একটা জরুরি কাজ করছি। উপন্যাসে হাত দিয়েছি।
খামাখা সময় নষ্ট। উপন্যাসে হাত দিয়ে কিছু হবে না, পা দিয়েও কিছু হবে না। আমার অত্যন্ত জরুরি কথা আছে। come to my room.
হোসেন মিয়ার ঘর সিগারেট এবং গাঁজার ধোয়ায় বিষাক্ত হয়ে আছে। তার্পিনের গন্ধেও বাতাস ভারী। রুস্তম চেয়ারে বসতে বসতে বলল, বলুন আপনার জরুরি কথা।
জরুরি কথা মুনিয়া মেয়েটির প্রসঙ্গে। অতি ফাজিল, অতি বদ একটি মেয়ে। একদিন শুধু সিটিং দিয়েছে। এক ঘণ্টা বসার কথা। ছাব্বিশ মিনিট বসেই বলেছে, এক কাপ চা খেয়ে আসি। তারপর আর তার খোঁজ নাই। আমি শুধু আউট লাইনটা আঁকতে পেরেছি।
ও আচ্ছা।
ও আচ্ছা বললে তো হবে না। আপনাকেই কিছু একটা করতে হবে। আমার নিজের মাথায়ও একটা সুদ্ধি এসেছে। আমি সেটা নিয়েও আপনার সঙ্গে ডিসকাস করতে চাই। অবশ্যি আপনার সঙ্গে ডিসকাস করা না করা একই। আপনি ভেজিটেবলের কাছাকাছি একজন মানুষ। তারপরও শুনুন, আমি ঠিক করেছি মেয়েটাকে বিয়ে করে ফেলব। বিয়ের পর তো তাকে আমার কথা শুনতে হবে। সিটিং দিতে হবে। এটা কি বুঝতে পারছেন?
পারছি।
বিয়ের পর কিছুদিন আমরা আপনার এখানেই থাকব। অসুবিধা আছে?
না।
বিয়ের খরচ হিসাবে কিছু টাকা আপনাকে দিতে হবে। বেশি না। বিয়ের শাড়ি কিনব। আমার আর্টিস্ট বন্ধুদের পার্টি দেব। হোটেল ভাড়া করে পার্টি না, আপনার বাড়ির ছাদে। আইডিয়া কেমন লাগছে?
ভালো।
যেহেতু ড্রিংকস থাকবে, ফুড তেমন না থাকলেও হবে। ওয়ান আইটেম। মোরগ পোলাও।
আপনার ইতালি যাওয়ার কী হলো?
সব গুছিয়ে নিয়ে এসেছিলাম, এখন আবার গোড়া থেকে শুরু করতে হবে। মুনিয়াকে সঙ্গে নিয়ে যাব। যুবতী স্ত্রী ফেলে রেখে যাওয়া আর শুকনা বারুদ ফেলে রাখা একই। যে কোনো সময় দপ করে জ্বলে উঠবে। এখন বলুন আমার আইডিয়া কেমন?
ভালো।
তাহলে মুনিয়াকে আপনি আমার ঘরে পাঠান। আজই সেটল হবে। বিয়ের প্রপোজাল পাওয়ার পর তার আনন্দটা কী রকম হবে ভেবেই ভালো লাগছে। Have not ফ্যামিলির দরিদ্র মেয়ে, ইউরোপ-আমেরিকা ঘুরবে, ডিসকো ফ্লোরে নাচানাচি করবে, ভাবাই যায় না। আপনি কাইন্ডলি মুনিয়াকে পাঠান। এক্ষুনি পাঠান। শুভস্য শীঘ্রম।
মুনিয়া চুপচাপ বসে আছে। তার চোখে আগ্রহ নেই, কৌতূহলও নেই। হোসেন বলল, তোমাকে কী জন্য ডেকেছি শুনলে আকাশ থেকে পড়বে। প্রথমে তোমার জন্য একটা উপহার। এই মেডেলটা রাখো, তোমাকে দিলাম।
কিসের মেডেল?
রাষ্ট্রপতি স্বর্ণপদক। পঞ্চম এশীয় আর্ট একজিবিশনে ফার্স্ট প্রাইজ পেয়েছিলাম। কী ছবি এঁকেছিলাম শুনতে চাও?
শুনতে চাই না, বলতে চাইলে বলেন।
ছবিটা ছিল গ্রামের একটা এঁদো পুকুরের। চারদিকে জঙ্গল। মাঝখানে টলটলা পানি। পানিতে শাপলা ফুল ফুটেছে। গরুর ধবধবে সাদা একটা বাচ্চা পানি খেতে এসে অবাক হয়ে শাপলা ফুল দেখছে।
ও আচ্ছা।
ছবিটা এখন আছে ডেনমার্কের রাষ্ট্রপতির কাছে। উনি পঞ্চাশ হাজার টাকা দিয়ে কিনে নিয়েছিলেন।
খারাপ কি?
তোমাকে যে মেডেলটা দিয়েছি তার ওজন দেড় ভরি। বর্তমান টাকায় এর দাম পঁয়তাল্লিশ হাজার টাকা। খুশি হয়েছ?
হুঁ।
তোমার মুখ দেখে তো মনে হয় না খুশি হয়েছ। যাই হোক, আমি তোমাকে বিয়ে করব বলে ঠিক করেছি। বিয়ের পর আমরা চলে যাব ইতালি। সেখান থেকে ফ্রান্সে।
মুনিয়া হাই তুলতে তুলতে বলল, আপনি এটা ঠিক করলে তো হবে। আমার নিজেরও ঠিক করতে হবে।
তুমি রাজি না?
অবশ্যই না। এখন যাই।
সবকিছু চিন্তা করে না বহো। হুট করে না বলছ কেন? আমাকে বিয়ে করতে তোমার অসুবিধাটা কী?
দুই দিন পরে আপনি আমাকে দিবেন ছেড়ে। তখন আমি যাব কই?
ছেড়ে দেব কেন?
আমার ঘটনা শুনলে তো ছাড়বেনই।
তোমার আবার স্ত্রী ঘটনা?
রাতে আমি ঘুমাই স্যারের সঙ্গে। এটা শুনলে আপনি আমাকে বিয়ে করবেন। আছে আপনার এত সাহস?
রাতে তুমি রুস্তম সাহেবের সঙ্গে ঘুমাও?
Yes, আমার কথা বিশ্বাস না হলে স্যারকে জিজ্ঞেস করেন। উনি মিথ্যা বলার মানুষ না।
মুনিয়া উঠে দাঁড়িয়েছে। হোসেন বলল, মেডেল রেখে যাও। মেডেল নিয়ে যাচ্ছ কেন?
আদর করে আপনি আমারে একটা জিনিস দিয়েছেন, আমি নেব না? কী বলেন আপনি! মুনিয়া ঘর খেকে বের হয়ে গেল।
খাটে পা ঝুলিয়ে হতভম্ব হয়ে বসে থাকল হোসেন মিয়া।
রুস্তম প্রণাশ বাবুর মৃত্যুর তৃতীয় ভার্সান লিখছে। তার সমস্ত চিন্তা এবং চেতনা এই মুহূর্তে প্রণাশ বাবুর মৃত্যুতে। আশপাশে কী ঘটছে সে জানে না। মুনিয়া পাটি নিয়ে ঢুকছে। শুয়ে পড়েছে। তার গায়ের শাড়ি আগের মতোই এলোমেলো। রুস্তম এই বিষয়ে কিছুই জানে না।
প্রণাশ বাবুর মৃত্যু
(Third version)
প্রণাশ আট দিন জ্বরে ভুগল। ভাইরাসের জ্বর পাঁচ দিনের বেশি থাকে। তার বেলায় আট দিন। নতুন ধরনের কোনো ভাইরাস হবে।
আজ জ্বর কম। থার্মোমিটার ৯৯, প্রণাশ একটু ভালো বোধ করছে। সে বিছানায় হেলান দিয়ে বসেছে। তার হাতে খবরের কাগজ। এই কদিন সে কাগজ পড়েনি। পড়তে ইচ্ছা করেনি। আজও যে খুব ইচ্ছা করছে তা না।
সীতা বলল, শরীরটা কি একটু ভালো লাগছে?
প্রণাশ বলল, হুঁ।
লেবু চা করে দেব, খাবে?
না।
পাকা পেঁপে এনে রেখেছি। কেটে দেই খাও।
না।
জোর করে খাও, শরীরে বল পাবে…
এই পর্যন্ত লিখে রুস্তমকে থামতে হলো। মোবাইল ফোন ক্রমাগত বাজছে। মোবাইল ফোন শিশুদের মতো। শিশুরা কাঁদতে থাকলে কোলে নিয়ে কান্না থামাতে ইচ্ছা করে। মোবাইল কাঁদতে শুরু করলেও কান্না থামাতে ইচ্ছা করে।