মাসুককে এবারে কেমন যেন আতঙ্কিত দেখা গেল, “শুধু আঙুল?”
ক্লাশের ছেলেমেয়েরা মাসুকের হাহাকার শুনে হি হি করে হেসে ফেলল ম্যাডামও হাসলেন, বললেন, “ঠিক আছে তা হলে তোমরা রোবটই সেজে আস! আমরা বলব এটা হচ্ছে বিজ্ঞানকে জনপ্রিয় করার পদক্ষেপ।”
মাসুককে এবারে আবার উৎসাহী দেখা গেল, বলল, “ঠিক আছে ম্যাডাম আপনি দেখবেন একবারে ফাটাফাটি রোবট বানাব। আসল রোবটের বাবা।”
বিজ্ঞান ম্যাডাম এরপর টিম সহজ-সরল-এর সাথে কথা বললেন, তারপর টিম ব্ল্যাকহোল তারপর টিম মিরূসোরাস। ম্যাডাম জিজ্ঞেস করলেন, টিম মিরূসোরাসের পক্ষ থেকে কে কথা বলবে?”
রূপা দাঁড়িয়ে বলল, “আমি বলতে পারি।”
“বল তোমাদের কাজের কতটুকু হয়েছে?”
রূপা মাথা চুলকে বলল, “আমরা ঠিক করেছি স্মোক বম্ব বানাব–কিন্তু এখনো কিছু জিনিস নিয়ে ঝামেলার মাঝে আছি।”
“কী ঝামেলা?”
“ইন্টারনেট থেকে কী কী কেমিক্যাল লাগবে বের করেছি কিন্তু কোথা থেকে পাওয়া যায়, কত দাম এগুলো বুঝতে পারছি না।”
“কী কেমিক্যাল লাগবে বল দেখি?”
”পটাশিয়াম নাইট্রেট, চিনি, ঐন্সিয়াম সল্ট, ক্যালসিয়াম ক্লোরাইড”
বিজ্ঞান ম্যাডাম মাথা নাড়লেন, বললেন, “এর সবগুলো তোমাদের এখনই লাগবে না। কিছু কিছু লাগবে। ক্লাসের পর আমার সাথে দেখা কর আমি তোমাদের বলে দেব এগুলো কোথায় পাওয়া যাবে।”
সঞ্জয় বলল, “ম্যাডাম এইটা কী আসলেই বম্ব? মানে বোমা?”
বিজ্ঞান ম্যাডাম হাসলেন, বললেন, “তার মানে তুমি জানতে চাইছ এটা বিশাল শব্দ করে বিস্ফোরণ হয় কি না?”
সঞ্জয়ের চোখ উৎসাহে চক চক করতে থাকে, “জি ম্যাডাম! এটা কি ফাটবে?”
“না, এটা সেরকম বোমা না। এটা স্মোক বম্ব, ধোঁয়ার বোমা। এটাতে আগুন ধরিয়ে দিলে গলগল করে ধোঁয়া বের হতে থাকে। তাই এটা তোমরা ঘরের ভিতরে করতে পারবে না। এটা করতে হবে ঘরের বাইরে। মাঠে।”
“ঘরে করলে কী হবে?”
“ধোঁয়ায় ঘর অন্ধকার হয়ে যাবে।”
শুনে সঞ্জয়ের চোখ আবার আনন্দে চকচক করতে থাকে। বিজ্ঞান ম্যাডাম বললেন, “তোমাদের টিমের নাম মিরূসোরাস। কিন্তু ‘সো’ কে এখনও দেখিনি, সে কোথায়?”
রূপা, মিম্মি, রাজু আর সঞ্জয় তখন সবাই একজন আরেকজনের দিকে তাকাল, কী বলবে ঠিক বুঝতে পারল না। রাজু বলল, “ম্যাডাম, সোহেল অসুস্থ। তা ছাড়া তার আবার পারিবারিক কিছু সমস্যা হয়েছে সেটার জন্যে সে স্কুলে আসতে পারছে না।”
“তোমরা খোঁজ নিয়েছ?”
“জি ম্যাডাম। আমরা ওর বাসাতেও গিয়েছি। কয়েকবার।”
“কী ধরনের অসুস্থ।”
রাজু মাথা চুলকাল, কাজেই রূপাকে আবার উত্তর দিতে হল। যেহেতু মিথ্যে কথা বলা শুরু করেছে মনে হয় মিথ্যে কথা বলার দায়িত্বটা এখন থেকে পাকাঁপাকিভাবে তার ঘাড়েই এসে পড়বে। রূপা বলল, “কারণটা ঠিক করে ধরা যাচ্ছে না। খুব দুর্বল।”
বিজ্ঞান ম্যাডামের মুখে চিন্তার ছায়া পড়ল, বললেন, “এরকম কম বয়সী ছেলে সে দুর্বল কেন হবে?”
“আরও কিছু সমস্যা আছে ম্যাডাম। আপনাকে ক্লাসের পরে বলব।”
ম্যাডাম কিছু একটা বুঝে গেলেন। বললেন, “ঠিক আছে ক্লাসের পর বল।” তারপর চলে গেলেন টিম আলোকবর্তিকার কাছে।
.
ডাইনিং টেবিলে বসে রূপা টের পেল আম্মুর মেজাজটা খুব খারাপ। কারণটাও কিছুক্ষণের মাঝে বোঝা গেল। হিন্দি সিরিয়ালের জাসিন্দর আর আনিলার মাঝে প্রচণ্ড ঝগড়া হয়েছে তাদের সম্পর্ক প্রায় ভেঙে যাবার অবস্থা। আব্বুর ধারণা দোষটা আনিলার, আর আম্মুর ধারণা দোষটা জাসিন্দরের। সেটা নিয়ে আব্বু আম্মুরও একটা ঝগড়া হয়ে দুজনেই এখন মেজাজ খারাপ করে আছেন। সুলতানা টেবিলে খাবার এনে রাখছে। সবজিতে লবণ একটু কম হয়েছে সেই জন্যে আম্মু সুলতানাকে যাচ্ছেতাইভাবে গালাগাল করলেন। সুলতানার হয়েছে মুশকিল আম্মুর ব্লাড প্রেসার সেই জন্যে কম করে লবণ খাবার কথা, সুলতানাকে দিনে দশবার করে বলে দেওয়া হয় যেন কম লবণ দিয়ে রাধে। সে যখন সত্যি সত্যি কম লবণ দেয় তখন তাকে গালাগাল করা হয় লবণ কম দেবার জন্যে। প্রথম প্রথম সুলতানা ব্যাপারটা বোঝানোর চেষ্টা করত তাতে লাভ না হয়ে বরং ক্ষতি হয়েছে। বিষয়টাকে এক ধরনের বেয়াদবী হিসেবে ধরে সুলতানার উপর অত্যাচার আরও বেড়ে যেত। সুলতানা এখন আর কিছু বলে না, মুখ বুজে গালমন্দ সহ্য করে।
খানিকক্ষণ নিঃশব্দে খাবার পর মিঠুন বলল, “আমরা যদি লবণকে চিনি বলতাম আর চিনিকে লবণ বলতাম তা হলে কী হত?”
খুবই গাধা টাইপের প্রশ্ন কিন্তু প্রশ্নটা পরিবেশটাকে একটু সহজ করে দিল। তিয়াশা বলল, “তা হলে আমরা লবণ দিয়ে চা খেতাম।”
আম্মু বললেন, “সুলতানা সবজিতে চিনি বেশি দিত না হয় কম দিত!” রূপা বলল, “আমরা যখন ঘামতাম তখন শরীর থেকে চিনির সিরা বের
রূপার কথা শুনে সুলতানা থেকে শুরু করে আব্বু পর্যন্ত সবাই হি হি করে হেসে উঠল। তিয়াশা খেতে খেতে একটু বিষম খেয়ে বলল, “রূপাটা যে কী ফানি কথা বলে! ওফ!”
পরিবেশটা একটু সহজ হওয়ার পর রূপা কাজের কথায় এলো। বলল, “আমাদের স্কুলে সামনের শুক্রবার সায়েন্স ফেয়ার।”
আম্মু বললেন, “সেটা আবার কী?”
“সবাই তাদের সায়েন্স প্রজেক্ট দেখাবে।”
মিঠুন জিজ্ঞেস করল, “ছোট আপু তোমার সায়েন্স প্রজেক্ট কী?”
“স্মোক বম্ব।”
“বম্ব?” আম্মু ভুরু কুঁচকালেন, “তোরা বোমা বানাচ্ছিস?”