জি আচ্ছা।
আর ড্রাইভার হারামজাদাটাকে জেগে থাকতে বলবে, তার সঙ্গে আমার কথা আছে।
জি আচ্ছা।
সকিনা জ্বর দেখে ভীত গলায় বলল, ভাইজানের জ্বর অনেক বেশি মা। একশ তিন।
ভালুক জ্বর
ভালুক জ্বর বলে একটা কথা আছে। হঠাৎ হঠাৎ কোনো কারণ ছাড়াই সারা শরীর কাঁপিয়ে ভালুকের জ্বর আসে। সে কুকড়ি-মুকড়ি হয়ে পড়ে থাকে। জুরের তড়াসে তার শরীর কাঁপতে থাকে। দেখতে দেখতে হুট করে জ্বর চলে যায়। সে গা ঝাড়া দিয়ে দুপায়ে উঠে দাঁড়ায়।
শুভ্রর জ্বর সম্ভবত ভালুকগোত্রীয়। ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই সে বিছানায় উঠে বসল। খুশি খুশি গলায় সকিনাকে ডেকে চা দিতে বলল। তার কাছে মনে হচ্ছে জ্বর এসে চলে যাওয়ায় ভালো হয়েছে। মাথাটা পরিষ্কার লাগছে। এখন ঠাণ্ডা মাথায় সফটওয়্যারটা নিয়ে বসা যায়। যুক্তাক্ষরের সমস্যাটার সমাধান করা যায়। তৃতীয় কোনো ব্যক্তিকে উপস্থিত রাখতে পারলে ভালো হতো। সে শব্দ শুনে বলতে পারত কোন শব্দটা কানে শুনতে ভালো লাগে। রুনু মেয়েটাকে খবর দিয়ে নিয়ে আসতে পারলে ভালো হতো। সেটা তো সম্ভব না।
জাহানারা বাড়িতে ফিরে দেখেন, শুভ্র কম্পিউটারের সামনে উবু হয়ে বসে আছে। কী-বোর্ডে চাপ দিচ্ছে। পো পি শব্দ হচ্ছে। শুভ্ৰ শব্দ শুনছে। চোখ বন্ধ করে। তিনি বিস্মিত হয়ে বললেন, এই তোর না জ্বর? শুভ্ৰ হাসিমুখে বলল, জ্বর নেই মা। কপালে হাত দিয়ে দেখ।
জাহানারা ছেলের কপালে হাত দিলেন। আসলেই জ্বর নেই। শরীর ঠাণ্ডা। শুভ্র বলল, তুমিই বলো জ্বর কি আছে?
জাহানারা বললেন, জ্বর নেই। তবে তোর জ্বর কীভাবে চলে গেছে সেটা শুনলে তুই চমকে উঠবি।
শুভ্র বলল, বলো তো শুনি।
জাহানারা বললেন, তোর জ্বর শোনার পর আমি পীর সাহেবকে বললাম। উনি চোখ বন্ধ করে কিছুক্ষণ দোয়া পড়লেন। তারপর চোখ মেলে আমার দিকে তাকিয়ে হাসলেন। তখনি বুঝেছি। কাজ হয়েছে। তুই হাসছিস কেন? আমার কথা বিশ্বাস হচ্ছে না? তোকে একদিন আমি হুজুরের কাছে নিয়ে যাব।
আচ্ছা।
আজকের বেড়ানো কেমন হয়েছে?
খুবই ভালো হয়েছে। ঝমোঝম করে বৃষ্টি হচ্ছিল। ভিজে দারুন মজা পেয়েছি।
জাহানারা ছেলের কাঁধে হাত রাখতে রাখতে বললেন, এখন থেকে তুই যখন বাইরে কোথাও যাবি- আমি সঙ্গে যাব।
বেশ তো যাবে। আগামীকাল আমি যাব অচিনবৃক্ষ দেখতে। তুমি তোমার ব্যাগ গুছিয়ে নাও। তুমি যাবে, সকিনা মেয়েটিও যাবে। সকিনা পথ-ঘাট দেখিয়ে নিয়ে যাবে।
জাহানারার মুখ শক্ত হয়ে গেল। ঘাড় ব্যথা করতে লাগল। প্রেসারের লক্ষণ। চট করে প্রেসার বেড়েছে। প্রেসার বাড়লেই তার ঘাড় ব্যথা করতে থাকে। হাতের তালু ঘামে। হাতের তালু ঘামা এখনো শুরু হয় নি, তবে শুরু হবে। আজ ভোরে প্রেসারের ওষুধ খেয়েছেন কি-না। তিনি মনে করতে পারলেন না। নাশতা খাবার পর পর প্রেসারের ওষুধ তার হাতে তুলে দেয়ার দায়িত্ব সকিনার। সে কি দিয়েছে?
শুভ্র বলল, কী হয়েছে মা?
জাহানারা বললেন, কাল যেতে পারবি না। কাল তোর জন্মদিনের উৎসব করব। আমি নিজের হাতে পোলাও রান্না করব।
শুভ্র বলল, কাল আমার জন্মদিন না-কি?
কাল জন্মদিন না, কিন্তু আমি উৎসবটা কাল করব। সন্ধ্যার পর তোকে আমি পীর সাহেবের কাছে নিয়ে যাব। উনি তোর মাথায় ফুঁ দিয়ে দেবেন।
শুভ্র বলল, একটা খালি বোতল নিয়ে যাও মা। বোতলে করে উনার ফু নিয়ে এসো। তারপর সেই ফু আমার মাথায় ঢেলে দিও।
উনাকে নিয়ে ঠাট্টা ফাজলামি করবি না।
আচ্ছা যাও করব না।
জাহানারা উঠে দাঁড়ালেন। তিনি চলে যাবার জন্যে পা বাড়িয়েছেন, শুভ্ৰ খাপ করে তার হাত ধরে তাকে টেনে বসিয়ে দিল। জাহানারার মন ভারী হয়েছিল, শুভ্রর এই কাণ্ডে হঠাৎ করে মন ভালো হয়ে গেল। ঘাড়ের ব্যথা কমে গেল।
শুভ্র বলল, তোমাকে একটা জরুরি কথা জিজ্ঞেস করা হয় নি। ছোটবেলায় একবার আমি বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়েছিলাম, তোমার মনে আছে? তখন আমাকে উদ্ধারের জন্যে এক লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করা হলো। তোমার মনে আছে মা?
জাহানারা বললেন, মনে থাকবে না কেন?
শুভ্র বলল, ঐ পুরস্কারের টাকাটা কে পেয়েছিল?
সেটা জেনে কী করবি?
শুভ্র বলল, রুনুকে খবরটা দিতে হবে। রুনু জানতে চাচ্ছিল।
জাহানারা বিস্মিত হয়ে বললেন, রুনু কে?
শুভ্র বলল, রুনু হচ্ছে মনজুর বোন। অসম্ভব বুদ্ধিমতি একটা মেয়ে।
জাহানারা বললেন, ওর সঙ্গে দেখা হলো কোথায়?
শুভ্র আগ্রহের সঙ্গে বলল, ও তো সারাদিন নৌকায় আমাদের সঙ্গেই ছিল। একসঙ্গে বৃষ্টিতে ভিজলাম।
জাহানারা একদৃষ্টিতে ছেলের দিকে তাকিয়ে আছেন। তিনি কিছুই বুঝতে পারছেন না। রুনু নামের একটা মেয়ে আবার কোথেকে উদয় হলো। শুভ্ৰ কি তার সঙ্গে ঠাট্টা করছে? মার সঙ্গে ঠাট্টা করার অভ্যাস অবশ্যি শুভ্রর আছে।
শুভ্র বলল, মা, তুমি এমন রাগ রাগ চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে কেন? মেয়েটাকে দেখলে তোমার ভালো লাগবে। তার গলার স্বর মিষ্টি। ভাইব্রফোনের আওয়াজের সঙ্গে মিল আছে।
জাহানারা বললেন, মেয়েটাকে কে নিয়ে গিয়েছিল, মনজু?
শুভ্র বলল, না, আমিই মেয়ের মাকে বলে সঙ্গে নিয়ে গেছি। মা শোন, আমরা কিন্তু মূল প্রসঙ্গ থেকে অনেক দূরে সরে যাচ্ছি- এক লাখ টাকা কে পেয়েছিল?
আমি জানি না কে পেয়েছিল।
কে জানে? বাবা জানেন?
জানি না তোর বাবা জানে কি-না।
শুভ্র বলল, বাবা না জানলেও একজন অবশ্যই জানবে। সুলেমান চাচা। মা, তাকে খবর পাঠাও তো।