রু আদে সাহেব!
জি।
Realityর নানান রূপ আছে এটা কি জানেন?
না।
একজন Sleep walker যখন ঘুমের ঘোরে হেঁটে বেড়ায় তখন সেটাই তার কাছে Reality। যারা তাকে হাঁটতে দেখছে তাদের Reality কিন্তু ভিন্ন। বুঝতে পারছেন?
বুঝার চেষ্টা করছি।
আমরা যখন স্বপ্ন দেখি তখন স্বপ্নটাই আমাদের কাছে বাস্তব। আবার যখন জেগে উঠি তখন জাগ্রত অবস্থাটাই বাস্তব। সমস্যা হচ্ছে একজন মানুষের কি দুই ধরনের বাস্তবতা থাকতে পারে? আপনার কি মনে হয়?
জানি না।
থাকতে পারে। আপনি যেমন অনেক বাস্তবতা নিয়ে বাস করছেন। আপনার সবচে বড় সুবিধা হচ্ছে আপনি একটা বাস্তবতাকে অন্য একটা বাস্তবতা থেকে আলাদা করার চেষ্টা করছেন না। আচ্ছা অন্য প্রসঙ্গে কথা বলি, মুনিয়া নামের যে মেয়েটির ছবি এঁকে আপনি শেষ করেছেন সে কি ফিরেছে?
না।
তাঁকে খুঁজে বের করার কোনো চেষ্টা কি করেছেন?
না।
না কেন?
ইচ্ছা করলেই তো মুনিয়াকে আমি আমার সামনে উপস্থিত করতে পারি। তাকে খুঁজে বের করার দরকার কি?
তাও ঠিক। আমি এখন টেলিফোন রেখে দেব। আপনি কি কিছু বলতে চান?
চাই।
বলুন, আমি শুনছি।
আমার ছেলে বিভাস বড় হয়ে তার সায়েন্স টিচার মিস রুমাকে বিয়ে করবে।
শুনে ভালো লাগল। আর কি বলবেন?
আমি খুব আনন্দে থাকার চেষ্টা করছি কিন্তু পারছি না।
আপনি পারবেন। Please dont give up.
সাইকেলে বৃষ্টিতে ঘুরে ঘুরে রুস্তম জ্বরে পড়েছে। প্রবল জ্বর। থার্মোমিটার দিয়ে জ্বর মাপা হয়নি বলে কত জ্বর জানা যাচ্ছে না। তার বিছানা জানালার পাশে। তার সময় কাটছে জানালা দিয়ে বৃষ্টিভেজা আকাশের দিকে তাকিয়ে। আকাশে মেঘের কত না অদ্ভুত খেলা। রুস্তমের মনে হচ্ছে সে তার বাকি জীবনটা বিছানায় শুয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে কাটিয়ে দিতে পারবে।
শ্রাবণ মাসের সন্ধ্যা। আকাশে ঘন কালো মেঘ। যে কোনো মুহূর্তে বর্ষণ শুরু হবে। রুস্তমের বাড়ির গেটের কাছে রেক্সিনের সুটকেস হাতে একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তার শাড়ি মলিন। চেহারা মলিন। সে ভেতরে ঢোকার সাহস সঞ্চয় করতে পারছে না। ঘন ঘন ঢোক গিলছে। সে কাঁদছে। তার চোখ ভর্তি টলটলা পানি। মেয়েটার নাম মুনিয়া।
বারান্দা থেকে মেয়েটিকে চণ্ডিবাবু প্রথম দেখলেন। অভয় দেওয়ার মতো গলায় বললেন, ভেতরে চলে যাও মা। স্যার আছেন। স্যার থাকতে আমাদের ভয় কী?
মুনিয়া বললেন, ভালো আছেন দাদু?
চণ্ডিবাবু বললেন, ভালো আছি মা।
আমার স্যার ভালো আছেন?
স্যারের জ্বর। দুদিন ধরে খাওয়া-দাওয়া বন্ধ। আমার শরীরের যে অবস্থা, দোতলায় উঠে যে একবার দেখব সে উপায় নেই।
মুনিয়া সিঁড়ি ভেঙে ধীরে ধীরে দোতলায় উঠছে। তার শরীর কাঁপছে। মুনিয়ার মা মারা গেছেন। তার কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই।
মুনিয়ার প্রতি লেখক হুমায়ূন আহমেদের শুভেচ্ছা। জীবন তার মঙ্গলময় বাহু দিয়ে মেয়েটিকে স্পর্শ করুক–এই শুভ কামনা।