অবশ্যই। ও মালয়েশিয়ায় আসবে। ওকে নিয়ে ঘুরব। তারপর দেশে ফিরব।
আমার অবস্থা কী হবে?
তোমার কপালে দুঃখ আছে। আমিও তোমাকে ছাড়ব না। ভাড়াটে গুণ্ডা দিয়ে খুন করালেও আমি অবাক হবে না। আমাদের পরিবারে খুন-খারাবি কোনো ব্যাপারই না। আমার বাবা খুনের দায়ে জেলে আছেন, তোমাকে বলেছি না?
আফতাব চাপা গলায় বলল, you bitch এখন তুমি এইসব কী বলছ?
সামিনা হাসতে হাসতে বলল, ঘেউ ঘেউ।
ঘেউ ঘেউ করছ কেন?
সামিনা বলল, আমি bitch। তাই ঘেউ ঘেউ করছি। ঘেউ ঘেউ ঘেউ!
রুস্তমের মার ঘর সন্ধ্যার মধ্যে পরিষ্কার হওয়ার কথা। পরিষ্কার করা গেল না। তিনটা আলমারির কোনোটিই ঘর থেকে বের করা যাচ্ছে না। আমিন ভেবে পাচ্ছে না এই আলমারি ঘরে ঢুকানো হয়েছিল কিভাবে? মিস্ত্রি কি ঘরের ভেতর বসে আলমারি বানিয়েছে?
রুস্তম বলল, দরজা ভেঙে বের করলে কেমন হয়?
আমিন বলল, এটা আমার লাস্ট অপশন।
রুস্তম বলল, আলমারিগুলো ভেঙে ফেললেও হয়। আলমারির তো তেমন প্রয়োজনও নাই। আলমারি ভেঙে পার্ট বাই পার্ট বের করুক।
আমিন বলল, আজকের রাতটা ঠাণ্ডা মাথায় চিন্তা করি, কাল ডিসিশন নেব।
রাতে কোথায় থাকবেন?
নিজের ফ্ল্যাটেই থাকব।
রাতে খাবেন না?
না। আজ রাতটা উপাস দেব। মেজাজ অতিরিক্ত খারাপ হয়েছে। মেজাজ খারাপের কারণে নিরম্বু উপবাস।
উপাস দিলে কি মেজাজ ঠিক হয়?
হয়।
আমিন উঠে চলে গেল।
রাতে খাওয়া-দাওয়া শেষ করে রুস্তম উপন্যাস নিয়ে বসেছে, তখন হাসিমুখে মুনিয়া উপস্থিত হয়ে বলল, ভালো খবর আছে স্যার। আলমারি তিনটা বের হয়েছে।
কিভাবে বের হলো?
নিচে যে থাকেন, সবসময় সুট-টাই পরা, উনি সব শুনে নিজে দায়িত্ব নিয়েছেন। কাল দুপুরের মধ্যে সব ঠিক হয়ে যাবে।
ভালো তো।
স্যার আপনি উনাকে কখনো ছাড়বেন না। উনি খুবই কাজের মানুষ। আপনার আশপাশে কাজ জানা লোক থাকা দরকার।
আচ্ছা ঠিক আছে। এখন যাও।
আজকেও কি অনেক রাত পর্যন্ত লিখবেন?
হ্যাঁ। আমি এ উপন্যাসটা একটু অন্যভাবে লিখছি। ধারাবাহিকভাবে লিখছি না। ঘটনাগুলো আলাদা আলাদা করে লিখছি। পরে একত্র করে দেব। কেমন হবে?
খুবই ভালো হবে। ফ্লাস্কে করে চা এনে আপনার টেবিলে রাখব?
না। লেখার সময় আমার চা-কফি কিছু লাগে না।
আমি যদি আপনার পেছনে বসে থাকি, আপনার কি সমস্যা হবে? আমি কোনো শব্দ করব না। নিঃশ্বাসও ফেলব খুব সাবধানে।
শব্দ না করলে বসে থাকো।
স্যার, থ্যাংক ইউ।
ময়ুরী, একটা অদ্ভুত কথা শুনবে?
অবশ্যই শুনব। স্যার আপনি যে কথাই বলেন আমার কাছে এত অদ্ভুত লাগে! অদ্ভুত কথাটা কী?
উপন্যাসের নাম ঝিঁঝি রাখার পর থেকে প্রায়ই আমি মাথার ভেতর ঝিঁঝির ডাক শুনি।
স্যার একটা কথা বলি?
বলো।
উপন্যাসের নাম বদলে পাখি রেখে দেখুন মাথায় পাখির ডাক শোনেন কি না।
নাম চেঞ্জ করা যাবে না। তবে বুদ্ধিটা ভালো। একদম শব্দ করবে না।
চুপ করে বসে থাকো।
মুনিয়া চুপ করে বসে আছে। রুস্তম প্রণাশের মৃত্যু অংশটি লিখছে। উপন্যাস একত্র করার সুবিধার জন্য প্রতিটি অংশের আলাদা শিরোনাম দেওয়া। মূল উপন্যাসে শিরোনাম থাকবে না।
প্রণাশের মৃত্যু
ইলিশ মাছটা এত ফ্রেশ ছিল তা আগে বোঝা যায়নি। সরিষার ঝুঁজটা চোখে-মুখে লাগছে। প্রণাশ বলল, অসাধারণ রান্না হয়েছে খুকি। প্রণাশ যখন খুব আনন্দে থাকে তখন তার স্ত্রীকে খুকি ডাকে।
প্রণাশের স্ত্রী সীতা নাকে-মুখে শাড়ির আঁচল চেপে বসে আছে। ইলিশ মাছের গন্ধ সে সহ্য করতে পারে না। তার বমি আসে।
প্রণাশ বলল, আমরা ইলিশ মাছ খাই তার গন্ধের জন্য। তোমার উচিত, সাহেবদের মতো ভেটকি মাছ খাওয়া। ভেটকি মাছে গন্ধ নাই, কাঁটা নাই, কিছুই নাই। স্বাদ হলো আলুর মতো। বুঝেছ?
সীতা বলল, বুঝেছি।
প্রণাশ বলল, তোমার পুত্র কোথায়?
ঘুমিয়ে পড়েছে।
ইলিশ মাছ খেয়েছিল?
না।
না খেয়ে ঘুমিয়েছে?
হুঁ। বাজার এনেছ দেরিতে। রান্না শেষ করে দেখি ঘুমাচ্ছে।
যাও ডেকে তোলো। পিতা-পুত্র একসঙ্গে ইলিশ মাছ খাব। খাবার সময় আমার মোবাইল ফোনে একটা ছবি তুলে রাখবে।
মোবাইল ফোনে কিভাবে ছবি তুলতে হয় আমি জানি না।
camera option-এ যেতে হবে। যাও ছেলেকে ডেকে আনে।
সীতা অনেক কষ্টে ছেলের ঘুম ভাঙিয়ে কোলে করে খাবার ঘরে এসে দেখে, প্রণাশ মরে পড়ে আছে।
লেখা বন্ধ করে রুস্তম ভুরু কুঁচকে খাতার দিকে তাকিয়ে আছে। মুনিয়া বলল, কোনো সমস্যা হয়েছে স্যার?
রুস্তম বলল, হয়েছে।
কী সমস্যা?
মৃত্যুদৃশ্যটা আমার পছন্দ হয়নি। একটা মানুষ একা একা কেন মারা যাবে? মৃত্যুর সময় তার প্রিয়জন কেউ থাকবে না?
থাকা উচিত। স্যার আপনি নতুন করে লিখুন।
তাই করা উচিত। প্রণাশ খাওয়া-দাওয়া শেষ করে খাটে বসে পান চিবুচ্ছে। পাশে তার স্ত্রী। এই সময় মৃত্যু। কেমন হয়?
খুব ভালো হয়।
রুস্তম আবার লেখা শুরু করল।
প্রণাশের মৃত্যু
(version two)
প্রণাশ বলল, সীতা একটা পান খাওয়াতে পারবে? সীতা বলল, ঘরে পান নেই। কোনোদিন পান খাও না, আজ হঠাৎ পান খেতে চাচ্ছ কেন?
পান খেতে ইচ্ছা করছে। তোমার বুয়া তো পান খায়, তার কাছ থেকে একটা পান এনে দাও না।
শুধু পান? না সঙ্গে জর্দাও লাগবে?
খাব যখন ভালো করেই খাব। জর্দা, এলাচ, লবঙ্গ…
মুনিয়া বলল, স্যার আপনাকে ডাকে।
কে ডাকে?
আপনার আর্ট টিচার হোসেন সাহেব।
রুস্তম ঘাড় ঘুরিয়ে দেখল, হোসেন দরজার বাইরে পায়চারি করছে। তার জিভ মুখ থেকে বের হয়ে আছে। মনে হচ্ছে রাগ কমানোর চেষ্টায় আছে। রুস্তমের চোখে চোখ পড়া মাত্র হোসেন বলল, আপনার সঙ্গে আমার অত্যন্ত জরুরি কিছু কথা আছে। কাইন্ডলি কাম টু মাই রুম।