আসতে পারবি?
না আসতে পারব না। তোমার মোবাইলের ব্যাটারি শেষ হয়ে যাচ্ছে আমি কাজের কথা সেরে নেই।
বল তোর কাজের কথা দাঁড়া এক সেকেন্ড তোর কাজের কথার আগে আমি আমার নিজের কথা বলে নেই, পরে ভুলে যাব। আমার বেলায় এটা খুব বেশি হয়। সময় মতো কথা বলা হয় না বলে কখনোই বলা হয় না। কথাটা হলো– আমি মোজা বানাতে পারে এমন একজনের সন্ধান পেয়েছি, তিনি আমাকে মোজা বানানো শিখিয়ে দেবেন। তিনি পায়ের মোজা বানাতে পারেন আবার হাত মোজাও বানাতে পারেন।
ভালো তো।
কোন মোজাটা বানাব সেটা বুঝতে পারছি না। স্ক্রীপ্টে কিছু লেখা নেই। তোর কী মনে হয়?
ডিরেক্টর সাহেবকে জিজ্ঞেস করে জেনে নাও।
প্রতি দশ মিনিট পরপর তাঁকে টেলিফোন করছি। রিং হচ্ছে কিন্তু কেউ ধরছে না।
মা তোমার কথা কি শেষ হয়েছে? আমি কি আমার কথাটা বলতে পারি?
তোর ষাট হাজার টাকা দরকার এই তো কথা?
জাননা কীভাবে?
তোর বাবা টেলিফোন করে আমাকে জানিয়েছে যেন আমি টাকাটা না দেই।
ও আচ্ছা।
মৃ শোন উলের মোজা সাধারণত কোন কালারের হয় বল তো?
মা আমি জানি না কোন কালারের হয়। আমি নিজে কখনো উলের মোজা পরি না।
তুইও পরেছিস। জানুয়ারির সাত তারিখ তোর জন্ম। প্রচণ্ড শীত। তোর হাতে পায়ে উলের মোজা পরিয়ে রাখতাম। ছবিও তোলা আছে।
মা এখন রাখি।
রাখতে হবে না। আমার মোবাইলের ব্যাটারি একদম শেষ পর্যায়ে। এক্ষুণি বন্ধ হয়ে যাবে। পিক পিক শব্দ হচ্ছে শুনতে পাচ্ছি না?
পাচ্ছি।
আয় আমরা কথা বলতে থাকি। ব্যাটারিও শেষ। আমাদের কথাও শেষ।
বেশ কথা বলে।
তুই এমন রাগী রাগী গলা করে রাখলে কথা বলব কী? খেয়াল রাখবি একে তো আমি মা, তার ওপর বয়সে বড়। হি হি হি।
শুধু শুধু হাসছ কেন?
এত সুন্দর একটা ডায়ালগ বলেছি এই আনন্দে হাসছি। একে তো আমি মা, তার ওপর বয়সে বড়। আমার নিজের কথা না। এত গুছিয়ে কথা বলব এমন বুদ্ধি আমার নেই। পরশুরামের ডায়ালগ। আমি কী করি জানিস নানান জায়গা থেকে ইন্টারেস্টিং ডায়ালগ মুখস্ত করে রাখি সময় বুঝে ব্যবহার করি।
ভালো। মৃ, এক্ষুণি ব্যাটারি চলে যাবে। টা টা বাই বাই বলে দে।
মা শোনো, আহ্লাদী করতে একটুও ইচ্ছা হচ্ছে না। আমার প্রচণ্ড মন খারাপ, শরীরও খারাপ সব মিলিয়ে কেমন এলোমেলো লাগছে।