রুস্তম বলল, হ্যালো।
আমিন বললেন, রুস্তম জেগে আছ?
হ্যাঁ।
আমি ভেবেছিলাম ঘুমাচ্ছ। তারপরও টেলিফোন করলাম কারণ আমার উপায় ছিল না।
নতুন কিছু ঘটেছে?
তোমার বোন মালয়েশিয়া থেকে টেলিফোন করেছে। রোমিং ফোন নিয়ে গেছে। দেখেই আমি চিনেছি। আমি বললাম, হ্যালো। সে তার উত্তরে বলল, ঘেউ ঘেউ।
কী বলল?
কুকুরের মতো ঘেউ ঘেউ করল।
বলেন কী?
আমি ভাবলাম হয়তো ভুল শুনেছি। আমি আবার বললাম, কে সামিনা! সামিনা বলল, ঘেউ ঘেউ ঘেউ! আগে দুবার ঘেউ বলেছে, এখন বলল তিনবার।
আপনি টেলিফোন রেখে দিয়েছেন?
হ্যাঁ।
আরেকবার করে দেখুন। এমন হতে পারে যে বুবু ঠিকই আপনার প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে। আপনি তাকে অপছন্দ করবেন বলে ঘেউ ঘেউ শুনছেন। ডক্টর রেণুবালা দে হলে তাই বলতেন। মস্তিষ্ক আমাদের তাই শোনায় যা আমরা প্রবলভাবে শুনতে চাই। দুলাভাই রাখি।
রুস্তম প্রণাশ বাবুর মৃত্যুর তৃতীয় ভার্সান পড়ল। তার পছন্দ হলো না। একটা মানুষ আগেই আধমরা হয়ে আছে। তার মৃত্যু কারও মনে দাগ কাটবে না। জলজ্যান্ত একজন মানুষের মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে মনে দাগ কাটবে। সে চতুর্থ ভার্সান নিয়ে ভাবতে বসল। এই ভার্সনে প্রণাশ বাবু তার ছেলেমেয়েদের নিয়ে স্টার সিনেপ্লেক্সে অবতার ছবিটা দেখতে গেছেন। ছেলেকে আইসক্রিম কিনে দিয়েছেন। তিনি পপকর্ন নিয়েছেন। ছবি শুরু হওয়া মাত্র তিনি স্ত্রীর কানে কানে বললেন, বুকে ব্যথা করছে। সীতা গভীর মনোযোগ দিয়ে ছবি দেখছে বলে স্বামীর কথা শুনতে পেল না।
মোবাইল ফোন আবারও বাজছে। রুস্তম বলল, হ্যালো।
ওপাশ থেকে আমিন বললেন, তোমার কথামতো আবারও টেলিফোন করেছিলাম। সামিনা আবারও বলল ঘেউ ঘেউ। কী করি বলো তো?
রুস্তম বলল, আমি তো কিছু বলতে পারছি না। তবে এমনও হতে পারে যে বুবু কুকুর হয়ে গেছে।
কুকুর হয়ে গেছে! কুকুর হয়ে গেছে মানে?
মানসিকভাবে কুকুর হয়ে গেছে। সে নিজেকে কুকুর ভাবছে। ডক্টর রেণুবালাকে জিজ্ঞেস করে আমি জেনে নেব।
তোমাকে কিছু জানতে হবে না। তুমি ঘুমের ওষুধ খেয়ে ঘুমাও।
জি আচ্ছা।
সকাল সকাল উঠবে। তোমাকে নিয়ে ভাই পীরের কাছে যাব। আজ যেভাবেই হোক উনার কাছ থেকে তাবিজ নিয়ে আসতে হবে। আমি ঘড়িতে অ্যালার্ম দিয়ে রাখছি। ছটায় ঘুম থেকে উঠে নাশতা খেয়েই রওনা। তোমাকে আমি ডেকে তুলব। ঠিক আছে?
ঠিক আছে।
রুস্তম লেখা নিয়ে বসল। স্টার সিনে কমপ্লেক্সে এক গাদা মানুষের মধ্যে প্রণাশের মৃত্যু হওয়া ঠিক হবে না। মৃত্যু হবে পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতে।
প্রণাশের মৃত্যু
(Final version)
নেত্রকোনা থেকে প্রণাশের বাবা অবিনাশ বাবু এসেছেন। ছেলেকে নিয়ে তিনি দুঃস্বপ্ন দেখেছেন বলেই ঢাকায় আসা। দুঃস্বপ্নটা ভয়ঙ্কর। কালো রঙের একটা কুকুর এসে কামড়ে কামড়ে প্রণাশকে খাচ্ছে। প্রণাশ চিৎকার বা কান্নাকাটি করছে না। প্রণাশ চেয়ারে বসে তার ছেলের হোম ওয়ার্ক দেখছিল। কুকুর তার বাঁ পাটা হাঁটু পর্যন্ত খেয়ে ফেলার পর সে বেশ স্বাভাবিক ভঙ্গিতে ডান পা এগিয়ে দিল।
এই পর্যন্ত লিখেই রুস্তমকে লেখা বন্ধ করতে হলো। কারণ মুনিয়া ফুপিয়ে কাঁদছে। রুস্তম অবাক হয়ে বলল, কি হয়েছে?
স্যার পিঁপড়ায় কামড়াচ্ছে। মেঝে ভর্তি লাল পিঁপড়া।
নিজের ঘরে চলে যাও। ঘরে গিয়ে আরাম করে ঘুমাও।
আমার ঘরে আরও বেশি পিঁপড়া। বিছানাতেও পিঁপড়া।
ভালো সমস্যা হলো তো।
স্যার আমি আপনার খাটের এক কোনায় পড়ে থাকি। আপনার খাটটা অনেক বড়। আপনি টেরও পাবেন না খাটে আর কেউ আছে। স্যার খাটে শোব?
আচ্ছা।
মুনিয়া খাটে উঠে এলো। রুস্তম প্রণাশের মৃত্যুর ফাইনাল ভার্সান লিখতে লাগল।
স্যার একটা কথা বলব?
কাজ করছি মুনিয়া, এখন কথা বন্ধ।
বেশিক্ষণ কথা বলব না। এক মিনিট। আপনাকে যে শিল্পকটা দিয়েছিলাম ভাঙাতে পারেন নাই। তাই না?
কোন শিল্লুক?
ঐ যে, আমি থাকি জলে আর তুমি থাকো স্থলে…।
না।
সহজ দেখে একটা দেব স্যার। শিল্লুকটা ভাঙালেই আপনি জানতে পারবেন আমি কাকে বিয়ে করেছি।
মুনিয়া শোনো, আমার জানতে ইচ্ছা করছে না। গোপন বিষয় গোপন থাকা ভালো।
স্যার আমার খুব বলতে ইচ্ছা করছে। তাহলে বলল।
বাতি জ্বালা থাকা অবস্থায় আমি বলতে পারব না স্যার। আমার লজ্জা লাগবে। আপনি বাতিটা নেভান আমি বলছি।
তাহলে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করো। আমি লেখা শেষ করে বাতি নেভাব তারপর বলবে।
জি আচ্ছা। আমি জেগে থাকব।
একটা শব্দ করতে পারবে না। খুব মন দিয়ে লিখি তো, সামান্য শব্দতেও কনসানট্রেশান এলোমেলো হয়ে যায়।
আমি কোনো শব্দ করব না। নিঃশ্বাসও ফেলব সাবধানে। আপনি বললে নিঃশ্বাসও ফেলব না।
রাত তিনটায় রুস্তম লেখার টেবিল থেকে উঠল। অপেক্ষা করতে করতে মুনিয়া ঘুমিয়ে গেছে। রুস্তম দুটা ঘুমের ট্যাবলেট খেল। রেণুবালা বলে দিয়েছেন ওষুধ খাবার আধঘণ্টা পর বিছানায় যেতে। আধঘণ্টা চুপচাপ অপেক্ষা করা।
বাথরুমের বেসিনে শব্দ হচ্ছে। রুস্তম বলল, কে?
বাথরুম থেকে গম্ভীর গলায় জবাব এলো, জনাব আমি।
আপনি কে?
আমি হাজি আসমত উল্লাহ। আপনার কবিতার বইয়ের প্রচ্ছদ এঁকেছিলাম।
এখানে কি করেন?
অজু করছি জনাব। অজু করে তাহজুতের নামাজ পড়ব।
রুস্তম দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলল। আধঘণ্টা অপেক্ষা না করে তার উচিত এখনই বিছানায় যাওয়া।
তুমি কি আমাকে চিনেছ
তুমি কি আমাকে চিনেছ?
চিনব না কেন? তোমার নাম দিনা। তোমার আসল নাম মদিনা। নামটা তোমার কাছে পুরনো মনে হওয়ায় ম কেটে ফেলে দিনা হয়েছ। তোমার লম্বা চুল ছিল। চুল কেটে ছেলে সাজার চেষ্টা করছ।