তুমি বলো, আমার ইন্টারেস্টিং কিছু মনে আসছে না। বুবু একটা মিনিট ধরো, আমি লাঠিটা সরিয়ে আসি।
কী লাঠি?
আমার বিছানার কাছে একটা বেতের লাঠি। এখন মনে হচ্ছে লাঠিটা আমার দিকে তাকিয়ে আছে। ভয় ভয় লাগছে।
লাঠি তাকিয়ে থাকবে কিভাবে? লাঠির কি চোখ আছে?
তা জানি না, কিন্তু মনে হচ্ছে তাকিয়ে আছে।
ডাক্তারের দেওয়া ওষুধগুলি কি তুই নিয়মিত খাচ্ছিস?
খাচ্ছি।
তুই এক কাজ কর। আমি সিঙ্গাপুরে যাচ্ছি। আমার সঙ্গে চল। মাউন্ট এলিজাবেথে বড় ডাক্তার দেখাবি।
বুবু আমি লাঠিটা সরিয়ে তারপর কথা বলব। সাবধানে সরাতে হবে। হাত ফসকে লাঠি যদি মেঝেতে পড়ে তাহলে সেটা সাপ হয়ে যাবে।
Oh God. এইসব কী কথাবার্তা! লাঠি মেঝেতে পড়লে সাপ হবে pa?
মুসা আলায়েস সালামের লাঠি মেঝেতে পড়লে সাপ হয়ে যেত।
তুই কি মুসা আলায়েস সালাম?
তা না, তারপরেও কিছু বলা যায় না।
রুস্তম টেলিফোন রেখে লাঠি সরাতে গেল। ফিরে এসে টেলিফোন ধরল না। সামিনা অনেকক্ষণ হ্যালো হ্যালো করে লাইন কেটে দিল।
কড়া ঘুমের ওষুধ খায় বলেই বিছানায় যাওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই রুস্তম ঘুমিয়ে পড়ে। আজ ঘুম আসছে না। সাপের ভয়ের কারণেই মনে হয় ঘুম কেটে গেছে। লাঠিটা সে নিজে কাবার্ডে দাঁড় করিয়ে রেখেছে। পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই। যদি পড়েও যায় কাবার্ড থেকে বের হতে পারবে না। তারপরেও ভয় যাচ্ছে না। কেন কে জানে!
রুস্তম উঠে বসল। বিছানার পাশের লাইট জ্বালাল। হাতের কাছে বেশ কিছু বই সাজানো। বেশিরভাগই ডিকশনারি। তার ডাক্তার বলেছেন, ঘুমের ওষুধ খাওয়ার পরেও যদি ঘুম না নাসে তাহলে চোখের পাতা না ফেলে ডিকশনারি পড়বেন। চোখ ক্লান্ত হবে। ঘুম আসবে। রুস্তম ডিকশনারি খুলল, সাপের প্রতিশব্দ বের করে মুখস্থ করে ফেলাটা একটা কাজের কাজ হবে। একজন লেখকের শব্দভাণ্ডার ভালো হতে হয়।
সাপ, সর্প, অহি, ভুজঙ্গ, ফণী, নাগ, ভুজগ, ভুজঙ্গম, আশীবিষ, উরগ, চক্রী, কুণ্ডলী, বিষধর, অকর্ণ, পল্লগ, কাকাদর, দ্বিরসন, দ্বিজিন, ফণধর, ফলাকার, ফণভুৎ, ফণাভুৎ, বিলশয়, ছকশ্রুতি, বিলেশয়, কাদ্রবেয়, পবনাশন, পবনাশ, উরঞ্চম, ব্যাল, কষ্ণুকী, উরঙ্গ, ভেকভুজ, কম্ভীস্ম, সর্পী, নাগিনী, সর্পিনী, ভুজঙ্গী, ভুজঙ্গিনী, ভুজগী, অহীরণি…
সাপের প্রতিশব্দ একচল্লিশটা পাওয়া গেল। একচল্লিশটা প্রতিশব্দ মুখস্থ করতে করতে রাত চারটা বেজে গেল। এখন ঘুমের চেষ্টা করেও লাভ নেই। রুস্তম বিছানা থেকে নেমে হাত-মুখ ধুয়ে ছাদে হাঁটতে গেল। গোলাম মওলা সাহেব তাকে ছাদে হাঁটতে বলেছেন। হাঁটা এবং ঘুম শরীরের জন্য মহৌষধ। এক ওষুধ কাজে লাগানো গেল না। এখন দ্বিতীয় ওষুধে যদি কিছু হয়। রুস্তম সূর্য না ওঠা পর্যন্ত ছাদে হটল। সাপের প্রতিশব্দ মনে করতে করতে হাঁটা। সাপ, সর্প, অহি, ভুজঙ্গ, ফণী, নাগ, ভুজগ, ভুজঙ্গম…
নাস্তার টেবিলে আর্ট টিচার হোসেন মিয়া উপস্থিত হলো। বিস্মিত গলায় বলল, আপনার চোখ টকটকে লাল। ঘুম হয়নি?
রুস্তম বলল, না। ভয়ে ঘুমাতে পারিনি।
কিসের ভয়?
অহীরণির ভয়।
অহীরণি কী বস্তু?
সাপকে বলে অহীরণি।
সাপকে অহীরণি বলে এই প্রথম শুনলাম। সাপকে সর্প বলে, ভুজঙ্গ বলে, অহীরণি তো কেউ বলে না।
অহীরণি হলো সাপের প্রতিশব্দ। সাপের একচল্লিশটা প্রতিশব্দ আছে। 7615?
না, না। একচল্লিশটা প্রতিশব্দ শোনার কোনো প্রয়োজন নাই। সাপের মতো একটা তুচ্ছ প্রাণীর একচল্লিশটা প্রতিশব্দ থাকারও প্রয়োজন নাই। সাপ এবং সর্প দুটাই যথেষ্ট। গত রাতে আপনি যেমন ঘুমাতে পারেন নাই, আমিও পারি নাই। আপনাকে সাপ ডিসটার্ব করেছে আমাকে মুনিয়া মেয়েটা ডিসটার্ব করেছে। ঘটনা শুনবেন?
রুস্তম হা-না কিছু বলল না, নাস্তা খাওয়া শুরু করল। এই বাড়িতে ত্রিশ দিন একই নাস্তা–চালের আটার রুটি, সবজি, একটা ডিম পোচ।
হোসেন মিয়া বলল, রাত এগারোটার দিকে ঘুমাতে গেছি, দরজায় টোকা। দরজা খুলে দেখি মুনিয়া। একটা নাইট ড্রেস পরে এসেছে। এই ড্রেস থাকা না থাকা সমান। মুনিয়া বলল, সে মডেল হতে রাজি আছে। এক ঘণ্টা সময় দিবে।
আমি বললাম, মুনিয়া আমি দুপুররাতে কাজ করব না। সানলাইটে কাজ করব। সকাল এগারোটার দিকে আসো।
মুনিয়া বলল, আপনি আমাকে মুনিয়া ডাকবেন না। স্যার আমার নতুন নাম দিয়েছেন। ময়ূরী। এখন থেকে ময়ূরী ডাকবেন। একটি সাইকেল।
আমি বললাম, ঠিক আছে ময়ূরী ডাকব। এখন যাও, আমি সব রেডি করে রাখব। ঠিক এগারোটা থেকে বারোটা এই এক ঘণ্টা আমার সেশন। সাজগোজ কিছু করবে না, নো লিপস্টিক, নো মেকাপ।
মুনিয়া বলল, পাঁচশ টাকায় হবে না। ঘণ্টায় দুহাজার দিবেন।
চিন্তা করেছেন অবস্থা! ঘণ্টায় দুই হাজার চায়। মেয়েটা কে বলুন তো?
জানি না কে? কারোর আত্মীয় হবে।
খোঁজ নেবেন। আমার তো তাকে ডেনজারাস মেয়ে বলে মনে হচ্ছে। কোনো একদিন সবাই ঘুমিয়ে থাকব, সে সবার গলা কেটে জিনিসপত্র নিয়ে চলে যাবে।
আমি খোঁজ নেব।
হোসেন মিয়া বলল, আমি তাকে লাস্ট অফার দিয়েছি পার আওয়ার ওয়ান থাউজেন্ড। সে বলেছে চিন্তা করে দেখবে। যদি পুষে তাহলে আসবে। এখানে পুষপুষির কী তাই বুঝলাম না। চেয়ারে এক ঘণ্টা বসে এক হাজার টাকা নট এ মেটার অব জোক।
সকাল সাড়ে দশটা।
হোসেন মিয়া ক্যানভাস গ্লসো দিয়ে রেডি করেছে। চারকোলের পেনসিল কেটে অপেক্ষা করছে। ঘরের আলোর ব্যাপারটা ঠিক করেছে। লাইটের সোর্স পূর্বদিকের জানালা। যে চেয়ারে মুনিয়া বসবে, সেটা রাখা হয়েছে জানালার পাশে। আলো এবং জানালার শিকের ছায়া পড়বে মুনিয়ার গায়ে। লাইট অ্যান্ড শেডের একটা খেলা। এক ঘণ্টায় লাইট অ্যান্ড শেডের অবস্থান বদলাবে। সূর্য তার এক্সিসে আরও ধীরগতিতে ঘুরলে আর্টিস্টদের সুবিধা হতো।