সঞ্জয় বলল, “জি। আমাদের টিমের নাম মিরূসোরাস। মি হচ্ছে মিম্মি, রূ হচ্ছে রূপা, সসা হচ্ছে সোহেল–”
রূপা সঞ্জয়কে থামাল, বলল, “হয়েছে হয়েছে আর বলতে হবে না।”
সোহেলের আব্বু বললেন, “তোমাদেরকে কী কিছু বলেছে, কোথায় গেছে বা কোথায় যেতে পারে?
রূপা মাথা নাড়ল, “না।”
“ময়নার মা বলেছে কোনো ব্যাগ, জামা-কাপড় নেয় নাই। বিকেলে বের হয়েছে আর ফিরে আসেনি।
ময়নার মা নিশ্চয়ই সোহেলদের বাসার কাজের মহিলাটি। সোহেল বিকেলে বের হয়ে আর ফিরে আসেনি সেটা নিয়ে সোহেলের বাবার খুব দুশ্চিন্তা আছে বলে মনে হল না। স্কুলে আসার আগে সেজেগুঁজে টাই লাগিয়ে এসেছেন।
রাজু জিজ্ঞেস করল, “সোহেল কবে গিয়েছে?”
“গতকাল।”
ম্যাডাম জিজ্ঞেস করলেন, “পুলিশে জিডি করেছেন?”
“না করিনি। আমি ভেবেছিলাম মায়ের কাছে গেছে।”
“সোহেলের মা, মানে আপনার স্ত্রী আপনার সাথে থাকেন না?”
“উঁহু।” সোহেলের বাবা মাথা নেড়ে হাসির ভঙ্গি করলেন, যেন ব্যাপারটা খুব মজার একটা ব্যাপার।
ম্যাডাম এবারে রূপাদের দিকে তাকালেন, “সোহেল কী ক্লাসে রেগুলার?”
রূপা, রাজু, মিম্মি আর সঞ্জয় নিজেদের মাঝে দৃষ্টি বিনিময় করল, তাদের মনে হয় এখন সবকিছু খুলে বলা দরকার। রাজু একটা নিশ্বাস নিয়ে বলল, “না ম্যাডাম। সোহেল বহুদিন থেকে ক্লাসে আসে না। আমরা মাঝে মাঝে গিয়ে তাকে ক্লাসে আসতে বলেছি, আসতে রাজি হয় না।”
“কেন ক্লাসে আসে না?” সোহেলের আব্বুকে প্রশ্নটা করেছেন বলে রাজু কোনো কথা বলল না। সোহেলের আব্বু অবশ্যি প্রশ্নের উত্তর দেবার চেষ্টা করলেন না খুব মনোযোগ দিয়ে টাইটা ঠিক করতে লাগলেন।
এবারে মিম্মি মুখ খুলল, “আংকেল-আন্টি ছাড়াছাড়ি হয়ে গেছে সেই জন্যে খুব মন খারাপ।”
সোহেলের আব্বু ঝাঁকুনি দিয়ে সোজা হয়ে বসলেন, “না। ছাড়াছাড়ি হবে কেন? তোমরা এসব কী হাবিজাবি কথা বল?”
মিম্মি মুখ শক্ত করে বলল, “সোহেল বলেছে।”
“যত সব বাজে কথা।”
রূপা বলল, “সেটা যাই হোক এমনিতে সোহেলের খুব মন খারাপ ছিল। তা ছাড়া সোহেলের একটা সমস্যা হচ্ছে–”
সোহেলের আব্বু হঠাৎ করে উঠে দাঁড়ালেন, বললেন, “ঠিক আছে তা হলে আমি যাই। একটু খোঁজ নেই। খুব দুশ্চিন্তার ব্যাপার হল।”
তারপর কাউকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে অফিস ঘর থেকে বের হয়ে গেলেন। ম্যাডাম কিছুক্ষণ টেবিলে আঙুল দিয়ে শব্দ করলেন তারপর ওদের দিকে তাকিয়ে বললেন, “ব্রোকেন ফ্যামিলি খুব বড় সমস্যা।”
রূপা একটা নিশ্বাস ফেলল, যে ফ্যামিলি ভাঙেনি তার মাঝেও খুব কম সমস্যা নেই–তার নিজেরটাই তো বড় উদাহরণ।
প্রিন্সিপাল ম্যাডামের অফিস থেকে বের হয়ে হেঁটে হেঁটে ক্লাশরুমে যাবার সময় রাজু বলল, “সোহেলের আব্বুকে বলতে পারলাম না সোহেল ড্রাগ ধরেছে। বলা উচিত ছিল।
রূপা বলল, “ম্যাডামের সামনে বলা ঠিক হবে কী না বুঝতে পারছিলাম না।”
রাজু বলল, “স্কুল ছুটির পর চল সোহেলের বাসায় গিয়ে ওর আব্বুকে সবকিছু খুলে বলি। ওর আব্বুর জানা দরকার।”
সঞ্জয় জিজ্ঞেস করল, “সোহেল কোথায় গিয়েছে?”
রূপা চিন্তিত মুখে বলল, “কে বলবে?”
মিম্মি বলল, “আমি জানি কোথায় গেছে।”
“কোথায় গেছে?”
“ও কোথায়ও যায়নি। ওকে ধরে নিয়ে গেছে।”
“কে ধরে নিয়ে গেছে?”
“ড্রাগ ডিলাররা।”
রূপা মুখে বলল, “ধুর! ড্রাগ ডিলাররা কেন ওকে ধরে নেবে?” কিন্তু ভয়ে হঠাৎ করে ওর ভেতরটা কেমন যেন নড়েচড়ে গেল।
.
দুপুরবেলা টিফিনের ছুটিতে চারজন মিলে তাদের স্মোক বম্বগুলো তৈরি করল। তারা অনেক তাড়াতাড়ি কাজ শেষ করতে পারত কিন্তু ক্লাসের অনেকেই তাদের সাহায্য করার জন্যে হাজির ছিল বলে সময় বেশি লেগে গেল। স্মোক বম্বগুলো রোদে শুকিয়ে তারা তাদের ব্যাগে ঢুকিয়ে নেয়। আজকে বাসায় নিয়ে রাখবে সায়েন্স ফেয়ারের দিন নিয়ে আসবে। খাবার সোডা আর ভিনেগার দিয়ে তাদের আরেকটা এক্সপেরিমেন্ট দাঁড় করানোর জন্যে রাজুর ফিল্মের প্লাস্টিকের কৌটা নিয়ে আসার কথা ছিল। দেখা গেল সে ব্যাগ ভর্তি করে প্রায় পঞ্চাশটা কৌটা নিয়ে এসেছে। সঞ্জয় চোখ কপালে তুলে বলল, “এতগুলো? এতগুলো দিয়ে কী হবে?”
রাজু বলল, “স্টুডিওতে গিয়ে যখন জিজ্ঞেস করলাম তখন ফটোগ্রাফার তার ময়লার ঝুড়ি থেকে সব আমার ব্যাগে ঢেল দিল! আমি বলতেই পারলাম না দুই তিনটা হলেই হবে!”
রূপা বলল, “থাকুক। সমস্যা নাই। সারাদিন ধরে সায়েন্স ফেয়ার হবে–একটু পর পর দেখাতে হবে। যত বেশি তত ভালো।”
রাজু বলল, “এখন আমাদের বাকি আছে শুধু পোস্টারটা লেখা।”
সঞ্জয় বলল, “কী লিখতে হবে বলে দে। আমি লিখে দেই।”
মিম্মি বলল, “তুই লিখবি? তুই তোর হাতের লেখা কোনোদিন দেখিসনি? কাকের ঠ্যাং বকের ঠ্যাং!”
সঞ্জয় গরম হয়ে বলল, “আর তোরটা এমন কী রসগোল্লার টুকরা?
মিম্মি আরো গরম হয়ে বলল, “আমি কী বলেছি আমার হাতের লেখা ভালো? আমি শুধু বলেছি তোরটা জঘন্য।”
সঞ্জয় চিৎকার করে বলল, “আমার ইচ্ছে হলে আমি আরো জঘন্য করে লিখব। তোর কী?”
দুইজনের মাঝে ঝগড়া লেগে যেত কিন্তু কপাল ভালো ঠিক তখন ক্লাশের ঘণ্টা পড়ে গেল, সবাইকে ক্লাশে চলে আসতে হল। ওরা সবাই নিজের কাজ করছে, ঝগড়া করছে কিন্তু বুকের ভিতর অশান্তি। সোহেল কোথায়?
.
স্কুল ছুটির পর চারজন ঠিক করল সোহেলের বাসা হয়ে যাবে। সোহেলের বাবাকে বলে যাবে সোহেলের ড্রাগ নিয়ে সমস্যা আছে, ড্রাগ ডিলারদের কাছ থেকে সে ড্রাগ কেনে। চায়ের দোকানের কথাটাও বলে আসবে–তবে তারা যে তাদের একটা চালান তুলে এনেছে সেটা হয়তো বলা যাবে না।