.
আজ কি ছদরুল বেপারীর কপাল ভাল যাচ্ছে? পান খাচ্ছেন অথচ পান ঝাল লাগছে না। তাঁর জিভে কি যেন হয়েছে বলে পান খেতে পারেন না। ঝাল লাগে। ডাক্তার বলেছে ভিটামিন বি এর অভাব সেই ভিটামিনও গাদা খানিক খেয়ে দেখেছেন। লাভ হয় নি। তাকে পান খেতে হয় খুব কষ্ট করে। আজ কষ্ট হচ্ছে না। একটু পর পর পানের পিক ফেলতে হচ্ছে না। পানের পিকেও ঝাল নেই। আশ্চর্য তো।
তিনি বসে আছেন ক্লাবঘরের ভেতরে। জরুরি কিছু আলোচনা করবেন মাহফুজের সঙ্গে। মাহফুজ তার সামনে বসে আছে। তাকে দেখে মনে হচ্ছে। সে কোন একটা ব্যাপারে চিন্তিত। তার নাটকের জোগাড় যন্ত্রে বোধ হয়। ঝামেলা হয়েছে। ভুজঙ্গ শেষ মুহূর্তে জানিয়েছে তার পাতলা পায়খানা হচ্ছে সে আসতে পারবে না।
ক্লাব ঘরের দরজা জানালা বন্ধ। ক্লাবঘরের বাইরে ছদরুল সাহেবের লোকজন হাঁটাহাটি করছে। একজন শুধু ভেতরে। তার বগলে চামড়ার একটা ব্যাগ। তার গায়ে ছাই রঙের চাদর। চাদর দিয়ে সে চামড়ার ব্যাগ ঢেকে রাখার চেষ্টা করছে। মাঝে মধ্যে ব্যাগের কোনা বেরিয়ে পড়ছে, সে তৎক্ষণাৎ অতিরিক্ত ব্যস্ততায় গায়ের চাদরে ব্যাগ ঢাকছে।
ছদরুল বেপারী একটু ঝুঁকে এসে জিজ্ঞেস করলেন, মাহফুজ মিয়া কেমন আছ?
মাহফুজের নামের শেষে মিয়া নেই ছদরুল বেপারী তার পছন্দের মানুষদের নামের শেষে আদর করে মিয়া যুক্ত করেন। মাহফুজকে তার পছন্দ হয়েছে।
মাহফুজ চিন্তিত গলায় বলল, জ্বি ভাল।
তোমারে চিন্তিত লাগছে কেন?
জ্বি-না, আমি চিন্তিত না।
ভুজঙ্গ এখনো আসে নাই?
জ্বি-না। তার অ্যাসিসটেন্ট চলে এসেছে।
মাঝেমাঝে এ রকম হয়- অ্যাসিসটেন্ট আসে। আসল আর আসে না। তখন কি করা লাগে জান? তখন এ্যসিসটেন্টকে ধরে মাইর দিতে হয় গরু চোরের মাইর। বস্তার ভিতরে ঢুকায়ে মাইর। শইল্যে দাগ পড়ব না। হা হা হা।
মাহফুজ কিছু বলল না। ছদরুল বেপারী হাসিমুখে তার দিকে তাকিয়ে আছেন। মাহফুজ বলল, আপনার কি ইস্কান্দর আলির সঙ্গে দেখা হয়েছে?
ছদরুল বেপারী বললেন, দেখা হয়েছে। তার সঙ্গে খানাপিনা করলাম। বোকা লোক। তবে বোকা লোকরাই সংসারে ঝামেলা তৈরি করে। বুদ্ধিমান লোকদের কাছ থেকে সাবধান থাকার দরকার নাই। বুদ্ধিমান লোকরা নিজেরা ঝামেলা থেকে দূরে থাকতে চায় বলে ঝামেলা করে না। বোকারা এইসব বুঝে না বলে ঝামেলা করে। ইস্কান্দর আলির বিষয়ে তোমাকে সাবধান করে দিলাম। একে গ্রামে রাখা ঠিক না। এখন আমি কাজের কথা শেষ করি। তুমি এমন চিন্তিত মুখ করে বসে থাকবে না। চিন্তা দূর কর। সহজভাবে বস।
মাহফুজ সহজ হয়ে বসার চেষ্টা করল। ছদরুল বেপারী সিগারেট ধরাতে ধরাতে বললেন, তোমারে আমি সর্বমোট দশ লাখ টাকা দিব। ছয় লাখ নগদ। বাকি চার লাখ টাকার দিব ইট সুরকি। আমার ইটের ভাটা আছে। সেখান থেকে ইটা আনবা। আনার খরচ তোমার। সৎ কাজ করে আমি বেহেশতে যাব। হুরপরীদের সাথে রং ঢং করব এই ইচ্ছা আমার নাই। পরের টাকায় সৎ কাজ করে তুমি যদি বেহেশতে যাইতে পার যাও। সেইটা তোমার ব্যাপার। আমি আর দশটা লোকের মত না। মুখে বলব এত টাকা দিলাম তারপরে আর খোঁজ নাই। আমি যা করি নগদ নগদ করি। তোমার ছয় লাখ টাকা আমি নিয়া আসছি। ঐ কালো চামড়ার ব্যাগে টাকাটা আছে। টাকা গোণার দরকার নাই। টাকা গোণা আছে। তোমাকে কোন রশিদও দিতে হবে না। আমি তোমারেই পুরাপুরি দিলাম। আমি তোমার বিষয়ে অনুসন্ধান করেছি। তুমি বেতাল কিছুই করবা না। টাকা নষ্ট হবে না। ঠিক বলেছি?
জ্বি ঠিক বলেছেন।
স্কুল কলেজের কাজ শুরু করে দেও। যদি কোনদিন ঠেকে যাও আমি বেঁচে থাকলে আমার কাছে আসবা। পথের ফকির লোক যারা কোটিপতি হয় তারার খুবই টাকার মায়া থাকে। একটা পয়সা খরচ করতে তাদের কলিজায় লাগে। আমার হয়েছে উল্টা। আমার কলিজায় কিছু লাগে না। কারণ আমার কলিজা নাই যাই হোক এখন তোমারে একটা প্রশ্ন বল দেখি আমি যে এত টাকা দান খয়রাত করি– কেন করি? পুণ্যের আশায় যে করি না এটাতো তোমকে আগেই বললাম। তাহলে করি কেন?
জানি না।
এইসব করি যাতে লোকজন আমার দিকে অন্য ভাবে চায়। আমাকে দেখে যেন ফিসফিস করে বলে- ঐ যায় ছদরুল বেপারী। তোমার স্কুল কলেজ তৈরি হবার পর আমি একদিন স্কুলের সামনে রাস্তা দিয়ে লুঙ্গি পরে স্পঞ্জের স্যান্ডেল পায়ে দিয়ে হেঁটে যাব। তখন স্কুলের সব ছাত্র শিক্ষক পড়া বন্ধ করে আমারে দেখবে। ফিসফিস করে বলবে- ছদরুল সাব যায়। এই ফিসফিসানি শোনার জন্যে করি বুঝলা?
জ্বি।
আচ্ছা এখন অন্য একটা বিষয় নাটকের যে মেয়েটারে তুমি এনেছ তার নাম যেন কি?
চিত্রা।
চিত্রা? আমি প্রথমে ভুল শুনেছিলাম। আমি শুনেছিলাম চিতা, অবাক হয়ে ভেবেছিলাম বাঘের নামে মেয়েছেলের নাম হবে কেন? যাই হোক এই মেয়ে তুমি ময়মনসিংহ থেকে এনেছ?
জ্বি।
সে ময়মনসিংহ যাবে কবে?
কাল তাকে আমি দিয়ে আসব।
ছদরুল বেপারী হাই তুলতে তুলতে বলল, তোমার দিয়া আসার দরকার নাই। আমি নিজে কাল ময়মনসিংহ যাব। আমি তারে যেখানে যেতে চায় দিয়া আসব। তোমার দায়িত্ব শেষ। সব দায়িত্ব এখন আমার। তুমি তারে নাটকের শেষে আমার ওখানে পৌঁছায়ে দিবা। ঠিক আছে? থাক তোমার পৌঁছায়া দেয়ার দরকার নাই। আমার লোকজন তারে নিয়া যাবে।
মাহফুজ খুবই অবাক হয়ে তাকাল। মনে হচ্ছে সে কথাগুলোর অর্থও ধরতে পারছে না। ছদরুল বেপারী হাসিমুখে বললেন আমার কথা শুইন্যা তুমি মনে হয় খুব অবাক হইলা।