রূপার অবশ্যি আলাদাভাবে মন খারাপ। তার আম্মু আজকে স্কুলের সায়েন্স ফেয়ারে আসবেন–সবার প্রজেক্টগুলো দেখবেন, শুধু ক্লাশ এইট বিয়ের মিরূসোরাস টিমের টেবিলে গিয়ে দেখবেন সেটা খালি। তারপর বাসায় গিয়ে সেটা নিয়ে রূপাকে বাকি জীবন খোটা দেবেন। অন্যেরা কত সুন্দর প্রজেক্ট করেছে আর সে কিছুই করতে পারেনি সেটা একটু পরে পরে মনে করিয়ে দেবেন। তাদের প্রজেক্টটা দিয়ে যে একটা ড্রাগ ডিলারের আস্তানা থেকে পালিয়ে এসেছে সেটা বুঝতেই চাইবেন না। যখন পুরস্কার দেওয়া হবে তখন যে তারা কোনো পুরস্কার পাবে না সেটা নিয়ে নানারকম কথাবার্তা বলবেন। পৃথিবীতে মায়েরা তাদের ছেলেমেয়েদের ভালোবাসে কিন্তু তার মা কেন তাকে দুই চোখে দেখতে পারেন না কে জানে!
মিম্মি বলল, “ঐ যে বিজ্ঞান ম্যাডাম আসছেন।”
রূপা তাকিয়ে দেখল বিজ্ঞান ম্যাডাম লম্বা লম্বা পা ফেলে তাদের দিকে এগিয়ে আসছেন। তারা চারজন উঠে দাঁড়াল, ম্যাডাম কাছে এসে বললেন, কী হল তোমরা মাঠের মাঝখানে বসে আছ কেন?”
রূপা বলল, “আমাদের মন খারাপ সেই জন্যে।”
“মন খারাপ কী জন্যে?”
“আমাদের কোনো প্রজেক্ট নাই সেই জন্যে।”
ম্যাডাম তাদের পুরো অ্যাডভেঞ্চারের সবকিছু জানেন, তাই তাদের সান্ত্বনা দিলেন, বললেন, “কে বলেছে প্রজেক্ট নাই! তোমাদের প্রজেক্টটাই তো সবচেয়ে
বেশি আছে। সেটা ব্যবহার করে কত কাজ করেছ।”
“কিন্তু এখানে তো নাই।”
“তাতে কী আছে? পরেরবার হবে। এখানে বসে থেকে কী করবে? ভেতরে যাও। তোমাদের টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে থাক।”
রাজু বলল, “এমনি এমনি দাঁড়িয়ে থাকব?”
“কিছু একটা বল। কোনো একটা আইডিয়া–”
“আইডিয়া?”
“হ্যাঁ। সেটাই হোক তোমাদের প্রজেক্ট!”
মিম্মি বলল, “এখন চিন্তা করে আইডিয়া বের করব?”
“হ্যাঁ। কোনো আইডিয়া নাই? আমি যখন তোমাদের বয়সী ছিলাম তখন মাথার মাঝে কত আইডিয়া কিলবিল কিলবিল করত।”
সঞ্জয় চোখ বড় বড় করে বলল, “আমার মাথায় একটা আইডিয়া এসেছে।”
ম্যাডাম বললেন, “গুড! সেটা নিয়ে দাঁড়িয়ে যাও।”
“বলব আইডিয়াটা?”
“আমাকে বলার দরকার নেই, নিজেরা নিজেরা ঠিক করে নাও।” ঠিক তখন ম্যাডামের মোবাইল ফোন বাজল, ম্যাডাম তখন ফোনে কথা বলতে বলতে স্কুলের দিকে হেঁটে চলে গেলেন।
রাজু সঞ্জয়ের দিকে তাকিয়ে বলল, “তোমার আইডিয়াটা কী?”
“ডারউইন না কে বলেছেন যে, মানুষ বাঁদর থেকে এসেছে।”
“হ্যাঁ।”
“সেটা ভুল। আমরা এইটাই বলব।”
“ডারউইন ভুল?”
“হ্যাঁ। মানুষ যদি বাদর থেকে আসত তা হলে এখন কেন বাঁদর থেকে মানুষ হচ্ছে না। কোনোদিন চিড়িয়াখানায় দেখেছিস কোনো বানরের লেজ খসে সে মানুষ হয়েছে?”
মিম্মি সঞ্জয়ের কথা শুনে হি হি করে হাসতে লাগল। রূপা বলল, “পরশু দিনের পেপার দেখেছিস?”
সঞ্জয় বলল, “কেন? কী আছে পেপারে?”
“পৃথিবীর সব বিজ্ঞানীরা মিলে ঠিক করেছেন এই পৃথিবীতে বিজ্ঞানের যত আবিষ্কার আছে তার মাঝে ফার্স্ট হচ্ছে ডারউইনের বিবর্তন থিওরি। আর তুই বলবি সেটা ভুল? তোক হাসাবি?”
“কিন্তু আমার যুক্তিতে ভুল কোথায়? দেখেছিস বাঁদরকে মানুষ হতে? দেখেছিস?”
“তোর কথাটাই ভুল। ডারউইন মোটেও বলেননি, মানুষ বাঁদর থেকে এসেছে। ডারউইন বলেছেন, মানুষ আর বাঁদর দুটোই একটা প্রাণী থেকে এসেছে। একটা ভাগ হয়েছে মানুষ আরেকটা ভাগ হয়েছে বাঁদর। আরেকটা ভাগ হয়েছে শিম্পাঞ্জী, আরেকটা গরিলা–এরকম।”
সঞ্জয় রূপার যুক্তি মানতে চাইল না, গলার রগ ফুলিয়ে তর্ক করতে শুরু করল। রাজু তখন বলল, “ব্যস, অনেক হয়েছে। নিজেরাই যেটা নিয়ে তর্ক করবে সেইটা তো আর ওখানে বলতে পারবে না!”
রূপা বলল, “কিন্তু আমাদের তো একটা আইডিয়া দরকার।”
রাজু বলল, “হ্যাঁ। বৈজ্ঞানিক আইডিয়া।”
মিম্মি মাথা চুলকে বলল, “আমরা যদি বলি একটা টাইম মেশিন তৈরি করে আমরা অতীতে চলে যাব। গিয়ে যত রাজাকার আছে সবগুলোকে ঝুলিয়ে দেব।”
রূপা বলল, “টাইম মেশিনটা বানাবি কেমন করে?”
“বানাতে হবে কেন? ম্যাডাম বলেছেন আইডিয়ার কথা। ম্যাডাম তো বলেননি বানাতে হবে। বলেছেন?”
“কিন্তু টাইম মেশিনের আইডিয়া তো আর আমাদের আইডিয়া হল না।”
মিম্মি মাথা নাড়ল। রাজু বলল, “তা হলে ব্ল্যাক হোল দোষ করল কী? ছোট একটা ব্ল্যাক হোল দিয়ে যত ময়লা-আবর্জনা শুষে নেবে।”
রূপা বলল, “আর তার সাথে সাথে যখন তোকে আমাকেও শুষে নেবে তখন কী হবে?”
রাজু মাথা চুলকাল, বলল, “তা ঠিক।”
তাদের পায়ের কাছে একটা পানির বোতল পড়েছিল, রূপা বোতলটা নিয়ে খানিকটা পানি খেয়ে মুখ বিকৃত করে বলল, “ধুর! পানিটা গরম হয়ে গেছে।”
মিম্মি বলল, “রোদে ফেলে রেখেছিস পানি গরম হবে না?”
হঠাৎ করে রূপা চোখ বড় বড় করে বলল, “ইউরেকা! পেয়েছি!”
“কী পেয়েছিস?”
“আইডিয়া।”
“কী আইডিয়া?”
“রোেদ দিয়ে পানি গরম করা।”
রাজু হতাশভাবে মাথা নাড়ল, বলল, “এইটা তোমার নতুন আইডিয়া! সারা দুনিয়ার সবাই জানে যে সূর্যের আলো দিয়ে পানি গরম করা যায়।”
রূপা উত্তেজিত গলায় বলল, “কিন্তু আমরা বলব অন্যভাবে।”
“কীভাবে বলবে?”
“আমরা বলব আমরা যদি ঠাণ্ডা পানি দিয়ে রান্না না করে সূর্যের আলো দিয়ে পানিটাকে একটু গরম করে রান্না করি তা হলে অনেক জ্বালানি বেঁচে যাবে।”
সঞ্জয় ভুরু কুঁচকে বলল, “সূর্যের আলো দিয়ে পানি গরম?”