আক্কাস জিজ্ঞেস করল, “এখন এগুলোরে কী করব বস?”
“ঘরটাতে বন্ধ করে রাখ।”
আক্কাস তখন ওদের চারজনকে ঠেলে নিতে থাকে। বস থামাল, বলল, “ব্যাগের ভেতরে কী? দেখ।”
আক্কাস ওদের ব্যাগ খুলে এলুমিনিয়াম ফয়েলে মোড়ানো স্মোক বম্বগুলো দেখতে পেল। একটা হাতে নিয়ে গন্ধ শুকে মুখ বিকৃত করে জিজ্ঞেস করল, “এগুলো কী? পিজ্জা না কি?”
“না। আমাদের সায়েন্স প্রজেক্ট।”
সঞ্জয় বলতে গেল, “এগুলো–” রূপা মাঝপথে থামিয়ে দিয়ে বলল, “গাছের সার। ফুলগাছে দিলে এত বড় বড় ফুল হয়।”
“সাথে নিয়ে ঘুরছিস কেন?”
“স্কুলে ফুলবাগানের কম্পিটিশান হচ্ছে তো সেই জন্যে।”
সঞ্জয় বলল, “এক ক্লাসের সাথে আরেক ক্লাসের।”
রূপা বলল, “যাদের বাগান সবচেয়ে সুন্দর হবে তারা ফার্স্ট প্রাইজ পাবে।”
সবগুলো ব্যাগে একই জিনিস। শুধু রাজুর ব্যাগে অনেকগুলো ফিল্মের কৌটা। খাবার সোডা আর ভিনেগার। আক্কাস জিজ্ঞেস করল, “ফিল্মের কৌটা দিয়ে কী করবি?”
“কেক বানাব।”
“কেক!”
“হ্যাঁ। ময়দা, খাবার সোডা, চিনি আর ভিনেগার মিশিয়ে এই কৌটার মাপ মতোন ছোট ছোট কেক-”
বকর কাছাকাছি দাঁড়িয়ে ছিল। হো হো করে হেসে বলল, “এরা দেখি চূড়ান্ত বেকুব। এরা মালের ডেলিভারি নিছে বিশ্বাস হয় না।”
বস বলল, “চূড়ান্ত বেকুব দেখেই মালের ডেলিভারি নিয়েছে। মাথায় কোনো ঘিলু থাকলে কেউ এই লাইনে আসে না।”
“সেইটা সত্যি কথা।”
আক্কাস তখন চারজনকে ঠেলে পাশে একটা ঘরের সামনে নিয়ে গেল। ঘরের দরজার ছিটকানি খুলে তাদেরকে ভেতরে ধাক্কা দিয়ে ঢুকিয়ে বাইরে থেকে আবার ছিটকানি লাগিয়ে দিল।
চারজন ভেতরে ঢুকে দেখে ঘরের এক কোনায় গুটিসুটি মেরে সোহেল বসে আছে। সোহেল মাথা তুলে তাকিয়ে তাদের চারজনকে দেখে খুব অবাক হল বলে মনে হল না। বিড়বিড় করে বলল, “তোদের কাছে বুলবুলি আছে?”
“বুলবুলি?” সঞ্জয় জিজ্ঞেস করল, “মানে ড্রাগ?”
“হ্যাঁ। দিবি আমাকে একটা। প্লীজ–”
“কোথা থেকে দিব?”
“তোরা না কী ওদের সব ড্রাগস নিয়ে গেছিস? সেখান থেকে আমাকে একটা দিবি? প্লীজ! মাত্র একটা। আর কোনোদিন চাইব না। প্লীজ! প্লীজ!”
রূপা অবাক হয়ে সোহেলের দিকে তাকিয়ে রইল, এক মুহূর্তের জন্যে ভুলে গেল শুধু সোহেল না, তারা সবাই একটা ভয়ংকর বিপদের মাঝে আছে।
রূপা হেঁটে সোহেলের কাছে যায়, চোখ গর্তের মাঝে ঢুকে গেছে, মাথার চুল এলোমেলো। শরীরের চামড়া খসখসে, হাত দিয়ে চুলকিয়ে জায়গায় জায়গায় রক্ত বের করে ফেলেছে। সোহেল বিড়বিড় করে বলল, “শরীরটা জানি কী রকম করছে। মনে হচ্ছে চামড়ার নিচে দিয়ে কিছু একটা কিলবিল কিলবিল করছে।”
“ড্রাগস। এগুলো হচ্ছে ড্রাগস খাওয়ার ফল।”
“দিবি না আমাকে একটা?”
“নাই আমাদের কাছে।”
সোহেল তখন হঠাৎ করে কথা বলার উৎসাহ হারিয়ে ফেলল। সে হাঁটু মুড়ে হাঁটুতে মাথা রেখে চুপচাপ বসে রইল। দেখে মনে হল সে বুঝি জীবন্ত মানুষ না। সে বুঝি একটা মৃত দেহ।
রূপা অন্যদের কাছে গিয়ে বলল, “সোহেলের কী অবস্থা হয়েছে দেখেছিস?” মিম্মি বলল, “আমাদেরও এই অবস্থা হবে।”
রূপা একবার মিম্মির দিকে তাকাল, কোনো কথা বলল না।
মিম্মি বলল, “তোদের সাথে থাকাই আমার ভুল হয়েছে।”
সঞ্জয় রেগে বলল, “আমাদের সাথে থাকা ভুল হয়েছে? চায়ের দোকানে গিয়ে গিলা-কলিজার বাটি কে বলেছিল? তুই যদি ওই গাধামো না করতি তা হলে আমরা আজকে এখানে থাকতাম না। বুঝেছিস?”
“তোদের সাথে যদি না মিশতাম তা হলে–”
রূপা মিম্মিকে থামিয়ে দিয়ে বলল, “অনেক হয়েছে। এখন চুপ করবি? একটা বিপদের মাঝে আছি এখন সবাই একসাথে থাকবি তা না ঝগড়াঝাটি শুরু করলি।”
রাজু বলল, “খুব বিপদে পড়ে গেলাম। এই মানুষগুলো খুব খারাপ। আমাদের মুখ থেকে কথা বের করার জন্যে আমাদের মারবে বলছে—”
মিম্মি বলল, “কী কথা বের করবে? আমরা তো সত্যি কথা বলেই দিতে পারি।”
“আমাদের কোনো কথা বিশ্বাস করবে না।”
রূপা বলল, “ওদের সব ড্রাগস আমরা কমোডে ফেলে ফ্লাশ করে দিয়েছি।”
“যদি শুধু খবর পায় আমাদের খুন করে ফেলবে।” সঞ্জয় বলল, “দশ লাখ টাকার ড্রাগ কমোডে ফেলে দিয়েছি! চিন্তা করে
মিম্মি বলল, “কিন্তু এখন আমাদের কী হবে?”
রূপা বলল, “এখান থেকে পালাতে হবে।”
“কীভাবে পালাবি? পালানো কী এতো সোজা?”
রূপা দরজার কাছে গিয়ে সেটা একটু পরীক্ষা করে বলল, “দরজাটা পুরানো, খুব শক্ত না। আমরা পাঁচজন মিলে যদি ধাক্কা দেই দরজার ছিটকিনি ভেঙে যেতে পারে।”
মিম্মি মুখ ভেংচে বলল, “দরজা ভাঙতে দেওয়ার জন্যে ঐ লোকগুলো তো বসে আছে। তারা তোমাকে ভাঙতে দেবে?”
“আমি কী ওদের পারমিশান নিয়ে দরজা ভাঙব?”
“দরজায় যখন ধাক্কা দেবে তখনই তো শব্দ হবে। শব্দ শুনে সবগুলো ছুটে আসবে না?”
রূপা কিছুক্ষণ চিন্তা করে বলল, “স্মোক বম্ব।”
সবাই রূপার দিকে তাকাল। রাজু জিজ্ঞেস করল, “স্মোক বম্ব কী?”
“আমরা আমাদের স্মোক বম্ব জ্বালিয়ে দেই–সারা বাড়ি ধোয়ায় অন্ধকার হয়ে যাবে তখন এখানে একটা হই চই, গোলমাল শুরু হবে–সেই গোলমালের মাঝে আমরা দরজা ভেঙে বের হয়ে পালিয়ে যাব।”
মিম্মি চোখ বড় বড় করে বলল, “পারব আমরা?”
সত্যি সত্যি পারবে কী না সেটা নিয়ে রূপার মাঝে সন্দেহ ছিল কিন্তু সেটা প্রকাশ করল না। বলল, “কেন পারব না? একশবার পারব।”