তার কোনো পিকচার কি আছে আপনার কাছে?
না। তবে আমি ঠিক করেছি তার একটা ছবি আঁকব। আর্টিস্ট হোসেন মিয়া আউট লাইন এঁকে আমার অনেক সুবিধা করে দিয়েছেন।
ছগীর উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বলল, আপনার সঙ্গে অনেক প্যাচাল পাড়লাম, এখন উঠি। আপনার দেমাগে সমস্যা আছে। ভালো পীর-ফকির দেখে একটা তাবিজ নেন। আপনাকে পছন্দ হয়েছে বলে কথাটা বললাম।
বিরিয়ানি খেতে যাবেন?
হ্যাঁ। আপনাকে তো বলেছি আমার একমাত্র খাদ্য বিরিয়ানি। আমার ঠিকানাটা লিখে রাখেন। এমন জায়গায় রাখেন যেন চোখের সামনে থাকে। যে কোনো সময় আমার প্রয়োজন পড়বে। ভালো মানুষের প্রয়োজন নাই। এখন সময় খারাপ। এখন শুধু দুষ্টের প্রয়োজন।
আপনাকে বিরিয়ানি আনিয়ে দিচ্ছি। আমার সঙ্গে দুপুরের খাবার খান। বাবা চিঠিতে টাকার কথা কিছু না লিখলেও আপনাকে আমি টাকা দিব।
কেন দিবেন?
আমার বাবা মিথুক মানুষ। তিনি টাকার লোভ দেখিয়ে কাজ করিয়ে নিতে পছন্দ করেন। আপনার বেলাতেও এই কাজ করেছেন। আপনি যে সত্যি কথা বলছেন তা বুঝতে পারছি।
কিভাবে বুঝলেন?
কিভাবে বুঝলাম সেটা বলতে পারব না। আমার মাথার ঠিক নেই। সব কথা গুছিয়ে বলতে পারি না।
আমি আপনাকে পাগলের তেল এনে দিব। এই তেল এক সপ্তাহ মাথায় মাখবেন। ইনশাআল্লাহ আরোগ্য হবেন। যদি আরোগ্য না হন আমি নিজের গু নিজে চেটে খাব।
বিরানির বদলে গু খাবেন?
অবশ্যই খাব। একবার যখন বুলেছি তখন খাব। ধোয়া লুঙ্গি আছে? গোসল করব। গোসল না করে আমি খানা খাই না। যতবার খানা ততবার গোসল।
ধোয়া লুঙ্গি আছে।
বিরিয়ানি কোত্থেকে আনাবেন? মগবাজারের তাজ হোটেলেরটা ভালো। কাউকে পাঠায়ে দেন নিয়ে আসবে। ম্যানেজারকে যেন আমার নাম বলে।
নাম বললে কি হবে?
মাংস ঠিকমতো দিবে। ঘাড়ের মাংস দিবে। আলু এক-দুই পিস বেশি দিবে।
ছগীর দুপুরের খাওয়া শেষ করে লম্বা ঘুম দিল। ঘুম ভাঙল সন্ধ্যার পর। সে খালি গায়ে স্বাভাবিক ভঙ্গিতেই ঘুরে বেড়াতে লাগল। যেন এই বাড়ি তার নিজের।
চায়ের কাপ হাতে একসময় রুস্তমের ঘরে ঢুকল। রুস্তম লেখালেখিতে ব্যস্ত। রুস্তমের সামনের চেয়ারে বসতে বসতে বলল, কি লিখেন?
রুস্তম বলল, প্রণাশের মৃত্যুর অংশটা লিখছি।
প্রণাশ কে?
আমার উপন্যাসের চরিত্র। সে মারা যাওয়ার পর উপন্যাস শুরু হয়। কিভাবে মারলে তাকে ভালো হবে এটা বুঝতে পারছি না। অনেকভাবে লিখেছি, কোনোটাই পছন্দ হচ্ছে না। আপনাকে পড়ে শুনাব? আপনার কাছে কোনটা ভালো লাগে যদি বলেন।
ছগীর হাই তুলতে তুলতে বলল, পড়েন শুনি। ছলো পড়বেন। রেলগাড়ির মতো পড়লে কিছু বুঝব না।
রুস্তম প্রণাশের মৃত্যুর সব ভার্সান পড়ল। ছগীর বলল, সিনেমা হলে মিত্যু সবচে ভালো।
কেন?
পাবলিক বিরাট ক্যাসাল শুরু করবে। পাবলিক আসছে বই দেখতে, মিত্যু দেখতে আসে নাই। টিকেট কাটা পাবলিক। হৈ-হল্লা হবে। চেয়ারের গদি কাটা হবে। এর মধ্যে কয়েকটা ককটেল ফুটলে খেলা জমবে।
ককটেল?
ককটেল না থাকলেও চলবে। কোক-ফান্টার বোতল ভালোমতো ঝাঁকি দিয়া যদি ফিক্কা মারেন ককটেল ফোটার আওয়াজ হবে। শেষমেশ সিনেমার পর্দায় আগুন।
ছগীরের চোখ কোটর থেকে খানিকটা বের হয়ে এসেছে। চোখ চকচক করছে। রুস্তমের মনে হলো ছগীর চোখের সামনে দৃশ্যটা স্পষ্ট দেখছে। বড় লেখকদের লক্ষণ। বড় লেখকরা চোখের সামনে সব দেখতে পান।
প্রণাশ বাবুর পরিবারের বয়স কত?
বয়স অল্প।
অল্পটা কত ঠিকমতো বলেন।
ধরুন বাইশ-তেইশ।
চেহারা-ছবি কেমন?
মিষ্টি চেহারা।
চেহারার আবার ঝাল-মিষ্টি কি! চোখ-মুখের কাটিং কেমন?
ভালো।
নাক মোটা না খাড়া?
সামান্য মোটা।
ঠোঁটের অবস্থা কি? পাতলা না মোটা?
নাকের সঙ্গে মিল রেখে ঠোঁটও খানিকটা মোটা।
গাত্র বর্ণ কালো?
কালো না, শ্যামলা।
প্রণাশ বাবুর মিত্যুর পর তার স্ত্রীর গতি কি হবে কিছু চিন্তা করেছেন? তাকে একটা ভালো মুসলমান ছেলের সঙ্গে শাদির ব্যবস্থা করেন। মেয়েটা কলেমা পড়ে মুসলমান হবে তারপর শাদি। ছেলে গরিব ঘরের। বিবাহের পর তার ভাগ্য খুলে যাবে। দুই হাতে টাকা আসতে থাকবে। ধানমণ্ডিতে ফ্ল্যাট কিনবে। গাড়ি কিনবে। গাড়ি দুইটা দিয়ে দেন। একটা তার আরেকটা তার স্ত্রীর। ছেলের আপন ভাই বিষয়টা ভালো চোখে নিবে না। তার নজর আপন ভাইয়ের স্ত্রীর দিকে। সে সময়ে-অসময়ে ভাইয়ের বাসায় উপস্থিত হয়। ভাবীর জন্য সে দেওয়ানা। মেয়েটা শুরুতে না না করলেও একসময় তার মন দুর্বল হয়। দুইজনে মিলে ঠিক করে পথের কাঁটা দূর করবে। দশ হাজার টাকার কনটাকে তারা একজনরে ঠিক করে, মনে করেন তার নাম ছগীর।
রুস্তম বলল, এই গল্পটা আর শুনতে চাচ্ছি না।
শুনতে না চাইলে শুনবেন না। জোর-জবরদস্তি করে আপনারে কিছু শুনাব না। বিরানি ছগির জোর-জবরদস্তি করে কোনো কিছু করে না।
হোটেলের নাম সাংগ্রিলা
হোটেলের নাম সাংগ্রিলা। হোটেল না, স্বপ্নপুরী। স্বপ্নপুরীর লনে আমিন মুখ ভোঁতা করে বসে আছে। তার সামনে টলটলে পানির নহর। সেখানে রঙিন মাছ ঘুরঘুর করছে। আমিনের মাথার ওপর লাল টালির ছাদ। বাগানবিলাস ছাদকে ঘিরে রেখেছে। বাগানবিলাস ফুটিয়েছে নীল পাতা। কিছুদূর পরপর বার্ড অব প্যারাডাইস নামের কলাবতি ধরনের গাছ। গাছগুলোর দিকে তাকালে মনে হয় পৃথিবী এত সুন্দর কেন?
আমিন ভাই পীরের প্রতি কৃতজ্ঞ। তার ধারণা যা ঘটেছে ভাই পীরের তাবিজের কারণে ঘটেছে। এই তাবিজ এখনো তার গলায় পরা। আমিন ঠিক করে রেখেছে বাকি জীবন সে তাবিজ গলায় ঝুলিয়ে রাখবে।