রুস্তম বলল, এই ব্যবসা ভালো হবে।
আমিন বললেন, কী ব্যবসা বলো তো?
জুতার ব্যবসা।
বুঝলে কিভাবে?
মনে হয়েছে।
তুমি তো দিন দিন পীর-ফকিরের পর্যায়ে চলে যাচ্ছ। তোমার কথাবার্তায় মাঝে মধ্যে এমন অবাক হই।
খাওয়া শেষ হওয়ার আগেই হাফিজ মিয়া রসমালাই এবং টকদই নিয়ে উপস্থিত হলো। রাস্তায় বাস এক্সিডেন্টের কারণে চার ঘণ্টা রোড ব্লক ছিল বলে দেরি হয়েছে।
আমিন অত্যন্ত আনন্দিত। রসমালাই শেষ পর্যন্ত এসে পৌঁছেছে। তিনি রুস্তমের বাটিতে রসমালাই এবং দই দিতে দিতে বললেন, তোমার বুবু থাকলে ভালো হতো। কোথায় যেন গেছে। বলেও যায়নি। মোবাইল টেলিফোন করছি, ধরছে না।
রুস্তম স্বাভাবিক গলায় বলল, বুবু পালিয়ে গেছে। আর ফিরবে না।
আমিন হতভম্ব গলায় বললেন, তুমি কী বললে?
রুস্তম বলল, আপনার গায়ে ঘামের গন্ধ। বুবুর পছন্দ না। অনেকে থাকে এ রকম। তারা দুর্গন্ধ সহ্য করতে পারে না।
আমার গায়ে দুর্গন্ধ?
আমি পাই না, বুবু পায়। তার নাক অনেক সেনসেটিভ।
তুমি কি এইসব অনুমানে বলছ, নাকি জেনে বলছ?
জেনে বলছি। আমাকে টেলিফোনে সব বলেছে।
সে এখন আছে কোথায়?
রুস্তম হাই তুলতে তুলতে বলল, আপনি যার কাছ থেকে হংকং শু প্যালেস কিনেছেন, বুবু আছে তার সঙ্গে। আফতাব চৌধুরী। দুলাভাই, একটা পান খাব। ঘরে পান আছে?
পান খাবে?
হুঁ।
পান তো থাকার কথা। তোমার বুবু মাঝে মধ্যে পান খেত। দাঁড়াও দেখি।
আমিন পানের সন্ধানে গেলেন না। বসে রইলেন। রুস্তম বলল, আপনার মন কি বেশি খারাপ হয়েছে?
হুঁ। আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আফতাব চৌধুরীকে খুন করাব। ভাড়াটে খুনি লাগবে।
দোষটা তো বুবুর। খুন করাতে চাইলে বুবুকে খুন করান। আপনার সন্ধানে কি ভাড়াটে খুনি আছে?
না।
আমার সন্ধানে আছে। আপনি চাইলে তাকে আপনার কাছে পাঠাতে পারি।
তোমার সন্ধানে ভাড়াটে খুনি আছে?
বাবার পার্টনার গোলাম মওলা আংকেলের কাছে আছে। উনি মাঝে মধ্যে আমার সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগ করেন। তাকে ভাড়াটে খুনির কথা বললে উনি ব্যবস্থা করে দেবেন।
আমিন কিছু বললেন না। ঝিম ধরে রইলেন। রুস্তম আবারও বলল, দুলাভাই পান খাব।
আমিন মনে হলো শুনতে পাননি। তিনি ছোট্ট নিঃশ্বাস ফেলে বললেন, তোমার স্ত্রীর সঙ্গে কি তোমার দেখা হয়?
না। সে তো এখন আমার স্ত্রী না। তাকে স্ত্রী বলা উচিত না।
তোমার ছেলে কত বড় হয়েছে তুমি জানো?
না।
তোমার স্ত্রী এবং ছেলের সঙ্গে একবার আমার দেখা হয়েছিল। নিউমার্কেটে। তোমার স্ত্রী এমন ভাব করল যেন আমাকে চেনে না। স্ত্রী
জাতিকে কোনো বিশ্বাস নাই। এটা মনে রাখবে।
জি আচ্ছা, মনে রাখব।
খনার বচনে নারী সম্পর্কে অনেক খারাপ খারাপ কথা বলা হয়েছে। খনা মেয়েমানুষ হয়েও বলে গেছেন।
একটা বলুন শুনি।
এখন মনে পড়ছে না। মনে হলে বলব।
জি আচ্ছা।
তোমার ছেলের চেহারা তোমার মতোই হয়েছে। চোখে চশমা। এই বয়সে চোখ নষ্ট করে বসে আছে।
দুলাভাই, আমার ছেলের প্রসঙ্গটা থাকুক। ডাক্তার আমাকে বলেছেন, আমি যেন সবসময় আনন্দে থাকি।
চারদিকে নিরানন্দ, এর মধ্যে আনন্দে থাকা সম্ভব? তোমার এই ডাক্তার কিছু জানে না। ডাক্তার বদলাতে হবে।
দুলাভাই! আপনার মন কি বেশি খারাপ?
হ্যাঁ।
সাইকেলে চড়বেন? সাইকেলে চড়লে মন ভালো হবে।
কে বলেছে? তোমার ডাক্তার?
না। এটা আমি বের করেছি। সাইকেলে চড়লে কেন মন ভালো হয় ব্যাখ্যা করব?
ব্যাখ্যা লাগবে না।
বুবু আপনার জন্য একটা চিঠি লিখে রেখেছে।
কোথায় রেখেছে?
আমার কাছে রেখে গেছে।
কী লিখেছে চিঠিতে?
আমি পড়ি নাই। স্ত্রী চিঠি লিখেছে স্বামীকে, সেই চিঠি পড়া উচিত না।
চিঠি সঙ্গে করে এনেছ?
জি।
আমিন চিঠি পড়লেন। তার মুখ অন্ধকার হয়ে গেল। নিঃশ্বাসেও সামান্য কষ্ট শুরু হলো। চিঠিটা এ রকম—
এই শোনো,
তোমার কাছে লেখা এটা আমার প্রথম চিঠি এবং শেষ চিঠি। যেসব স্বামী-স্ত্রী চব্বিশ ঘণ্টা একসঙ্গে থাকে তারা চিঠি চালাচালি করে না।
এখন আমি তোমাকে ল্যাং মেরে চলে গেছি, কাজেই দুএকটা চিঠি লেখা যেতে পারে। ল্যাং শব্দটা খুবই খারাপ শোনাচ্ছে। এই মুহূর্তে অন্য কোনো শব্দ মাথায় আসছে না। ল্যাং-এর বদলে ইংরেজি Kick ব্যবহার করা যেত। এটা ল্যাংয়ের চেয়েও খারাপ।
ল্যাং শব্দ ব্যবহারের জন্য সরি।
তোমাকে ছেড়ে আসার সাতটা কারণ আমি বের করেছি। প্রধান কারণ তোমার গায়ে পাঠার মতো বোটকা গন্ধ।
অন্য কারণগুলো বলছি—
১. ঘুমালেই নাক ডাকো, মনে হয় প্রেসার কুকার চলছে।
২. তুমি সবার সামনে নির্বিকার ভঙ্গিতে নাকের লোম ছিড়।
৩. বাথরুম করে ফ্ল্যাশ টানতে বেশিরভাগ সময় ভুলে যাও।
৪. নিজের ব্যবসা ছাড়া অন্য কোনো বিষয়ে তোমার আগ্রহ নেই।
৫. ঘুমানোর সময় তুমি হাঁ করে ঘুমাও।
৬. বাড়িতে যতক্ষণ থাকো, খালি গায়ে থাকো…।
৭. তুমি প্রথম শ্রেণীর নির্বোধ।
আমিন চিঠি পড়ার মাঝখানে বললেন, তোমার বুবুর মাথা খারাপ হয়ে গেছে। নয় বৎসর সে আমার গায়ে কোনো গন্ধ পেল না। এখন একেবারে পাঁঠার গন্ধ?
রুস্তম বলল, গন্ধটা হয়তো আস্তে আস্তে ডেভেলপ করেছে।
আমিন বললেন, পাঁঠার গন্ধ তোমার বোন চেনে? জীবনে কখনো পাঠা দেখেছে?
দুলাভাই আপনি রেগে যাচ্ছেন। আপনাকে কখনো রাগতে দেখি না তো এই জন্যে অবাক লাগছে।
আগে গায়ে পাঁঠার গন্ধ ছিল না বলে রাগ করতাম না। এখন পাঁঠার গন্ধ কাজেই রাগ করছি।
কিছুক্ষণ মুখ থেকে জিভ বের করে বসে থাকুন। দেখবেন রাগ কমে গেছে।