MR IN MOYE
তাতে লাভ কি কিছু হয়? নামের আগে MR চলে আসে এইটুকু লাভ।
ভদ্রলোকের বয়স কত হবে? পঁয়ত্রিশ কিংবা তারচেয়ে কম। পাঁচমিশালী রঙে ভর্তি শার্ট পরে আছেন। ডান হাতে লাল রঙের ব্যান্ড জাতীয় কিছু। পাংকু বলতে পারলে ভালো হতো। তা বলা যাবে না। ভদ্রলোকের Ph.D ডিগ্রি আছে। আমাদেরকে জানানো হয়েছে–অসম্ভব মেধাবী একজন টিচার জয়েন করছেন। তিনি ডিজাইন ক্লাস নেবেন। বড়লোকের ফেলটুস ছেলে হাতে লাল ব্যান্ড পরলে পাংকু হয়ে যায়, কিন্তু Ph.D ওয়ালা অসম্ভব মেধাবী কেউ কি তা হন? সহজ সাধারণ কিছু পরে থাকলে তাকে অনেক সুন্দর লাগত। আমার ধারণা ভদ্ৰলোক যদি কালো প্যান্টের ওপর হালকা হলুদ পাঞ্জাবি পরতেন তাঁকে অনেক বেশি মানাত।
ফরিদা ফিসফিস করে বলল, এই লোক না-কি দারুণ বিলিয়ন্ট। আমেরিকান ইউনিভার্সিটি থেকে রেকর্ড নাম্বার পেয়ে পাস করেছে। কিন্তু নিজের নাম নিয়ে কী ছাগলামি করছে দেখেছি। আমাদের স্কুলের ছাত্র ভাবছে। কি-না কে জানে। যখন ধরা খাবে তখন টের পাবে।
ভদ্রলোক ফরিদার দিকে তাকিয়ে বলবেন তুমি মনে হয় আমাকে নিয়ে মাছ মাছ করছ।
ফরিদা মুখ শুকনা করে বলল, মাছ মাছ করছি মানে কী স্যার?
মাছ মাছ মানে Fish Fish. তুমি আমাকে নিয়ে ফিসফিস করছ। যাই হোক ভালো করে লক্ষ কর
আমার নামের মধ্যেই Sir আছে। নামের শুরুতে একটি নিরীহ প্রাণী আছে। আমি নিজেও ঐ প্রাণীটির মতোই নিরীহ। আমি যতদূর জানি আজ তোমাদের একটা প্রজেক্ট জমা দেবার কথা। টেবিল ল্যাম্প। তোমরা প্রজেক্ট এনেছ?
ফরিদা বলল, আমি ছাড়া সবাই এনেছে।
তুমি আনো নি কেন?
আমি কখনোই সময় মতো কোনো প্রজেক্ট জমা দিতে পারি না।
কোনো সমস্যা নেই। তোমার যখন প্রজেক্ট জমা দিতে ইচ্ছা করবে জমা দেবে। এতে নাম্বার কাটা যাবে না। আমার ক্লাসে নাম্বার কাটা যাবার কোনো সিস্টেম নেই। আর আমার ক্লাসে দাঁড়িয়ে প্রশ্নের জবাব দেবার কিছু নেই।
প্রজেক্ট জমা নেওয়া শুরু করার আগে কিছুক্ষণ গল্প করলে কেমন হয়?
ফরিদা বলল, ভালো হয় স্যার।
কাওসার বলল, একটু আগেই বলেছি আমাকে স্যার ডাকা যাবে না। আমি প্রশ্নটা আবার করছি—প্রজেক্ট জমা নেওয়া শুরু করার আগে কিছুক্ষণ গল্প করলে কেমন হয়?
ফরিদা বলল, ভালো হয় ভাইয়া।
আমরা সবাই হেসে উঠলাম। আমার মনে হচ্ছে এই ভদ্রলোক নিজেকে ইন্টারেস্টিং করার প্রাণপণ চেষ্টা করছেন। এক্ষুণি হয়তো পকেট থেকে কয়েন বের করে কয়েন ভ্যানিসের একটা ম্যাজিক দেখাবেন। ক্লাসের ফাঁকে ফাঁকে জোক বলে সবাইকে হাসাবেন। কিছু জোক থাকবে মোটামুটি অশ্লীল। এবং তিনি যে মহাজ্ঞানী এই ব্যাপারটা বোঝানোর জন্যে কঠিন কঠিন সব তত্ত্ব কথা বলবেন। সদ্য আমেরিকা ফেরত শিক্ষকরা আমেরিকান শিক্ষকদের কাছ থেকে অনেক ফাজলামি শিখে আসে। সেই জিনিস যে বাংলাদেশে চলে না তা বুঝতে পারে না। কিছুদিন আমেরিকান ফাজলামি করে ঠাণ্ডা হয়ে যায়। আমি নিশ্চিত এই জ্বলোক দুতিন মাসের মধ্যেই বদলাবেন এবং সময়মতো প্রজেক্ট জমা না দেয়ার জন্যে নাম্বার কাটা শুরু করবেন।
আচ্ছা বলো, সুন্দর ব্যাপারটা কী? কিছু কিছু বস্তু দেখে আমরা বলি সুন্দর। কেন বলি? এই ছেলে নারিকেলের মালা দিয়ে একটা টেবিল ল্যাম্প বানিয়েছে। আমরা বললাম— সুন্দর হয়েছে। কেন বললাম!
কেউ জবাব দিল না। ভদ্রলোক বললেন, সুন্দর অসুন্দরের প্রভেদটা আমরা কীভাবে করি?
এবারও সবাই চুপ করে রইল। ভদ্রলোক তিনটা ফুলস্কেপ কাগজ দিয়ে দলা পাকিয়ে তিনটা বলের মতো বানালেন। তিনটা তিন ধরনের বল। তারপর বললেন, টেবিলের ওপর তিনটা বল দেখতে পাচ্ছ। তিনটা বলের মধ্যে একটা অনেক সুন্দর লাগছে। বলো দেখি কোনটা?
বেশ কয়েকজন ছাত্র এক সঙ্গে বলল, মাঝেরটা।
দ্ৰলোক বললেন, এখন দেখ কী করি বলগুলোর ওপর আমি আলো ফেলব। আলো এমনভাবে ফেলা হবে যে মাঝের বলটা আর সুন্দর লাগবে না।
আমি অবাক হয়েই দেখলাম ভদ্রলোকের কথা ভুল না। মাঝখানের বলটা এখন আর সুন্দর লাগছে না, বরং প্রথম বলটা সুন্দর লাগছে।
ভদ্রলোক মাথার চুল ঝাঁকিয়ে বললেন, এখন বলো দেখি সুন্দর কী? Define beauty. মৃন্ময়ী তুমি বলো সুন্দর কী?
আমি চুপ করে আছি। সুন্দর অসুন্দরের কচকচানিতে যেতে চাচ্ছি না। তাছাড়া আমার মোবাইল বাজতে শুরু করেছে। মা টেলিফোন করেছেন। হয়তো শাড়ি বিষয়ক কিছু বলবেন। সিল্ক এগজিবিশনে মা যাবেন না তা হবে না। আমি মোবাইল অফ করে দিলাম।
মৃন্ময়ী চুপ করে আছ কেন? বলো সুন্দর কী? উঠে দাঁড়াতে হবে না। বসে বসে বলো। মোবাইলে মনে হয় কেউ একজন তোমাকে ফোন করেছে। নাম্বারটা দেখে রাখ। আমার প্রশ্নের জবাব দিয়ে কল ব্যাক করো।
আমি বললাম, যা দেখতে ভালো লাগে তাই সুন্দর।
তুমি বলতে চাচ্ছ যা দেখে চোখ আরাম পায় তাই সুন্দর?
জ্বি।
তার মানে হলো চোখ সব সময় আরাম পায় না। সব সময় একটা কষ্টের মধ্যে থাকে। মাঝে মাঝে সে আরাম পায়। যা দেখে সে আরাম পায় তাকে বুলি সুন্দর। এই তো?
আমি বুঝতে পারছি না একটু কনফিউজড বোধ করছি।
কনফিউজড বোধ করলে লজ্জা পাবার কিছু নেই। সৌন্দর্যের ব্যাখ্যার ব্যাপারে অনেক বিখ্যাত মানুষই কনফিউজড বোধ করেছেন। নোবেল পুরস্কার পাবার পর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর গিয়েছিলেন আইনস্টাইনের সঙ্গে দেখা করার জন্যে। আইনস্টাইন হঠাৎ করে তাঁকে প্রশ্ন করলেন, সৌন্দর্যের ব্যাখ্যা কী? রবীন্দ্রনাথকে থমকে যেতে হয়েছিল। যাই হোক, মৃন্ময়ী সৌন্দর্যের ব্যাখ্যা দিতে পারছে না।