স্যার কি ঘুমায়ে পড়েছেন?
না। তবে কিছুক্ষণের মধ্যে ঘুমিয়ে পড়ব।
আমার রাতে ঘুম আসে না।
ঘুমের ওষুধ খাবে? দেব?
জি না। আপনে ঘুমান। আমি আপনার পাহারায় আছি। সাপের শব্দ কি এখনো শুনছেন স্যার?
না। ফোঁসফোঁসানি কমেছে।
আপনার মাথায় যন্ত্রণা করলে বলেন, আমি মাথা টিপে ঘুম পাড়ায়ে দিব। আমার মতো মাথা মালিশ নাপিতেও জানে না।
আমার মাথায় যন্ত্রণা করছে না। তুমি কথা না বললেই আমি ঘুমিয়ে পড়ব।
কথা বলা বন করলাম।
শুভ রাত্রি মুনিয়া।
স্যার আমারে মুনিয়া ডাকবেন না। আপনি আমাকে যে নাম দিয়েছেন, সেই নামে ডাকবেন। বলেন, শুভ রাত্রি ময়ূরী।
শুভ রাত্রি ময়ূরী।
রুস্তমের ডাক্তারের নাম রেণুবালা। সাইকিয়াট্রিতে PhD করেছেন ইউনিভার্সিটি অব আরিজোনা থেকে। মেরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পোস্ট ডক করেছেন স্কিজোফ্রেনিয়ার ওপর। তাঁর বয়স চল্লিশের মতো। সবসময় সাদা শাড়ি এবং শাড়ির ওপর সাদা অ্যাপ্রন পরেন। হিন্দু মেয়েরা আজকাল সিঁদুর দেওয়া ছেড়ে দিয়েছে। লেড অক্সাইড দিয়ে সিদুর বানানো হয়, এটা একটা কারণ। দ্বিতীয় কারণ, বিয়ে হয়েছে এই সার্টিফিকেট তারা মাথায় পরে ঘুরতে চায় না। ড. রেণুবালা দে মাথায় সিঁদুর পরেন। সাদা শাড়ি, মাথাভর্তি কুচকুচে কালো চুলের মাঝখানে টকটকে লাল রঙের সিঁদুরে তাকে খুব মানায়।
রুস্তম তার কাছে যখনই আসে, মুগ্ধ চোখে সিঁদুরের দিকে তাকিয়ে থাকে। ড. রেণুবালা রুস্তমকে ডাকেন রু আদে। রুস্তমের কবিতার বইটি তিনি পড়েছেন। তাঁর চেম্বার বইপত্রে ঠাসা। দেয়ালে দুটা ছবি আছে, একটা স্বামী বিবেকানন্দের। এই ছবি ক্যামেরার ল্যান্সের দিকে তাকানো অবস্থায় তোলা বলে রুস্তমের মনে হয়, স্বামী বিবেকানন্দ তার দিকে তাকিয়ে আছেন। তার খানিকটা অস্বস্তি লাগে। দ্বিতীয় ছবিতে খালি গায়ে মোটাসোটা এক লোক বসা। হাসি হাসি মুখ। গালভর্তি খোঁচা খোঁচা দাড়ি। রুস্তম একে চেনে না। সবসময় ভাবে, পরিচয় জিজ্ঞেস করবে। শেষ মুহূর্তে জিজ্ঞেস করা হয় না।
রু আদে সাহেব কেমন আছেন?
জি ভালো।
আজ কি একা এসেছেন?
না। দুলাভাই সঙ্গে এসেছেন, তিনি ওয়েটিং রুমে বসে আছেন।
আপনাকে তো বলেছি, একা আসার অভ্যাস করুন।
দুলাভাই আমাকে একা ছাড়তে চান না। যেখানেই যাই, তিনি সঙ্গে Tai
আপনার ছবি আঁকা কেমন চলছে?
ভালো চলছে।
শেষ কী ছবি এঁকেছেন?
ছবি আঁকা এখনো শুরু করিনি। রঙ মেশানো শিখছি।
একটা উপন্যাস শুরু করবেন বলেছিলেন। শুরু করেছেন?
জি। মাত্র দুই লাইন লিখেছি।
উপন্যাসের নাম কী দিয়েছেন?
ঝিঁঝি।
সুন্দর নাম। ঘুম ঠিকমতো হচ্ছে?
জি।
অদ্ভুত কিছু কি দেখেছেন বা কোন Strange experience কি রিসেন্টলি হয়েছে?
জি না। তেমন কিছু হয়নি।
ভয় পাওয়ার মতো কিছু ঘটেনি?
সামান্য ভয় পেয়েছি।
কী দেখে ভয় পেয়েছেন?
কিছু দেখে ভয় পাইনি, শব্দ শুনে ভয় পেয়েছি। ফোঁসফোসানি শব্দ।
কে ফোঁসফোঁস করছিল?
একটা সাপ। কাবার্ডের ভেতর থেকে ফোঁসফোঁস করছিল।
কাবার্ডে সাপ গেল কিভাবে?
আমি রেখেছি।
আপনি কাবার্ডে সাপ রেখেছেন?
না, আমি রাখিনি। আমি একটা বাঁকানো বেতের লাঠি রেখেছিলাম। খাড়া করে রাখা ছিল। মনে হয় কোনো কারণে লাঠিটা পড়ে গিয়েছে। এই লাঠির বিশেষত্ব হচ্ছে, শোয়ানো অবস্থায় এটা সাপ হয়ে যায়।
লাঠিটা আপনাকে কে দিয়েছে?
গোলাম মওলা আংকেল দিয়েছেন। দিতে চাননি, আমি জোর করে নিয়েছি।
এমন একটা ভয়ঙ্কর জিনিস জোর করে কেন নিলেন?
ভয়ঙ্কর বলেই নিয়েছি। মানুষ সুন্দর যেমন ভালোবাসে, ভয়ঙ্করও ভালোবাসে।
রু আদে সাহেব?
জি বলুন।
আপনি খুবই স্বাভাবিক একজন মানুষ। বুদ্ধিমান, ক্রিয়েটিভ। আপনার কবিতার বইয়ের সবকটা কবিতা আমি পড়েছি। বিশেষ করে অন্ধ উইপোকা কবিতাটা। আমি প্রচুর কবিতা পড়ি। ভালো কবিতা এবং মন্দ কবিতার তফাৎ ধরতে পারি।
ধন্যবাদ।
আপনার কবিতার বইয়ের প্রচ্ছদ কি আপনার আঁকা?
জি না।
আমি বিশ্বাস করি, আপনি ছবিও আঁকবেন। নিজের বইয়ের প্রচ্ছদ নিজে করবেন।
ধন্যবাদ। এখন যে প্রচ্ছদ আঁকা আছে সেখানে ছোট্ট সমস্যা হয়েছে।
কি সমস্যা বলুন তো?
প্রচ্ছদে একটা পাখি আঁকা ছিল। পাখিটা সাইকেলের চাকায় বসা ছিল। এখন দেখি পাখিটা বসে আছে চায়ের কাপে।
চা খাচ্ছে?
খেতে চাচ্ছে। চা অতিরিক্ত গরম বলে খেতে পারছে না।
রেণুবালা ছোট্ট নিঃশ্বাস ফেলে বললেন, আপনার একটাই সমস্যা, আপনার বাস্তব জগতের পাশাপাশি একটি অবাস্তব জগৎও আছে। অবাস্তব জগৎটাও আপনার কাছে বাস্তব।
কেন?
চট করে এই কেনর জবাব দেওয়া যাবে না। ব্রেইনের নিওরোল কানেকশনে শর্টসার্কিট হলে এ রকম হয়। অনেকে ড্রাগ খেয়ে এই শর্টসার্কিট নিজেরা করে। সাইকাডেলিক ড্রাগ যেমন LSD, ধুতরা। এদের কম্পেজিন serotonin এবং Dopamine-এর মতো। এ দুটি কেমিক্যাল হলো নিউরোট্রান্সমিটার। ঘাগ নিউরোট্রান্সমিটারের কার্যক্রম বদলে দেয় বলে ঘটনা ঘটে।
আমি তো কোনো ড্রাগ থাই মা।
জানি। কারো কারো ক্ষেত্রে ড্রাগ ছাড়াই এ রকম ঘটে। সবচেয়ে বড় উদাহরণ হচ্ছে, কালজয়ী ঔপন্যাসিক ফিওদর দস্তয়োভস্কি। তার প্রায়ই epliptic সিজারের মতো হতো। ঘোর কেটে গেলে তিনি বলতেন, ঈশ্বর কী, মানুষ কী, জগতের সঙ্গে ঈশ্বর এবং মানুষের সম্পর্ক কী, তা তিনি কিছুক্ষণের জন্য হলেও জেনেছেন।
ও আচ্ছা।
রু আদে সাহেব, আপনি কি কফি খাবেন? আমার এখানে খুব ভালো কফি বানানো হয়।