কফি খাব না।
আমি আপনাকে আগেও বলেছি, এখন আবার বলছি–আপনাকেই আপনার চিকিৎসা করতে হবে।
কিভাবে?
কোনটা বাস্তব, কোনটা অবাস্তব এটা চিন্তা করে বের করতে হবে। আপনি কি কখনো দেখেছেন, কোনো লাঠি মেঝেতে পড়ে গেলে সাপ হয়ে যায়?
না, দেখিনি। তবে হজরত মুসা আলায়েস সালামের লাঠি মেঝেতে পড়লে সাপ হয়ে যেত।
আপনার লাঠি কি সেই লাঠি?
না।
আপনি এক কাজ করবেন। আজ বাসায় গিয়েই লাঠিটা বের করে মেঝেতে ফেলবেন। ফেলার পর কী দেখবেন বলুন তো?
দেখব লাঠি সাপ হয়নি। লাঠি লাঠিই আছে।
আমার ধারণা, আপনি দেখবেন লাঠিটা সাপ হয়ে গেছে। আপনার ব্রেইন সে রকম সিগন্যাল দেবে। আপনি তখন আপনার সঙ্গে অন্য কাউকে রাখবেন। সে কিন্তু লাঠি দেখবে, সাপ দেখবে না। তখন তার কথা বিশ্বাস করবেন। এ কাজগুলো আপনাকেই করতে হবে।
আজ কি উঠব?
হ্যাঁ, আজ বিদায়। আর দয়া করে যার লাঠি তাকে ফেরত দিয়ে বাড়ি থেকে ঝামেলা বিদায় করুন।
আচ্ছা। আপনার এখানে যখনই আসি তখনই একটা কথা জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছা করে। যাওয়ার সময় মনে থাকে না।
আজ কি মনে আছে?
আছে।
তাহলে জিজ্ঞেস করুন।
জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছা করছে না।
তারপরেও জিজ্ঞেস করুন। প্রশ্ন চাপা দিয়ে ঘুরে বেড়ানো কোনো কাজের কথা না।
স্বামী বিবেকানন্দের পাশের ছবিটা কার?
রামকৃষ্ণ পরমহংসের। তাঁকে বলা হয় কলির অবতার। আমি উনার পরমভক্ত।
ও আচ্ছা।
উনিও কিন্তু স্কিজিওফ্রেনিক ছিলেন। ভক্তরা বলত, প্রায়ই তাঁর ভাব সমাধি হতো। আসলে যেটা হতো তা হলো epleptic seizure.
ও আচ্ছা।
রামকৃষ্ণ সুন্দর সুন্দর কথা বলে গেছেন। আমার কাছে একটা বই আছে, নাম রামকৃষ্ণ কথামালা। বইটা কি পড়বেন? দেব আপনাকে?
না।
রুস্তম দুলাভাইয়ের সঙ্গে রিকশায় করে ফিরছে। তাদের গাড়ি পেছনে পেছনে আসছে। গাড়িতে চড়লেই রুস্তমের দম বন্ধ হয়ে আসে বলে এই ব্যবস্থা।
রুস্তম বলল, দুলাভাই! এবারে মায়ের মৃত্যুদিবসে আপনি কি ফকির খাইয়েছিলেন?
অবশ্যই। পাঁচজন ফকির খাইয়েছি। এতিমখানায় এক বেলা খাবার দিয়েছি। শুধু মিলাদ পড়ানো হয় নাই। কেন বলো তো?
বুবুর ধারণা, আপনি এইবার কিছু করেননি।
তার এ রকম ধারণা হলো কেন?
বুবু ভেবেছে, আপনি এসব করতেন শুধু বুবুকে খুশি করার জন্য।
খুবই ভুল ধারণা। আমার শাশুড়ি আমাকে অত্যন্ত স্নেহ করতেন। মানুষ হিসেবে তিনি ছিলেন ফেরেশতা পর্যায়ে অতি পুণ্যবতী রমণী। তোমার এবং তোমার বোনের মধ্যে সৎগুণ যা আছে, তা সবই তোমরা পেয়েছ উনার কাছ থেকে।
বুবুর সঙ্গে কি আপনার কথা হয়েছে?
না।
বুবু সিঙ্গাপুর থেকে মালয়েশিয়া যাবে জাহাজে করে। জাহাজে ক্যাসিনো আছে। জুয়া খেলতে খেলতে যাবে।
জুয়া খেলবে?
হুঁ।
গুড, জুয়া খেলুক। মদ খেয়ে মাতাল হয়ে জাহাজের ডেকে উলঙ্গ নৃত্য করুক, আমার কিছুই যায় আসে না। ওর কথা বাদ থাক। ডাক্তার কী বললেন?
বললেন, তিনি আমার অন্ধ উইপোকা কবিতাটা খুব পছন্দ করেছেন।
আর কিছু বলেননি?
সাপ নিয়ে কিছু কথা বলেছেন।
সাপের কথা এলো কেন?
রুস্তম জবাব দিল না। সবসময় তার কথা বলতে ভালো লাগে না।
আমিন বললেন, আমি সিগারেট ধরালে কি তোমার সমস্যা হবে?
রুস্তম বলল, আপনি তো সিগারেট খেতেন না।
এখন খাওয়া শুরু করেছি। সারাদিনে দেড় প্যাকেট লাগে। টেনশন কমানোর জন্য খাচ্ছি।
টেনশন কি কমেছে?
না। তারপরেও চেষ্টা। যে ফ্ল্যাটে আছি, সেটাও ছেড়ে দিতে হবে।
কেন?
ফ্ল্যাটটা তোমার বুবুর নামে কেনা। সে যে এই কাণ্ড করবে, জীবনেও ভাবি নাই।
বুবুর তেমন দোষ নাই। আপনার গায়ে ঘামের গন্ধ।
আর ওই হারামজাদার গা দিয়ে কি গোলাপের গন্ধ বের হচ্ছে?
রুস্তম জবাব দিল না। আমিন সিগারেট ধরানোর চেষ্টা করতে করতে বললেন, ফ্ল্যাট ছেড়ে দিলে থাকার জায়গা থাকে না। তোমার বাড়িতে উঠব।
জি আচ্ছা। কবে আসবেন?
কাল-পরশুর মধ্যে চলে আসব। তোমার একটা বিষয়ে সাহায্যও দরকার। কিভাবে সামিনাকে জন্মের শিক্ষা দেওয়া যায়। বাকি জীবন যাতে তুষের আগুনের মতো ধিকিধিকি জ্বলে। অনেকগুলো প্ল্যান মাথায় এসেছে। প্রথম প্ল্যান আফতাবকে জন্মের মতো আউট করা। গোলাপের ফ্যাক্টরি শেষ। হা হা হা।
রুস্তম বলল, গোলাম মওলা আংকেলের সঙ্গে আমি কথা বলে রেখেছি। উনার আবার আসার কথা, তখন মনে করিয়ে দিব।
অনেক চেষ্টাতেও সিগারেট ধরল না। রিকশা চলছে, বাতাসও আছে। আনাড়ি হাতে ম্যাচ ধরানো কঠিন।
রুস্তম।
জি দুলাভাই।
আফতাব হারামজাদার জন্য আমি একটা মাস্টার প্ল্যান করেছি। শুনলে তুমি চমকে উঠবে। রিকশায় বলা যাবে না। কাল-পরশুর মধ্যে তোমাদের বাড়িতে চলে আসব, তখন বলব।
জি আচ্ছা।
দক্ষিণমুখী একটা ঘর আমার জন্য ঠিক করে রেখো।
মার ঘরে ঘুমাবেন? ঘরটা তালাবদ্ধ আছে। দক্ষিণমুখী।
আমার কোনো অসুবিধা নাই। একজন মানুষ ওই ঘরে মারা গেছে, তাতে কী হয়েছে? মানুষের জন্ম-মৃত্যু থাকবেই।
আমিন সিগারেট ধরানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখলেন।
রাত আটটা বাজে।
রুস্তম তার ঘরে ঢুকে ডাকল, ময়ূরী।
মুনিয়া ঝড়ের গতিতে উপস্থিত হলো। রুস্তম বলল, আমি তোমার সামনে ছোট একটা পরীক্ষা করব। ডাক্তার সাহেব এই পরীক্ষা করতে বলেছেন।
কী পরীক্ষা?
কাবার্ড খুলে আমি সাপটা বের করব। তুমিও দেখবে এবং বলবে কী দেখেছ।
রুস্তম কাবার্ড খুলেই লাফ দিয়ে সরে গেল। হলুদ রঙের একটা সাপ মেঝেতে পড়ে ফণা তুলেছে।
রুস্তুম ভীত গলায় বলল, সাপটাকে দেখতে পাচ্ছ?