ও আচ্ছা আচ্ছা।
সিদ্দিক সাহেবের বেশ মন খারা হয়ে গেল। সুন্দর সুন্দর মেয়েগুলিকে নিয়ে কোথাকার কোন বিদেশী ঘুরে বেড়াচ্ছে অথচ তিনি নিজে গায়ে হাত রাখার মত সাহস সঞ্চয় করতে পারেননি। কোনো মানে হয় না।
সব দিকেই তার সাহস আছে এই একটা দিকে শুধু সাহস হচ্ছে না। তার ধারণা মেয়েগুলি অতিরিক্ত সুন্দরী বলেই সাহস হয় না। তেমন সুন্দরী মেয়েদের সঙ্গে মেলামেশার সুযোগ তার হয়নি। আর এই তিনটি মেয়ে দেখতে পরীর মতো। হারামজাদি বুড়ি এদের কোথেকে জোগাড় করেছে কে জানে?
স্যার বসবেন না?
না না বসব না। কোন রকম ঝামেলা-টামেলা আছে?
জি না শুধু বাকের মাঝে-মধ্যে…
কি করে সে?
কিছু না গেটের সামনে দাঁড়ায়ে থাকে সিগারেট খায়। আফারা ভয় পায়।
অন্য কিছু করে না?
জি না।
বাকেরের সাথে আর কেউ আসে?
জি না। উনি একা।
আচ্ছা আমি দেখব। ব্যাপারটা।
আম্মা বলছিল বাকেরকে মাসে মাসে হাতখরচের টাকা কিছু দিবে। কিনা আপনার সঙ্গে আলাপ করতে বলছিল।
হাতখরচ দিতে হবে না। ঐটা আমি দেখব। এই পাড়ার কেউ আসে এই বাড়িতে?
জি না।
কেউ কিছু জিজ্ঞেস করে?
জি না।
ঠিক আছে। তারা কবে কক্সবাজার থেকে আসবে কিছু জান না?
জি না।
আসলেই খবর দিবে।
আমি আম্মারে টেলিফোন করতে বলব।
টেলিফোন এসেছে নাকি?
টেলিফোন তো কবেই আসছে।
সিদ্দিক সাহেবের ভ্রূ কুঞ্চিত হল। টেলিফোন এসেছে অথচ টেলিফোনের খবর তাকে জানানো হয়নি। নম্বর পর্যন্ত দেয়নি। এর মানে হচ্ছে এরা তাকে খুব মুরুকিব ধরছে না। তার চেয়েও অনেক বড় মুরুব্বি এদের আছে। কে সেই বড় মুরুব্বি?
তিনি জলিল মিয়াকে ডেকে পাঠালেন। কাস্টমারের যন্ত্রণায় জলিল মিয়ার দম ফেলার ফুরসূত হয় না–এর মধ্যে কেউ ডেকে পাঠালে মেজাজ খিচড়ে যায়। মুখের ওপর বলতে ইচ্ছে করে যা শালা ভাগ। চায়ের দোকানের মালিকের পক্ষে যা কখনো বলা সম্ভব নয়। জলিল মিয়া ক্যাশা অনা একজনকে বুঝিয়ে দোকান থেকে বেরুল। তাকে দেখলে মনে হবে সিদ্দিক সাহেব ডেকে পাঠানোয় সে আনন্দে আত্মহারা।
স্যার ডাকছেন?
কি খবর জলিল?
জি। আপনাদের দশজনের দোয়া।
দোকান তো দেখি ভালই চলছে। সব সময় দেখি কাস্টমার।
আড্ডা দেওউন্যা কাস্টমার স্যার।
চায়ের দোকানে আড্ডাটাই প্রধান। যেখানে যত বেশি আড়ড়া হবে সে দোকান তত তাড়াতাড়ি জমবে।
জলিল মিয়া উসখুস করতে থাকে মূল বিষয়টা জেনে চলে যেতে পারলে বাঁচা যায় ক্যাশে যাকে বসিয়ে এসেছে সে বিরাট চোর। ইতিমধ্যেই টাকা-পয়সা নিশ্চয়ই কিছু সরিয়েছে।
জলিল মিয়া।
জি স্যার।
ঐ যে তোমার দোকানের সামনের বাড়ি, এগার নম্বর বাড়ি। কিছু জানো তুমি?
কী জানব স্যার?
না মানে এই পাড়ার লোকজন কারোর সঙ্গে এ বাড়ির যোগাযোগ আছে?
কিছুই তো স্যার জানি না। আমার স্যার মাথার ঘায়ে কুত্তা পাগল অবস্থা। কাশে বসে নজর রাখতে হয় চাইর দিকে। গতকাল স্যার রান্নাঘর থেকে ডালডার টিন চুরি গেল। চার কেজি ডালডা।
সিদ্দিক সাহেব অপ্রসন্ন মুখে বললেন ঠিক আছে, তুমি যাও। জলিল মিয়া ইতস্তত করতে লাগল। কাউকে অপ্রসন্ন করে চলে যাবার মত মনের জোর তার নেই।
কিছু বলবে?
জি না। তবে স্যার বাকের ভাই কিছু জানলে জানতে পারে।
বাকের জানবে কেন? বাকেরের কি যোগাযোগ আছে?
মনে হয় আছে।
বাকের এখন থাকে কোথায় জান?
জি না।
শুনেছি তার ভাইয়ের বাসায় থাকে না।
আমি বলতে পারি না। স্যার নিজের দোকানের যন্ত্রণায় অস্থির। চোখের সামনে থেকে ডালডার টিন নিয়ে গেল–পাঁচ কেজি ডালডা ছিল।
একটু আগে তো বললে চার কেজি।
জলিল মিয়া হকচাকিয়ে গেল।
ঠিক আছে তুমি যাও।
বাকের ভাইকে কিছু বলতে হবে স্যার?
না কিছু বলতে হবে না।
জলিল মিয়া চিন্তিতমুখে বের হয়ে এল। সবাইকে খুশি রাখা এই দুনিয়ার বিরাট কঠিন কাজ। তবে খুশি রাখতেই হবে। কেউ বোজার হলে দোকানদারি করা যাবে না।
স্যার আমার নাম বাকের
স্যার আমার নাম বাকের।
চিনতে পারছি। কী ব্যাপার?
মঙ্গলবার মঙ্গলবার করে থানায় হাজিরা দিতে বলেছিলেন। তাই এলাম। আজ স্যার মঙ্গলবার।
মাঝখানে তো বেশ কয়েকটা মঙ্গলবার চলে গেল।
ঢাকার বাইরে ছিলাম স্যার। নেত্রকোনা গিয়েছিলাম।
আপনাকে কি হায়ার করে নিয়ে গেল?
কি বললেন বুঝলাম না।
আগে মফস্বলের লোকজন ঢাকা থেকে ফুটবল প্লেয়ার হায়ার করে নিত। আজকাল মাস্তান হায়ার করে। মাস্তানি এখন মোটামুটি লাভজনক ব্যবসা।
আমার ছোটবোনের বিয়ে হয়েছে নেত্রকোনা। দেখতে গিয়েছিলাম।
ভবিষ্যতে ঢাকার বাইরে গেলে আমাদের ইনফরম করে যাবেন।
জি আচ্ছা। এখন কি উঠব?
উঠুন বসে থেকে কি করবেন?
বাকের চেয়ার ছেড়ে উঠতে উঠতে বলল একটা কথা স্যার, যদি কিছু মনে না করেন।
বলে ফেলুন কিছু মনে করব না।
মাঝে মাঝে স্যার মন্ত্রীরা মাস্তান হাযাবি করে নিজেদের জায়গায় নিয়ে যান। গত ইলেকশনের সময় এই অধমকেও একজন নিয়েছিল। এই রকম কেইসে ও কী থানায় খবর দিয়ে তারপর যাব? নাকি সরাসরি চলে গিয়ে কাজকর্ম মিটিয়ে আপনাদের খবর দিব?
ওসি সাহেব কিছু বললেন না। ওসি সাহেবের বা পাশে বসা সেকেন্ড অফিসার উচ্চস্বরে হোসে উঠেই ওসি সাহেবের গম্ভীর মুখ দেখে হাসি গিলে ফেলল। বাকের বলল, স্যার তাহলে উঠি? আগামী মঙ্গলবার ইনশাআল্লাহ দেখা হবে।
ওসি সাহেব কিছু বললেন না। সেকেন্ড অফিসার দ্বিতীয় দফায় হেসে ফেলে আবার গম্ভীর হয়ে গেলেন। ওসি সাহেব বললেন, থানা হাসি-তামাসার জায়গা নয়–এটা মনে রেখে কাজকর্ম করলে ভাল হয়।