খুব আধ্যাত্মিক গান।
মামুন জাহানারাদের বাসায় এসে উঠল
ঝড় মাথায় করে মামুন জাহানারাদের বাসায় এসে উঠল। হলুস্থূল কাণ্ড ঘটে যাচ্ছে। চোখের সামনে একটা ইলেকট্রিসিটির পিলার ভেঙে পড়ল। এত পলকা ধরনের পিলার বানায় নাকি আজকাল? ধরক করে আগুন বেবী হয়ে বিকট শব্দ। তার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই জাহানারাদের বাড়ির সামনের কাঠাল গাছের একটা ডাল ভেঙে টিনের চালে পড়ল। আগের বারের চেয়ে ও বিকট শব্দ হল। তারপর শুরু হল শিলাবৃষ্টি। গত পাঁচ বছরে ঢাকা শহরে এ রকম শিল পড়েনি।
জাহানারাদের ঘরে দরজা-জানালা সব বন্ধ। অনেকক্ষণ দরজায ধাক্কাধাব্ধি করার পর ভেতর থেকে জাহানারা ভীতিগলা শোনা গেল কে?
আমি। আমি মামুন।
বিস্মিত জাহানারা দরজা খুলতে খুলতে বলল, আপনি এখানে কী করছেন? আসবার আর সময় পেলেন না?
এ রকম ঝড় হলে বুঝতে পারিনি। টর্নেডো-ফার্নেডো কিনা কে জানে।
টর্নেডো নয় কালবোশেখি। ভেতরে আসুন। দরজা বন্ধ করে দেব।
জাহানারাদের বাড়ির একটা অংশ টিনের চাল। শিলা বৃষ্টির কারণে প্রচণ্ড শব্দ হচ্ছে। একটা ঘরের জানালা খুলে গেছে। সেই জানালা আছড়ে পড়ছে বারবার। জাহানারা বলল, অন্ধকার বাদে থাকুন। আমি আগে ঘর সামলাই। মামুন কৈফিয়তের ভঙ্গিতে বিড়বিড় করে কী যেন বলল, শব্দের কারণে কিছু বোঝা গেল না। ভেতর থেকে জাহানারার মা চেঁচাচ্ছেন–কে এসেছে–কার সঙ্গে কথা বলছিস?
জাহানারা জবাব না দিয়ে ভেতরে চলে গেল। মামুন এই রকম সময়ে চলে আসায় তার একটু লজ্জা লজা করছে। আবার ভালও লাগছে। ঘরে শুধু সে আর মা। অন্যরা ফুপুর বাসায় বেড়াতে গেছে। রাতে থেকে যাবে। এতক্ষণ ভয় ভয় করছিল এখন ভয়ট কমেছে।
জাহানারা কিছুক্ষণ পর আবার এসে ঢুকল। হাসিমুখে বলল, আমাদের ছাদে প্রচুর শিল পড়েছে। শিল কুড়াবেন?
মামুন অবাক হয়ে বলল, শিল কুড়াব কেন? শিল কি আম নাকি?
আমি শিল কুড়াতে যাচ্ছি। আপনি আমার সঙ্গে আসুন তো! একা একা ভয় ভয় লাগছে।
শিল দিয়ে কি করবেন?
কিছু করব না। ছোটবেলায় কুড়াতাম এখন আবার ইচ্ছা করছে।
ঝড় কমুক।
ঝড় কমেছে। শুধু বাতাস দিচ্ছে। আসুন তাড়াতাড়ি, এত অনুরোধ করতে পারব না।
মামুন উঠে দাঁড়াল। আশ্চর্যাকাণ্ড উঠে দাঁড়ানোমাত্র জাহানারা বলল, থাক থাক এমনি বলছিলাম। ঠাট্ট করছিলাম। ঝড়বৃষ্টির মধ্যে ঠাট্টা করতে ভাল লাগে।
তাই নাকি? আমি অবশ্যি জানতাম না। আমি ভেবেছি আপনি বুঝি সত্যি সত্যি.
আমাকে কি আপনার কচি খুকি বলে মনে হয়?
না তা না। তবে আমার বড়রা অনেক সময় ছোটদের মত আচরণ করি।
তা অবশ্যি করি। এখন কি আপনি বড়দের মত একটা আচরণ করবেন? আপনাকে একটা টেলিফোন নম্বর দিচ্ছি। ঐ নম্বরে টেলিফোন করে খোঁজ নিয়ে আসবেন মীরারা ভাল আছে কিনা। মা চিন্তা করছেন। কোন একটা দোকানে বা ফামেসিতে টেলিফোন পাবেন।
নম্বরটা বলুন।
খুব সহজ নম্বর ৪৪২৩৪৫ মনে থাকবে না কাগজে লিখে দেব?
মনে থাকবে।
টেলিফোন করে আসুন তারপর চা খাবেন। নাকি আজও ঐ দিনের মত ভাত খেতে চান?
মামুন বিস্ময় বোধ করছে। জাহানারা কথা বলার ভঙ্গি তার স্বভাবের সঙ্গে মিশ খাচ্ছে না। বড় বেশি তরল গলায় কথা বলছে।
আজ খাবার কিন্তু ঐ দিনের চেয়েও খারাপ। ডিমের তরকারি এবং আলু ভাজা। খেতে পারবেন?
পারব।
জাহানারা হেসে ফেলল। তার হাসিটা খুব সুন্দর। যার হাসি সুন্দর তার কান্না নাকি কুশ্ৰী। জাহানারা কাঁদলে কেমন দেখাবে কে জানে। জাহানারা বলল, এ রকম মুখ গম্ভীর করে কী ভাবছেন?
মামুন বলল, কিছু ভাবছি না। আপনার জন্যে সামান্য একটা উপহার এনেছি। গল্পের বই। আপনার জন্মদিনের উপহার হিসেবে।
জাহানারা অবাক হলে বলল, আজ আমার জন্মদিন আপনাকে কে বলল?
মীরা বলেছিল। গতবার যখন এসেছিলাম। ওকে জিজ্ঞেস করেছিলাম।
ওর কোনো কথা বিশ্বাস করবেন না। আজ হচ্ছে ওর জন্মদিন। ফুপু এই উপলক্ষে তাকে দাওয়াত করেছেন। গল্পের বইয়ে কী আপনি আমার নাম লিখেছেন?
জি না।
তাহলে এটা তাকেই দিন। এখন যান টেলিফোন করে আসুন। নম্বরটা মনে আছে?
জি আছে–৪৪২৩৪৫
আপনার স্মৃতিশক্তি তো চমৎকার।
মামুনের স্মৃতিশক্তি মনে হচ্ছে তেমন ভাল নয়। পানিতে ভিজে, কাদায় মাখামাখি হয়ে সে যখন টেলিফোনের একটা ব্যবস্থা করল তখন দেখা গেল নম্বর মনে নেই। ২৩ এবং ৪৫-এ গণ্ডগোল। কোনটা আগে কোনটা পেছনে কিছু মনে নেই। সব তালগোল পাকিয়ে গেছে।
হাসিনার শরীরটা আজ অন্য দিকে চেয়ে অনেক ভাল। ঝড়বৃষ্টির সময় ছোটাছুটি করে দরজাজানালা বন্ধ করেছেন। অন্য সময় অল্প একটু হাঁটাহাঁটিতেই হাঁপ ধরে যেত। আজ তেমন হচ্ছে না। বরং অনেক দিন পর ঝড়বৃষ্টিটা তাঁর ভালই লাগল।
এখন আর তেমন ভাল লাগছে না। জাহানারা ছেলেটির সঙ্গে খুকিদের গলায় কথা বলছিল। কেন বলছিল? জাহানারা এ রকম করে কখনো কথা বলে না। ছেলেটির সম্পর্কে তার মনে কি আছে তা পরিষ্কার জানা উচিত। জিজ্ঞেস করতে যেন কেমন বাধো বাধো লাগে। মীরা হলে এতক্ষণে হড়বড় করে সব বলে ফেলত।
জাহানারা।
বল মা।
ঐ ছেলে চলে গেছে?
হুঁ আবার আসবে। টেলিফোনে মীরার খোঁজ নেবে তারপর আসবে।
ও।
রাতে এখানে খাবে মা। চট করে কিছু কী করা যায়?
হাসিনা একবার ভাবলেন–বলবেন, রাতে খাবে কেন?
তিনি তা বলতে পারলেন না। শীতল গলায় বললেন, দেখ কিছু আছে কিনা।
রাতে খাবে বলে কি তুমি বিরক্ত হচ্ছে নাকি মা?