সহজভাবে কিছুক্ষণ কথা বলো প্লিজ।
আমি সহজভাবেই কথা বলছি।
তোমার সঙ্গে কিছুক্ষণ গল্প করতে ইচ্ছা করছে।
গল্প করুন। কোন বিষয় নিয়ে তোমার গল্প করতে ভালো লাগে? সে বিষয়টা বলে।
যে-কোনো বিষয় নিয়ে গল্প করতে পারেন? পৃথিবীর সব বিষয় আপনি জানেন?
গল্প চালিয়ে যাবার জন্যে গভীর জ্ঞান লাগে না। যারা ভাসা ভাসা জানে তারাই সুন্দর গল্প করতে পারে। জ্ঞানীরা ঝিম ধরে বসে থাকেন, তারা গল্প। করতে পারেন না। আমি জ্ঞানী না। নিজের বিষয় কিছুটা জানি। এর বাইরে প্রায় কিছুই জানি না। জানি না বলেই ভালো গল্প করতে পারি। আমার কথা শুনে মনে হচ্ছে না আমি ভালো গল্প করি।
হ্যাঁ মনে হচ্ছে।
তুমি কি আমার বিষয়ে কিছু জানতে চাও?
না তো!
জানতে চাইলে বলতে পারি। আমার বাবা মা, ভাই বোন—তারা কোথায় থাকে। তারা পড়াশোনা কোথায় করেছে। জানতে চাও না?
না।
আমার নিজের থেকেই তোমাকে কিছু বলতে ইচ্ছা করছে। আমার এমন কিছু বিষয় আছে যা শুনলে তুমি চমকে উঠবে।
মানুষকে আপনি খুব চমকাতে পছন্দ করেন তাই না?
তা করি। তবে আমার নিজের সম্পর্কে জেনে তুমি যে চমকটা খাবে সেটা রিয়েল। বাকিগুলি ফেব্রিকেটেড চমক। কষ্ট করে তৈরি করা। চমকে দেব?
দিন।
আমি রং নিয়ে তোমার সঙ্গে কথা বলেছিলাম মনে আছে তো? আমি যখন স্থাপত্য বিষয়ের আন্ডার গ্রাজুয়েট স্টুডেন্ট তখন রঙের ব্যাপারটা মাথার মধ্যে ঢুকে। আমাদের একজন টিচার ছিলেন, নাম জন রে জুনিয়র, উনিই ঢুকিয়ে দেন। ক্লাসে বক্তৃতা দিতে গিয়ে বলেন, সাতটা রঙের বাইরেও যে আরো অসংখ্য রং আছে তা বুঝতে পারার কিছু পদ্ধতি আছে। ড্রাগ নেয়া হলো তার একটি। কিছু কিছু ড্রাগ আছে যা রক্তে মিশলে মস্তিষ্ক উত্তেজিত হয়, যে সব রং পৃথিবীতে নেই সেইসব রং দেখা যায়। তিনি কিছু কিছু ড্রাগের নামও বললেন–তার একটি হচ্ছে LSD. তুমি LSD-এর নাম শুনেছ?
হ্যাঁ শুনেছি।
স্যারের কথা কতটুকু সত্যি তা পরীক্ষা করতে গিয়ে আমি LSD নিলাম।
রং দেখতে পেলেন।
হ্যাঁ পেলাম। সে এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা। আমার ভুবন রঙে রঙময় হয়ে গেল। রঙের কোনো শেড না— Pure colour. আমি বর্ণনা করতে পারব না, বা এঁকেও দেখাতে পারব না কারণ এই রঙগুলি পৃথিবীতে নেই। মৃন্ময়ী তুমি কি আমার কথা মন দিয়ে শুনছ?
হ্যাঁ শুনছি।
অভিজ্ঞতাটা আমার জন্যে এতই অসাধারণ ছিল যে আমার নিজের ভুবন এলোমেলো হয়ে গেল। একের পর এক LSD TRIP নিতে থাকলাম। এক সময় পুরোপুরি অসুস্থ হয়ে পড়লাম। আমাকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হলো। দীর্ঘ দিন চিকিৎসা করে সুস্থ হতে হলো।
এখন আপনি সুস্থ?
না এখনো ঠিক সুস্থ না। হঠাৎ হঠাৎ মাথার ভেতর রঙগুলি উঠে আসে। আমার চারপাশের পৃথিবী Unreal হয়ে যায়। আমি প্রবল ঘোরের মধ্যে চলে যাই। উদাহরণ দিয়ে বলি– মনে করে আমি কৃষ্ণচূড়া গাছের দিকে তাকিয়ে আছি। লাল ফুল। পেছনে ঘন নীল আকাশ। হঠাৎ ফুলের লাল রঙটা কয়েকটা ভাগে ভাগ হয়ে গেল। আকাশের নীল রঙও বদলে গেল। রঙগুলিতে প্রাণ প্রতিষ্ঠা হলো। ওরা হয়ে গেল জীবন্ত। ওরা নিঃশ্বাস নিচ্ছে, নিঃশ্বাস ফেলছে, ছটফট করছে। কখনো কাঁদছে, কখনো রং হাসছে। বুঝতে পারছ কী বলছি?
মনে হয় পারছি।
এই ব্যাপারগুলি ঘটে যখন খুব পছন্দের কেউ আশেপাশে থাকে। Sentimental friend type কেউ। আমি যখন ফুচকা খাচ্ছিলাম তুমি ছেলেটার সঙ্গে গল্প করতে গেলে। আমি তাকালাম কৃষ্ণচূড়া ফুলের দিকে, তখন ব্যাপারটা ঘটল। সবকিছু এলোমেলো হয়ে গেল।
আপনি কি এখনো LSD নেন?
না। এখন আর নেয়ার দরকার পড়ে না।
আপনার কাছে কি LSD আছে?
হ্যাঁ আছে। কেন, তুমি কি একটা LSD ট্রিপ নিয়ে দেখতে চাও– রং ব্যাপারটা আসলে কী?
আমি বললাম, ঠিক বুঝতে পারছি না।
অভিজ্ঞতার জন্যে একবার নিয়ে দেখতে পারো। তবে না নেয়াই ভালো। রঙের আসল রূপ দেখে ফেললে সাধারণ পৃথিবীর রং আর ভালো লাগবে না। পৃথিবীটাকে খুবই সাধারণ খুবই পাশে মনে হবে। প্রায়ই মনে হবে দূর ছাই এই পৃথিবীতে থেকে কী হবে? যারা LSD নেয় তাদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা এই কারণেই খুব বেশি। অনেকক্ষণ তোমার সঙ্গে কথা বললাম, ঘুমাও।
এই বলেই স্যার খট করে টেলিফোন নামিয়ে রাখলেন। তার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই মা ঘরে ঢুকলেন। মার হাতে চায়ের বিরাট মগ। রাতে ঘুমুতে যাবার আগে তিনি প্রায় এক বালতি গ্রিন টি খান। তার ডায়েটিশিয়ান বান্ধবী তাকে বলেছেন ঘুমুতে যাবার আগে প্রচুর গ্রিন টি খেতে। গ্রিন টিতে আছে এন্টি অক্সিডেন্ট। এবং ন্যাচারাল ভিটামিন ই।
মা হাসিমুখে খাটে বসতে বসতে বললেন, তোর কি শুভর সঙ্গে দেখা হয়েছে?
আমি কোনো জবাব দিলাম না।
মা বললেন, আমার দেখা হয়েছে। আমি কথা বলেছি। আমাকে দেখে ঝাপ। দিয়ে এসে কদমবুসি করে ফেলল। আমি বললাম, কেমন আছ? সে অন্যদিকে তাকিয়ে বলল, ভালো। এরপর বেশ কিছু সময় ছিলাম। অনেক কথা বলেছি। সে জবাব দিয়েছে, একবারও আমার দিকে তাকায় নি।
এইসব আমাকে শুনাচ্ছি কেন?
মজার ঘটনা এই জন্যে শুনাচ্ছি। তারপর আমি বললাম, পড়াশোনা কী করেছ? সে বলল বিএ পরীক্ষা দিয়েছি, পাস করতে পারব না। আমি বললাম, এই প্রথমবার দিলে? সে বলল, জ্বি না, আগেও দুইবার দিয়েছি।
মা শরীর দুলিয়ে হাসতে লাগলেন। আমি বললাম, হাসির কিছু হয় নি মা। সে সত্যি কথা বলেছে। লুকায় নি। কেউ সত্যি কথা বললে তাকে নিয়ে হাসাহাসি করা যায় না।