লাঠির বিষয়ে সাবধান মানে?
লাঠিটা মেঝেতে পড়লে সাপ হক্সে যায়। আমি নিজের চোখে দেখেছি।
দিনা বলল, তোমার অসুখ মোটেই সারেনি। বরং খানিকটা বেড়েছে। আমি ভেবেছিলাম, তোমার ছেলেকে কয়েক ঘণ্টার জন্য পাঠাব। এখন মনে হচ্ছে পাঠানো ঠিক হবে না।
তাহলে পাঠিও না।
দিনা অনাগ্রহের সঙ্গে লাঠি হাতে নিল। বিরক্ত মুখে বলল, আমি অনেকক্ষণ হলো মুনিয়া মেয়েটার কাণ্ডকারখানা দেখছি। আশে সবুজ শাড়ি পরা ছিল। এখন লাল শাড়ি পরে ঘুরঘুর করছে। ঠোঁটে কুচকুচে কালো লিপস্টিক। মেয়েটার মধ্যে প্রস্টিটিউট ভাব আছে।
প্রস্টিটিউট ভাবটা কী?
তুমি বুঝবে না। তোমাকে বোঝানোর চেষ্টা করাও পণ্ডশ্রম। তুমি যত দ্রুত পার মেয়েটাকে বিদায় করো। সম্ভব হলে আজই।
আচ্ছা।
আই রিয়েলি ফিল সরি ফর ইউ।
আমাকে নিয়ে সরি ফিল করার কিছু নাই। আমি ভালো আছি। একটা উপন্যাসে হাত দিয়েছি। সারাক্ষণ উপন্যাস নিয়েই ভাবছি। উপন্যাসের নাম দিয়েছি ঝিঁঝি। রেণুবালা ঝিঁঝি নামটা খুব পছন্দ করেছেন।
রেণুবালাটা আবার কে?
আমার ডাক্তার। উনিও তোমার মতো আমার কবিতার বইয়ের সবগুলো কবিতা পড়েছেন। তার কাছে সবচেয়ে ভালো লেগেছে অন্ধ উইপোকা কবিতাটা।
তুমি তাহলে সুখেই আছ?
হ্যাঁ।
আমাকে মিস করো?
না।
ভেরি গুড। অদ্ভুত কারণে আমি তোমাকে মিস করি। হঠাৎ রাতে ঘুম ভাঙলে মনে হয়, মানুষটা পাশে থাকলে ভালো হতো, কিছুক্ষণ গল্প করতাম।
দিনা চলে যাওয়ার পরপর মুনিয়া রুস্তমের ঘরে ঢুকল। কালো লিপস্টিকে মেয়েটাকে ভয়ঙ্কর লাগছে। বাজারে কালো লিপস্টিক পাওয়া যায়–এটাই রুস্তম জানত না।
মুনিয়া বলল, এসেছিলেন যে উনি কে?
ওর নাম দিনা। তার একটা ছেলে আছে, ক্লাস ফোরে পড়ে। ছেলের নাম অদ্ভুত। তার নাম হলো না।
আপনার কে হয়?
এখন আমার কেউ না। একসময় আমার স্ত্রী ছিল। আমি পুরোপুরি পাগল হওয়ার পর সে আমাকে ডিভোর্স দিয়ে চলে গেছে।
ছেলেটা আপনার?
হ্যাঁ।
উনি কি আবার বিয়ে করেছেন?
তা তো জানি না। জিজ্ঞেস করিনি।
আপনার কাছে কেন এসেছেন?
তার বাবার খোঁজ নিতে এসেছে। সে আসায় একটা খুব ভালো কাজ হয়েছে।
ভালো কাজটা কী?
লাঠির হাত থেকে বাঁচলাম। তোমার চোখে পানি কী জন্য?
স্যার, আমার খুব খারাপ লাগছে এই জন্য চোখে পানি। ইচ্ছা করছে একটা চলন্ত ট্রাকের সামনে ঝাঁপ দিয়ে পড়ি।
তোমার প্রায়ই চলন্ত ট্রাকের সামনে ঝাঁপ দিয়ে পড়তে ইচ্ছা করেএটা ভালো কথা না। নেক্সট টাইম আমি ডাক্তার রেণুবালার সঙ্গে বিষয়টা নিয়ে আলাপ করব।
আপনার যা ইচ্ছা করেন। আমি অবশ্যই চলন্ত ট্রাকের সামনে পড়ব। যদি না পড়ি আমার নাম মুনিয়া না।
দুপুরের দিকে আমিন বিধ্বস্ত চেহারা এবং দুটি সুটকেস নিয়ে উপস্থিত হলো। তার ঘর সুন্দর করে গোছানো–এ বিষয়টি নিয়ে মোটেই উচ্ছাস দেখাল না।
দুপুরে ভাত খেতে খাবারের টেবিলে এলো না। তার ঘর থেকে চাপা কান্নার শব্দ শোনা যেতে লাগল।
আমিন ঘর থেকে বের হলো সন্ধ্যাবেলায়। মাগরিবের নামাজ পড়ে দুটি বিস্কিট এবং একটা চা খেল।
রুস্তম বলল, আপনাকে দেখেই খুব অসুস্থ লাগছে।
আমিন বলল, দিনের মধ্যে দশ-বারোবার আমার স্ত্রী আমাকে টেলিফোন করে। আমি হ্যালো বলতেই সে বলে ঘেউ ঘেউ। আমি অসুস্থ হবো না?
ডাক্তার রেণুবালার কাছে কি যাবেন?
উনার কাছে আমি যাব কোন দুঃখে? আমি তো টেলিফোনে ঘেউ ঘেউ করি না। যে ঘেউ ঘেউ করে সে যাবে।
তাও ঠিক।
তোমার বাড়িতে আমি কিছু মৌলিক পরিবর্তন করব। এক্সট্রাতে বাড়িভর্তি, এদের ঝেটিয়ে বিদায় করব।
কখন?
কাল দুপুরের মধ্যে দেখবে সব ক্লিয়ার। তোমার কোনো সমস্যা নাই তো?
জি না। তবে মুনিয়া মেয়েটাকে কঠিন কোনো কথা বলবেন না। কঠিন কথা বললে সে চলন্ত ট্রাকের সামনে লাফ দিয়ে পড়বে।
পড়লে পড়বে। বদমেয়েটা ঠোঁটে চায়নিজ ইংক মেখে ঘুরে বেড়াচ্ছে কেন?
চায়নিজ ইংক না। লিপস্টিক। দুলাভাই আজ আমার ডাক্তারের সঙ্গে অ্যাপয়েন্টমেন্ট আছে, তবে আমি একা যাব। আপনাকে নেব না।
আমাকে নেবে না কেন?
ডাক্তার বলেছেন আমাকে একা যেতে।
এই ডাক্তার বদলাতে হবে। চিকিৎসার নাম নাই, শুধু থিওরি কপচায়। ফাজিল মেয়ে।
রুস্তম বলল, বুবুর ওপর রাগটা আপনি সবার ওপর ছড়িয়ে দিচ্ছেনএটা ঠিক না। এটা ভুল।
আমাকে ভুল-শুদ্ধ শেখাবে না।
জি আচ্ছা।
আমিনের টেলিফোন বাজছে। আমিন নাম্বারের দিকে হতাশ চোখে তাকিয়ে আছেন, টেলিফোন ধরছেন না। টেলিফোন করেছে সামিনা।
রুস্তম।
জি দুলাভাই।
তোমার এই বোন আমাকে পাগল বানানোর চেষ্টা করছে।
টেলিফোন ধরবেন না?
ধরে কতক্ষণ থাকব? সে তো টেলিফোন করতেই থাকবে। করতেই থাকবে।
ফোন সেটটা ধানমণ্ডির লেকে ফেলে দিন। বিষয়টা পুরোপুরি অফ হয়ে যাক।
পুরোপুরি অফ করার জন্য লাখ টাকা দামের আইফোন পানিতে ফেলতে হবে কেন? সুইচ বন্ধ রাখলেই হয়।
সুইচ বন্ধ করলেই পুরোপুরি অফ হবে না। আপনি জানবেন বোতাম চাপ দিলেই অন হবে।
আমিন টেলিফোন নিয়ে নিজের ঘরে ঢুকে গেলেন।
ডাক্তার রেণুবালা বললেন, সব কি ঠিকঠাক?
রুস্তম হাসল।
লাঠি সমস্যার সমাধান হয়েছে?
হয়েছে। যেখানকার লাঠি সেখানে চলে গেছে।
ওষুধ নিয়মিত খাচ্ছেন?
জি।
উপন্যাস এগোচ্ছে?
জি।
পরেরবার যখন আসবেন যতটুকু লিখেছেন নিয়ে আসবেন, আমি পড়ব।
জি আচ্ছা।
আমাকে বলার মতো strange ঘটনা কি ঘটেছে?
আমার জীবনে ঘটেনি, আমার দুলাভাইয়ের জীবনে ঘটেছে। বলব?