বাকের বলল, সিগারেট খাচ্ছিস গন্ধে তোর বউ বুঝে ফেলবে?
বাথরুমে ঢুকে হেভি ওয়াসিং দিব কেউ টের পাবে না। বিয়ে করা বড় যন্ত্রণা রে দোস্ত। ভাল কথা ঐ তিন মেয়েওয়ালা বাড়ির ব্যাপারটার খোঁজ পাওয়া গেছে। তুই যা ভাবছিলি তাই। পাক্কা খবর আছে আমার কাছে।
তাই নাকি?
হাই ক্লাস মেয়েছেলে–শুধু মালদার পার্টির জন্যে। রুই-কাতলাদের জিনিস। তবে দোস্ত একটা রিকোয়েস্ট তুই এদের ঘাটাস না। বিপদে পড়বি।
কি বিপদ?
রুই-কাতলা ঘটালে বিপদ হয় না? পাগলামি করবি না। খবরদার। কাল বলব সব কিছু। সন্ধ্যায় সন্ধ্যায় চলে আসবি।
বাকের ঘড়ি দেখল। মাত্র আটটা দশ। সময় কাটানোই একটা সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বারোটার আগে ঘুম আসে না। বারোটা পর্যন্ত সে করবে কী? মুনার খোঁজে যাওয়াটা খুবই উচিত। মামার কাছে থাকলেও তো মেয়েটা একা। তাছাড়া আপন মামাও নিশ্চয়ই না। আপন মামা হলে ভাগীর খোঁজখবর করত। এর মধ্যে একবারও তো খোঁজ করতে দেখেনি।
এদিকে বকুলদেরও একটা খবর নেয়া দরকার। জহিরের অবস্থাটা কী। এত বড় রুগী গ্রামে নিয়ে ফেলে রেখেছে বেকুবীর চূড়ান্ত করছে। মুনার সঙ্গে কথা বলে আবার ঢাকা আনার ব্যবস্থা করতে হবে। এই কথাটা বলার জন্যেই মুনার কাছে যাওয়া দরকার। অনন্য কিছু না। রাগ করে ঘরে বসে থাকার কোন অর্থ হয় না। রাগ বড় না রুগী বড়?
মুনা খুব সহজ স্বরে বলল, ভেতরে আসুন বাকের ভাই। মুনার গলায় মাফলার জড়ানো। মুখ শুকিয়ে এতটুকু হয়ে গেছে। চোখ ঈষৎ লাল। বাকের চিন্তিত মুখে বলল, অসুখ নাকি?
হ্যাঁ জ্বর। গতকাল মাত্র কমেছে। এখন আবার শরীর খারাপ লাগছে। আবার জ্বর আসবে কী না কে জানে। এ বাড়িতে এসেই জ্বরে পড়লাম। এই জন্যেই আপনাকে খবর দিতে পারিনি। কিছু মনে করবেন না বাকের ভাই।
আরে কি মুশকিল। মনে করার কি আছে?
এ বাড়ির দোতলার একটা ঘরে মুনা থাকে। মুনা বাকেরকে সরাসরি তার ঘরে নিয়ে গেল। ঘরটা বেশ বড়। মুনার যাবতীয় জিনিসপত্র গাদাগাদি করে রাখা। কিছুই গোছানো নেই। বাকের বিস্মিত হয়ে বলল, এই অবস্থা কেন?
টেম্পোরারি থাকার জন্যে আসা তাই কিছুই গুছাইনি। হোস্টেল টোস্টেল কিছু আমার জন্যে পান কী না দেখবেন তো। অবিবাহিত মেয়েদের একা থাকা যে কি সমস্যা।
হুট করে চলে এলে একটা খবর দিলে না।
মামা জোর করে নিয়ে এল। একা একা একটা বাড়িতে থাকি শুনেই মাথা খারাপের মতো হয়ে গেল। আমার নিজেরও ভয় ভয় লাগিছিল। কাজের মেয়েটা চলে গেল তো। বাকের ভাই আপনি দাঁড়িয়ে আছেন কেন বসুন। খাটটায় বসুন। আমি চট করে আসছি।
চা-টা কিছু খাব না কিন্তু।
চা আনছি। আপনাকে বলল কে?
রাড়ি একদম খালি খালি লাগছে। লোকজন নাই।
অনেক লোক। বিয়ের দাওয়াতে গেছে। এগারটার দিকে আসবে।
মুনা নিচে নেমে গেল। বাকের দীর্ঘ সময় একা একা বসে রইল। মেঘ ডাকছে। ঝড়বৃষ্টি শুরু হলে মুশকিল। এতক্ষণ ধরে মুনা নিচে কী করছে কে জানে। একটা সিগারেট খেতে পারলে হত। সিগারেট পকেটে আছে। দেয়াশলাই নেই।
অনেক দেরি করে ফেললাম। তাই না বাকের ভাই?
মুনার হাতে ট্রে। ট্রেতে রাতের খাবার।
এসব কী?
ভাত নিয়ে এসেছি। বসে যান।
আরে কি মুশকিল।
কথা বাড়বেন না তো বসে পড়ুন। আপনার জন্যে আলাদা কিছু করিনি। আমারটাই আপনাকে দিচ্ছি। আমি রাতে কিছু খাব না। জ্বর আসছে।
আবার জ্বর আসছে?
হ্যাঁ আসছে। এই দেখুন কত জ্বর।
মুনা বাকেরকে স্তম্ভিত করে দিয়ে বাকেরের হাত ধরল। সত্যি সত্যি জ্বর এবং অনেক জ্বর। এতটা জ্বর নিয়ে কেউ এমন স্বাভাবিক ভাবে কথা বলছে কী করে কে জানে।
হাত ধরায় লজ্জা পেলেন নাকি বারেক ভাই?
না লজ্জা পাব কেন? জ্বর দেখাবার জন্যে হাত ধরেছি। অন্য কিছু তো না।
মুনা হাসতে হাসতে বলল, তা ঠিক। ভাত নিয়ে বসুন। আপনাকে কেউ তো আদর করে খাওয়ায় না। আদর করে খাইয়ে দি।
বাকেরের চোখ ভিজে উঠল। সে আতংকে কাঠ হয়ে গেল। টপ করে যদি এক ফোঁটা চোখের পানি পড়ে যায় বড় মুশকিল হবে। মুনা দেখে ফেলবে। আর সে যা মেয়ে এই জিনিস দেখলে
বাকের ভাই!
বল।
আপনি কি আমাকে পছন্দ করেন?
বাকেরের অস্বস্তির সীমা রইল না। এইসব আবার কি ধরনের কথা? জ্বরে কি মেয়েটার মাথা খারাপ হয়ে গেল নাকি? ভাত শেষ করে একজন ডাক্তার নিয়ে আসতে হবে। ডিলে করা ঠিক হবে না।
কথা বলছেন না কেন? আমাকে পছন্দ করেন?
কেন করব না। করি। কতটুকু পছন্দ অল্প না অনেকখানি?
জানি।
আমি কিন্তু আপনাকে পছন্দ করি না বাকের ভাই।
জানি।
আপনি একজন অপদাৰ্থ মানুষ। আকাজের মানুষ।
জানি।
জানেন তো নিজেকে বদলান না কেন?
বাকের জবাব না দিয়ে ভাত মাখতে লাগল। সে এখন বেশ আরাম পাচ্ছে। চোখের পানি শুকিয়ে গেছে। এ্যাকসিডেন্ট হবার সম্ভাবনা নেই।
নিজেকে বদলান না কেন?
বদলেছি তো।
কিছুই বদলাননি। আগে যেমন এখনো তেমনি আছেন। ভবঘুরের মতো চলাফেরা, গুণ্ডামি, বড় বড় কথা। এইসব ছাডুন তো।
আচ্ছা ছাড়ব।
আর ছাড়বেন। এই জীবনে ছাড়বেন না; বরং এক কাজ করুন খুব ভাল, খুব লক্ষ্মী এ রকম একটা মেয়েকে বিয়ে করে ফেলুন। তাতে কাজ হতে পারে। মেয়েরা মানুষ বদলাতে ওস্তাদ।
বাকেরের খাওয়া শেষ হয়ে গেছে। তবু থালা হাতে বসে আছে। মুনা তার সামনে। কী সুন্দর সরল মুখ অথচ কি কঠিন একটা মেয়ে।
বাকের ভাই।
উঁ।
কয়েকদিন জ্বরে খুব কষ্ট পেয়েছি। জ্বরের সময় মনে হত আমার মতো একলা এই পৃথিবীতে কেউ নেই। খুব কষ্ট হত।