এখন ভাতের গন্ধ আর মাছের গন্ধের কথা না হয় বোঝা গেলো, কিন্তু ফুলজানের বেটির মাথার ভেতরে বিজবিজ করে কী? তাহলে এর মাথার এই বিজবিজ আওয়াজ থেকে কথার কুশি বেরুবে, সেটাকে শোলোকে গেঁথে তুলবে কি এই সখিনাই? ভাত খাওয়া ছাড়া ছুঁড়ি আর বোঝে কী? এ কি আর শোলোক গাঁথতে পারবে? কে জানে! কী শোলোক গাঁথবে!
এখন মুনসি নাই, তার পাওনা-শোলকের কোনো টুকরাও কি আর সখিনার মাথায় গুণগুণ করতে পারবে? শোলাক গাথার ক্ষমতাও তো তমিজের বাপের ছিলো না।
এদিকে মোষের দিঘির ওপার থেকে, মনে হয় পাথারের ওপর দিয়ে শোনা যায় হুরমতুল্লার কাশিধসা গলার ডাক, ফুলজান, ও ফুঁ উ উল জা আ ন। ফুলজান একটু চমকে উঠলে তার নজর কাঁপে। দেখা যায়, বিলের ওপর ধীরে ধীরে ওড়ে মণ্ডলবাড়ির শিমুলগাছের বকের ঝাঁক। হেঁসেলের আগুনের ভয়ে তারা ওদিকে ঘেঁষে না। কিন্তু বিলের ওপর দিয়ে তারা আস্তে আস্তে উড়াল দিতে থাকে এপারের দিকে। একটু ঘুরে : এই বুঝি তারা এসে পড়ে মোষের দিঘির ওপর। ভয়ে ফুলজান উঠে দাঁড়ায়, বেটির ঘাড় ধরে ঝাকায়, সখিনা, ও মা, চল। বাড়িত চল।
বকের ঝাঁক হুরমতুল্লার ঝাপসা চোখেও আবছা ছায়া ফেললেও ফেলতে পারে। লালচে কালো কুয়াশা ছুঁয়ে আসে তার ব্যাকুল ডাক, ও ফু উ উ লজা আ আ ন। ফুলজান।
ফুলজান সাড়া দেবে কী করে? মেয়েকে নড়াতে পারে না। মোষের দিঘির উঁচু পাড়ে লম্বা তালগাছের তলায় পুরনো ইটিবির সামনে খটখটে শক্ত মাটিতে পাজোড়া জোরে চেপে রেখে ঘাড়ের রগ টানটান করে মাথা যতোটা পারে উঁচু করে চোখের নজর শানাতে শানাতে সখিনা তাকিয়ে থাকে কাৎলাহার বিলের উত্তর সিথানে জখম চাঁদের নিচে জ্বলতে-থাকা জোনাকির হেঁসেলের দিকে।।