রাজু বলল, “আমাদের কাছে ফিল্মের কৌটাগুলো আছে। তার মাঝে খাবার সোডা আর ভিনেগার ভরে সেগুলোও ছুঁড়ে দিতে পারি। ঠাস ঠাস শব্দ করে সেগুলো ফুটতে থাকবে।”
রূপা হাতে কিল দিয়ে বলল, “গুড আইডিয়া।”
ওরা তখনই কাজ শুরু করে দিল। প্রথমে ফিল্মের কৌটাগুলো খুলে সারি সারি সাজিয়ে রাখল তারপর সবগুলোর ভেতর একটু করে খাবার সোডা ঢালল। যখন সেগুলো ছোঁড়ার সময় হবে তখন ভেতরে একটু ভিনেগার ঢেলে মুখ বন্ধ করে ছুঁড়ে দেবে।
এরপর ওরা সবগুলো স্মোক বম্ব বের করে নেয়। সঞ্জয়ের পকেটে ম্যাচ ছিল, সেটা দিয়ে প্রথমে কাগজে আগুন ধরিয়ে নিল। রূপা আর মিম্মি স্মোক বম্বে আগুন লাগিয়ে দেবে, সঞ্জয় সেগুলো ছুঁড়ে দেবে। রাজু ফিল্মের কৌটায় ভিনেগার ঢেলে মুখটা বন্ধ করে ছুঁড়ে দিতে থাকবে।
রূপা জিজ্ঞেস করল, “সবাই রেডি?”
“হ্যাঁ।”
সোহেল নির্জীব গলায় জিজ্ঞেস করল, “কীসের জন্যে রেডি?”
“আমরা দরজা ভেঙে পালিয়ে যাব।”
“ও!” সোহেল কোনো উৎসাহ দেখাল না, বলল, “মাথার মাঝে কী যেন হয়েছে, মনে হচ্ছে সবকিছু আউলে গেছে।”
ওরা তখন সোহেলকে নিয়ে আর মাথা ঘামাল না। রূপা আর মিম্মি কাগজ জ্বালিয়ে স্মোক বম্বে আগুন দিতে শুরু করল। আগুন জ্বলতেই গলগল করে ধোঁয়া বের হতে থাকে, সাথে সাথে সঞ্জয় জানালা দিয়ে সেগুলো বাসাটার ভেতরে ছুঁড়ে দিতে থাকে।
কিছুক্ষণের মাঝেই তারা ভেতরে মানুষের হইচই, চিৎকার শুনতে পেল।”আগুন আগুন” বলে লোকজন চিৎকার করতে থাকে, এদিক-সেদিকে ছোটাছুটি করতে থাকে। রূপা আর মিম্মি থামল না, একটার পর একটা স্মোক বম্ব জ্বালিয়ে কখনো সঞ্জয়ের হাতে দিতে লাগল কখনো নিজেরাই ছুঁড়ে দিতে লাগল। দেখতে দেখতে পুরো বাসা ধোয়ায় অন্ধকার হয়ে যায়। ততক্ষণে রাজু তার ফিলের কৌটায় ভিনেগার ঢেলে কৌটার মুখ বন্ধ করে ছুঁড়ে দিতে থাকে। কিছুক্ষণ পর সেগুলো শব্দ করে ফাটতে শুরু করে। ভেতরের লোকজনের মাঝে সেটা আবার নতুন একটা আতঙ্কের জন্ম দিল। কেউ একজন বলে উঠল, “পুলিশ! গুলি করছে।”
ব্যস! আর যায় কোথায়-সাথে সাথে সবাই দুদ্দার করে ছুটে পালাতে শুরু করে। কিছুক্ষণের মাঝে পুরো বাসাটা নীরব হয়ে গেল, শুধু বাইরে কিছু মানুষের দৌড়াদৌড়ি এবং চিৎকার শোনা যায়।
রাজু বলল, “সবাই মনে হয় বাসা ছেড়ে চলে গেছে।”
“হ্যাঁ।” রূপা বলল, “এখন দরজা ভাঙার সময়।”
সঞ্জয় দরজায় কয়েকটা লাথি দিল কোনো লাভ হল না। রূপা বলল, “লাথি দিয়ে ভাঙতে পারবি না।”
“কেমন করে ভাঙবে?”
“দূর থেকে দৌড়ে এসে ধাক্কা দিতে হবে। গতিশক্তি হচ্ছে হাফ এম ভি স্কয়্যার। গতিবেগের বর্গ। তাই যত জোরে দৌড়াব তত বেশি গতিশক্তি। দুই গুণ বেশি জোরে দৌড়ালে চার গুণ বেশি শক্তি।”
রাজু মাথা নাড়ল, বলল, “হ্যাঁ।”
“কাজেই আমরা দূর থেকে যত জোরে সম্ভব দৌড়ে আসব একসাথে, কাঁধ দিয়ে দরজায় ধাক্কা দিব।”
মিম্মি বলল, “দেখেছি আমি।”
“কী দেখেছিস?”
“সিনেমায়। সবসময় দৌড়ে এসে কাঁধ দিয়ে ধাক্কা দেয়।”
রূপা বলল, “হ্যাঁ। সিনেমার মতোন।”
তখন চারজন ঘরের অন্য মাথায় গিয়ে দাঁড়াল। রূপা বলল, “ওয়ান টু থ্রী-” সাথে সাথে চারজন ছুটে এসে কাঁধ দিয়ে দরজায় ধাক্কা দিল। প্রথমবারেই দরজাটা মটমট করে উঠল, ছিটকিনিটাও একবারেই নড়বড়ে হয়ে গেল। তারা যখন দ্বিতীয়বার ছুটে এসে ধাক্কা দিল পুরো দরজাটা ধড়াস করে খুলে যায় আর তারা হুড়মুড় করে একজনের উপর আরেকজন এসে হুমড়ি খেয়ে পড়ল।
রাজু জিজ্ঞেস করল, “সবাই ঠিক আছিস?”
রূপা ব্যথায় কে কে করে বলল, “ঠিক নাই। কিন্তু সেটা নিয়ে পরে চিন্তা করব। আগে সবাই বের হ।”
“বের হবার দরজা কোথায়?”
সঞ্জয় বলল, “সামনে।”
রূপা বলল, “সামনে হয়তো ঐ লোকগুলো আছে। দেখ পিছনে কোনো দরজা আছে কি না।”
রাজু পিছনে গিয়ে একটু পরে চাপা স্বরে বলল, “হ্যাঁ পাওয়া গেছে। পিছনে একটা দরজা আছে।”
“গুড। চল পালাই।”
ওরা নিজেদের ব্যাগ নিয়ে ছুটে যেতে থাকে। সোহেল তখনো হাঁটুতে মাথা রেখে বসে আছে। রূপা চাপা স্বরে বলল, “সোহেল, আয় তাড়াতাড়ি।”
“কোথায়?”
“পালাব।”
“কেন?”
রূপা অধৈর্য হয়ে বলল, “আরে! পালাবি কেন এটা আবার কী রকম প্রশ্ন? উঠে আয়।”
“উঁহু। আক্কাস ভাই রাগ করবে। আমাকে বলেছে গোলমাল না করতে।”
রূপা তখন ছুটে গিয়ে সোহেলকে টেনে তুলল। সঞ্জয়কে বলল, “তুই আরেকদিকে ধর। মনে হচ্ছে টেনে নিয়ে যেতে হবে।”
সোহেল অবাক হয়ে বলল, “কী করছিস? কী করছিস তোরা। আমি যাব। আমাকে নিস না।”
সঞ্জয় ধমক দিয়ে বলল, “এখানে থাকবি? তোর মাথা খারাপ হয়েছে? আয় আমাদের সাথে।”
“না।” সোহেল ঝটকা মেরে নিজেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু তার গায়ে জোর নেই, নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে পারল না।
“আয় আমাদের সাথে।” রূপা ফিসফিস করে বলল, “তা হলে তোকে একটা বুলবুলি দেব।”
এই কথাটায় ম্যাজিকের মতো কাজ হল। সোহেলের চোখ চকচক করে ওঠে, জিব দিয়ে ঠোঁট চেটে বলল, “সত্যি?”
“হ্যাঁ। সত্যি। আয় আমাদের সাথে।”
সোহেলকে টেনে বের করে এনে তারা ঘরের দরজাটা বন্ধ করে দিল। তারপর তারা ছুটে পিছনের দরজা দিয়ে বের হয়ে বাইরে থেকে দরজায় ছিটকিনিটা লাগিয়ে দেয়। একটা সিঁড়ি নিচে নেমে গেছে সেটা দিয়ে দুদ্দাড় করে হেঁটে তারা রাস্তায় চলে এলো। ততক্ষণে চারদিকে অন্ধকার নেমে এসেছে।