কথাবার্তা তো খুবই গুছিয়ে বলছ। ব্যাপার কী? তবে তোমাকে দেখে কিন্তু পাগল পাগল লাগছে। আমি শুনেছি, যারা পাগল তাদের গা থেকে Ray বের হয়। যার গায়ে এই Ray বেশি পড়ে সেও পাগল হয়ে যায়।
কথা হচ্ছে দিনার সঙ্গে রুস্তমের। দিনা গোলাম মওলার একমাত্র মেয়ে। তার নিজের কিছু ব্যবসা আছে। জাপান থেকে রিকন্ডিশন্ড গাড়ি এনে বিক্রি করে। মতিঝিলে তার গাড়ির শোরুম আছে, দিনা মোটরস। ইতালি থেকে সে এলসি খুলে রঙ আনে। দেশ থেকে রফতানি করে সামুদ্রিক মাছের শুটকি এবং শৈবাল। তাকে দেখে বোঝার উপায় নেই, সে এ দেশের বড় ধনীদের একজন।
দিনার গায়ের রঙ কালো। কালো রঙ তার সঙ্গে খুব মানিয়ে গেছে। দিনার চোখ-মুখ বুদ্ধিতে ঝলমল করছে।
দিনা একসময় রুস্তমের স্ত্রী ছিল। সাজ্জাদ আলী এবং তার পার্টনার গোলাম মওলার এই বিয়েতে কোনো মত ছিল না। বিয়ে হয়েছিল রুস্তমের মা আসমার একক আগ্রহ এবং চেষ্টায়। দিনার একটি ছেলে আছে, তার নাম না। দিনার দি ফেলে দিয়ে না।
দিনা কখনোই তার ছেলেকে বাবার সঙ্গে দেখা করতে দেয় না। দিনা নিশ্চিত, ছেলেকে বাবার সঙ্গে মিশতে দিলে ছেলেও বাবার মতো হয়ে যাবে।
দিনা বলল, আমি তোমার কাছে বিশেষ জরুরি কাজে এসেছি। কাজ শেষ করে চলে যাব।
কাজটা কী?
আমার বাবা কোথায়?
তোমার বাবা কোথায় তা তো আমি জানি না। তবে উনার লাঠিটা আমার কাছে। যে লাঠিটা তুমি বালি থেকে উনাকে কিনে দিয়েছ।
দিনা বলল, বালি থেকে আমি তাকে কোন দুঃখে লাঠি কিনে দেব? আমি জীবনে কখনো ইন্দোনেশিয়া যাইনি। বাবা বানিয়ে বানিয়ে বলেছে। বাবা কখনোই সত্যি কথা বলে না। সত্যি কথা বলাটাকে বাবা শাস্তিযোগ্য অপরাধ মনে করে।
উনাকে পাওয়া যাচ্ছে না?
না। শেষবার বাবা তোমার সঙ্গে দেখা করতে এসেছিল। তুমি তাকে একটা কবিতার বই দিয়েছিলে। গাড়ি পাওয়া গেছে সায়েন্স ল্যাবরেটরির সামনে। বাবাও নেই, ড্রাইভারও নেই।
রুস্তম বলল, মনে হয় ইন্ডিয়া চলে গেছেন। কোনো ঝামেলা হলেই উনি ইন্ডিয়া চলে যান।
দিনা বলল, আমার ধারণা বাবা র্যাবের হাতে কিংবা CID পুলিশের হাতে আছে। ওরা কোনো ইনফরমেশন রিলিজ করছে না। ইনফরমেশন রিলিজ না করলে মেরে ফেলতে ওদের সুবিধা হবে। তুমি কি এক কাপ চা খাওয়াবে? নাকি পাগলরা অতিথিদের চা খেতে বলে না?
রুস্তম নিজে উঠে গিয়ে চায়ের কথা বলে এলো। দিনা বলল, একটা মেয়েকে দেখলাম উঁকিঝুঁকি দিচ্ছে। সে কে?
ওর নাম মুনিয়া।
মেয়েটার যে একটা নাম আছে তা তো বুঝতেই পারছি। নাম ছাড়া মানুষ নেই। মেয়েটা কে? এখানে করে কী?
কিছু করে না। সেজেগুজে হাঁটাহাঁটি করে।
তোমার যৌনসঙ্গী?
রুস্তম কিছু বলল না। আহত চোখে তাকিয়ে রইল। দিনা বলল, সরি। মুখ ফসকে বলে ফেলেছি। তুমি এই নেচারের না, তা আমি জানি। ভালো কথা, তোমার কবিতার বইটা আমি মন দিয়ে পড়েছি।
ধন্যবাদ।
আমি এসেছি কবিতার বইটা নিয়ে কথা বলতে। বাবাকে পাওয়া যাচ্ছে–এ নিয়ে আমার মাথাব্যথা নেই। Everybody is paid back by his own coin. বাবা তার নিজের পয়সার হিসাব দিবে। এটাই স্বাভাবিক। ড্রাইভারটার জন্য খারাপ লাগছে। সে নিতান্তই ভালো মানুষ। বাবার কারণে কোনো এঁদো ড়ুবায় মরে পড়ে থাকবে।
রুস্তম বলল, তুমি চায়ের কাপ সামনে নিয়ে বসে আছ। চুমুক দিচ্ছ all
তোমার পুরনো বাবুর্চি মরিয়ম এখনো আছে?
হুঁ।
আমি এসেছি তারপরেও একবার দেখা করতে এলো না!
সে রান্নাঘর ছাড়া কোথাও যায় না।
পাগলের বাড়িতে সবাই কি পাগল হয়ে যায়?
রুস্তম ছোট নিঃশ্বাস ফেলল।
দিনা চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে বলল, তোমার মতো এমন অসুস্থ একজন মানুষ চমৎকার সব কবিতা লিখবে ভাবাই যায় না। তুমি তোমার ছেলের সম্পর্কে তো কিছু জিজ্ঞেস করলে না?
রুস্তম বলল, ওকে তো তুমি আমার সঙ্গে দেখা করতে দেবে না, কাজেই ব্রেইন থেকে তাকে আমি অফ করে রেখেছি।
অফ করে রেখেছি মানে কী?
ব্রেইনের যে অংশে ওর প্রতি ভালোবাসা-মমতা এইসব নিয়ে কাজ করে সেটা বন্ধ রেখেছি।
এটা কি সম্ভব?
সবার জন্য সম্ভব না। আমার জন্য সম্ভব।
তোমার ছেলে প্রতি ক্লাসে ফার্স্ট হয়ে ক্লাস ফোরে উঠেছে। শঙ্কর শিশুচিত্র প্রতিযোগিতার নাম শুনেছ?
না।
শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা। সেখানে সে ছবি পাঠিয়েছিল। গোল্ড মেডেল পেয়েছে। দিল্লিতে পুরস্কার দেবে, আমি ওকে নিয়ে যাব।
আমার একজন আর্ট টিটার আছেন। তিনিও গোল্ড মেডেল পাওয়া। রাষ্ট্রপতি স্বর্ণপদক।
তুমি ছবি আঁকা শিখছ?
এখনো সেই অর্থে আঁকা শিখিনি। রঙ ঘষাঘষি করছি। ছবি আঁকার জন্য রঙ ঘষাঘষি শেখা খুবই জরুরি।
তুমি কি তোমার ছেলের সঙ্গে কিছু সময় কাটাতে চাও?
না।
না কেন?
কিছু সময় কাটালে আরও বেশি সময় কাটাতে ইচ্ছা করবে। মন খারাপ হবে। ডাক্তার রেণুবালা বলেছেন, মন খারাপ হয় এমন কিছুই যেন আমি না করি। আমাকে সবসময় আনন্দের মধ্যে থাকতে হবে। আনন্দ খুঁজে বেড়াতে হবে।
তোমার ছেলেকে স্কুল থেকে একটা অ্যাসাইনমেন্ট দিয়েছে, এক শ শব্দ দিয়ে একটা রচনা লিখতে হবে–My Father. সে লিখেছে–
My father is a mad person.
I dont know anything about him.
রুস্তম বলল, সে তো সত্যি কথাই লিখেছে।
দিনা বলল, হ্যাঁ, সত্যি কথা। তবে তুমি এখন অনেক সুস্থ। প্রায় নরমাল।
রুস্তম বলল, একটু দাঁড়াও। আমি তোমার বাবার লাঠিটা এনে দিচ্ছি। লাঠি নিয়ে যাও। তবে লাঠির বিষয়ে সাবধান।