মৃন্ময়ী বলল, দাদাজান আমি যদি গান শুনতে শুনতে বই পড়ি তোমার মাছ মারায় অসুবিধা হবে?
না। গানের যন্ত্র এনেছিস?
নিয়ে আসব।
ম্যানেজারকে বলে দেই, সে নিয়ে আসুক।
উনি কোন গান আনতে হবে বুঝবেন না। দাদাজান তুমি গান পছন্দ কর না?
না।
বই পড়তে পছন্দ কর?
না।
ছবি দেখতেও পছন্দ কর না?
না।
পছন্দ না করলেও আজ রাতে তোমাকে নিয়ে একটা ছবি দেখব। আমার একা একা ছবি দেখতে ভালো লাগে না।
আলিমুর রহমান বললেন, তোর কি কোনো ছেলের সঙ্গে ভাব-ভালোবাসা হয়েছে?
না।
যদি কাউকে মনে ধরে আমারএখানে নিয়ে আসবি। আমি পরীক্ষা করে দেখব বুদ্ধিশুদ্ধি আছে কি-না।
বুদ্ধি দিয়ে কী হবে? হাসবেন্ড হিসেবে বোকাই ভালো।
কখনও কোনো বোকার ধারেকাছে যাবি না।
আচ্ছা যাব না। দাদাজান! শুনো আমি কিছুক্ষণ ঘুমাব। তোমার বরশিতে যদি বড় কোনো মাছ ধরা পড়ে আমাকে ডেকে তুলবে। আমি সূতা ছাড়ব।
আচ্ছা ঠিক আছে। তোর কি ক্ষিধে লেগেছে? কিছু খাবি।
ক্ষিধে লেগেছে কিন্তু আমি কিছু খাব না। আচ্ছা দাদাজান তোমার তো প্রচুর টাকা। কি করবে এত টাকা দিয়ে।
তুই চাইলে তোকে দিয়ে দিব। তুই চাস?
না। কখনও না।
তুই একটা বুদ্ধি বের কর, বিলি-ব্যবস্থা কি করা যায়।
হাসপাতাল বানাবে?
হাসপাতাল বানাতে যাব কোন দুঃখে?
অনাথ আশ্রম?
ভুলে যা। দুনিয়ার অনাথ এক জায়গায় এনে তাদের ক্যাঁচক্যাচানি শোনার আমার কোনো শখ নেই।
ইউনিভার্সিটি বানাবে। প্রকৃতির সঙ্গে মিলিয়ে ইউনিভার্সিটি।
আমি কি রবীন্দ্রনাথ যে শান্তি নিকেতন বানাব?
তাহলে কি করা যায়। ভালো সমস্যা হলো তো।
চিন্তা করে বের কর। আমিও চিন্তা করে কিছু পাচ্ছি না।
দাদাজান তোমার টাকা এবং সম্পত্তি সব একত্র করলে কত টাকা হবে?
জানি না কত হবে।
আনুমানিক কত হবে বল, ১৭ কোটি কি হবে?
হবে।
তাহলে এক কাজ কর। বাংলাদেশের সব মানুষের মধ্যে সমানভাবে এই টাকাটা ভাগ করে দাও। সবাই এক টাকা করে পাবে।
আলিমুর রহমান হো হো করে হেসে উঠলেন।
এত আনন্দ নিয়ে তিনি অনেকদিন হাসেন নি।
মৃন্ময়ী বলল, তোমার হাসির শব্দে সব মাছ তো পালিয়ে যাবে।
আলিমুর রহমান আরো শব্দ করে হেসে উঠলেন।
ট্রেতে করে চা নিয়ে খামার বাড়ির ম্যানেজার এসেছে। ম্যানেজারের নাম কালাম। কালাম করিকর্মা লোক। কিন্তু বড় সাহেবের সামনে এসে দাঁড়ালে তার সবকিছু এলোমেলো হয়ে যায়। বুক ধড়ফড় করতে থাকে। বড় সাহেবের সব কথাও তখন ঠিকমতো কানে ঢুকে না। তার প্রায়ই মনে হয় এই চাকরি ছেড়ে সে অন্য কোনো চাকরিতে ঢুকবে। চব্বিশ ঘণ্টা আতঙ্কের মধ্যে বাস করার কোনো অর্থ হয় না।
কালাম বলল, স্যার আপনার কাছে একজন আর্টিস্ট এসেছে।
আলিমুর রহমান বললেন, আমার কাছে আর্টিস্ট আসবে কেন?
ঢাকা থেকে ছোট সাহেব পাঠিয়েছেন। আর্টিস্ট আপনার ছবি আঁকবে।
আলিমুর রহমান বললেন, তাকে ঘাড় ধরে বিদায় করে দাও।
কালাম বলল, জি আচ্ছা স্যার।
হাসিমুখে বিদায় করবে না। গলা ধাক্কা দিয়ে বিদায় করবে। এমনভাবে ধাক্কা দিবে যেন পা ঢেগায়ে উল্টে পড়ে।
জি আচ্ছা স্যার।
মৃন্ময়ী বলল, দাদাজান তুমি বাবার উপর রাগ করে অন্য একজনকে গলা ধাক্কা দিতে পার না। আর্টিস্টের তো কোনো দোষ নেই। বাবা তাকে পাঠিয়েছে তিনি এসেছেন। তুমি যদি ছবি আঁকাতে না চাও বলবে ছবি আঁকাব না। তাকে ভদ্রভাবে চলে যেতে বলবে।
আলিমুর রহমান কালামের দিকে তাকিয়ে বললেন, তাকে ভদ্রভাবে চলে যেতে বল।
কালাম ঘাড় কাত করে সঙ্গে সঙ্গে বলল, জি আচ্ছা স্যার।
মৃন্ময়ী বলল, ভর দুপুরে একজন এত দূর এসেছে, তাকে না খাইয়ে বিদায় করে দেওয়াও ঠিক না।
আলিমুর রহমান বললেন, কালাম তাকে ভাত খাইয়ে তারপর বিদায় কর।
কালাম আবারও ঘাড় নেড়ে বলল, কি আচ্ছা স্যার।
কালামের বুকে ব্যথা শুরু হয়েছে। বেশিক্ষণ এখানে থাকলে ব্যথা বাড়বে। সে দ্রুত হাঁটা ধরল।
আলিমুর রহমানের ছিপে মাছ বেঁধেছে। সূতার টান থেকে বুঝা যাচ্ছে তিন থেকে চার কেজি হবে। এরচেয়ে বড়ও হতে পারে। ঠিকমতো সূতা ছাড়তে না পারলে মাছ রাখা যাবে না।
আলিমুর রহমান চেঁচিয়ে বললেন, মৃন্ময়ী ছিপ ধর।
আলিমুর রহমান হাপাচ্ছেন। আনন্দে ও উত্তেজনায় তার চোখ-মুখ ঝলমল করছে। মৃন্ময়ী বলল, তিমিমাছ নাকি দাদাজান! মাছের এত শক্তি!
আলিমুর রহমান বললেন, খুব সাবধানে সূতা ছাড়। মাছ কিন্তু হ্যাচকা টান দিয়ে তোকে পানিতে ফেলতে পারে।
মৃন্ময়ী বলল, দাদাজান তুমি ছিপটা ছেড়ে দিলে কি মনে করে। আমি একা পারব না কি, তুমিও ধর।
আলিমুর রহমান বলেন, গাধা কালামটা আবার গেল কোথায়? থাপড়ায়ে এর দাঁত যদি আমি না ফেলি।
মাছের প্রবল টানে মৃন্ময়ী ঝুপ করে পানিতে পড়ে গেল।
আলিমুর রহমান বললেন, ছিপ ছাড়বি না। ছিপ ধরে থাক।
মৃন্ময়ী এক হাতে ছিপ উঁচু করে রেখে সাতরাচ্ছে। কী সুন্দর দৃশ্য! আলিমুর রহমানের কাছে মনে হলো তিনি এত মধুর দৃশ্য তার জীবনে আর দেখেন নি।
মাছ ডাঙ্গায় তোলার পর ওজন দেয়া হলো। কাতল মাছ। ওজন পাঁচ কেজি তিনশ গ্রাম। মৃন্ময়ী বলল, দাদাজান মাথাটা আমি খাব।
আলিযুর রহমান বললেন, ভাগাভাগি করে খাই। দুজনে মিলে ধরলাম না?
জহির অবাক হয়ে বলল, আপনি এখানে?
মৃন্ময়ী বলল, এত অবাক হচ্ছেন কেন? এটা আমার দাদার খামারবাড়ি। আমি তো এখানে থাকতেই পারি। বরং আমার উচিত আপনাকে দেখে অবাক হওয়া। আমি অবশ্যি সে রকম অবাক হচ্ছি না।