“মুখ ফসকে অন্য কিছু বের হতে পারল না? ই ইকুয়েলস টু এম সি স্কয়্যার?” সঞ্জয় চোখ লাল করে বলল, “তোকে গিলা-কলিজার বাটিই বলতে হল!”
রাজু বলল, “থাক। থাক। যা হবার হয়ে গেছে। এখন ঠিক করতে হবে আমরা কী করব?”
রূপা জিজ্ঞেস করল, “কী করব?”
মিম্মি বলল, “এই বাক্সটা ফিরিয়ে দিয়ে আসতে পারি। বলতে পারি ভুল হয়ে গেছে, সরি।”
“মাথা খারাপ?” আমাদেরকে পেলে এখন খুন করে ফেলবে।”
“পুলিশকে দিতে পারি।” সঞ্জয় বলল, মোড়ে যে পুলিশ বক্সটা আছে সেখানে গিয়ে তাদেরকে এই বাক্সটা দিয়ে বলতে পারি এটা রাস্তায় পড়েছিল, আমরা পেয়ে ফেরত দিতে এসেছি।”
“আর যখন খুলে দেখবে ভেতরে ড্রাগস তখন আমাদের এমনি এমনি ছেড়ে দেবে? রিমান্ডে নিয়ে এমন টর্চার করবে–”
সঞ্জয় বলল, “এর ভেতরে ড্রাগস আছে কেমন করে জান? হয়তো অন্য কিছু।”
রাজু ভুরু কুঁচকে বলল, “অন্য কিছু কী?”
“কোনো মানুষের কাটা মাথা–”
মিম্মি পিছনে সরে গিয়ে ভয় পাওয়া গলায় বলল, “কাটা মাথা?”
“দেখিসনি? সিনেমায় থাকে? বাক্সের ভেতরে কাটা মাথা?” রা
জু বলল, “খুলে দেখি কী আছে ভেতরে।”
মিম্মি বলল, “কাটা মাথা থাকলে আমি ফিট হয়ে যাব।”
“আগেই কারো ফিট হওয়ার দরকার নেই।”
.
বাক্সটা মোটা টেপ দিয়ে খুব ভালো করে লাগানো, হাত দিয়ে টেনে খোলা গেল না। রাজু রান্নাঘর থেকে একটা চাকু আনল, টেপ কেটে বাক্সটা সাবধানে খোলা হল। ভেতরে ভেঁড়া খবরের কাগজ দিয়ে প্যাকিং করা আছে সেগুলো সরানো হলেই দেখা গেল সারি সারি অনেকগুলো বয়াম আর প্রত্যেকটা বয়ামের ভেতর ছোট ছোট লাল রঙের ট্যাবলেট।
রূপা একটা কাঁচের জার হাতে নিতে যাচ্ছিল ঠিক তখন দরজা খুলে রাজুর আম্মু ঢুকলেন। রূপা খুব শান্তভাবে কিছুই হয়নি এরকম ভান করে বাক্সটার ঢাকনা বন্ধ করল যেন রাজুর আম্মু ভেতরে দেখতে না পারেন।
রাজুর আম্মু তাদের মুখের দিকে তাকালেন তারপর একটু অবাক হয়ে বললেন, “কী ব্যাপার? তোমাদের কী হয়েছে? এরকম মুখ কালো করে সবাই বসে আছ কেন?”
রূপা বলল, “না খালাম্মা। কিছু না।”
“বাক্সের মাঝে কী?”
রূপা এক মুহূর্তের জন্যে ভাবল সত্যি কথাটা বলে দেবে কী না। কিন্তু মনে হল এখনই বলা যাবে না–ফলটা ভালো না হয়ে খারাপ হতে পারে। কাজেই মিথ্যা কথা বলতে হল। সে যেহেতু আগেও বলেছে তাই সে নিজেই দায়িত্বটুকু নিল। বলল, “কেমিক্যালস।”
“কেমিক্যালস?”
“জি।”
“কীসের কেমিক্যালস?”
“আমাদের সায়েন্স প্রজেক্টের। আমরা ঠিক করেছি স্মোক বম্ব বানাব। সেই জন্যে কেমিক্যালস দরকার, সেগুলো জোগাড় করেছি।”
“ও আচ্ছা। কিন্তু তোমাদের মুখ দেখে মনে হচ্ছে তোমরা বুঝি একটা ব্যাংক ডাকাতি করতে যাচ্ছ।”
“না। না। আসলে কীভাবে করব, চিন্তা করছিলাম তো তাই।”
“ঠিক আছে!” রাজুর আম্মু হাসলেন, বললেন, “বেশি চিন্তা করলে আবার খিদে পেয়ে যায়। টেবিলে তোমাদের জন্যে নাস্তা দিচ্ছি। তোমরা খেতে এসো।”
রাজু বলল, “আসছি আম্মু।”
রাজুর আম্মু ঘর থেকে বের হওয়া মাত্রই মিম্মি রূপার দিকে তাকিয়ে বলল, “তুই বড় হয়ে নিশ্চয়ই ক্রিমিনাল হবি।”
রূপা চোখ পাকিয়ে বলল, “কেন?”
“কী রকম চোখের পাতি না ফেলে মিথ্যা কথা বলে দিলি! ঘাগু ক্রিমিনাল না হলে পারে না।”
রূপা রেগে উঠল, “এত যদি সত্যি কথা বলার ইচ্ছে তা হলে গিয়ে বলে দিচ্ছিস না কেন? আমরা ড্রাগ ডিলারদের ড্রাগ বোঝাই একটা বাক্স নিয়ে এসেছি। এখন ড্রাগ ডিলাররা আমাদের খুঁজছে মার্ডার করার জন্যে? বলিসনি কেন?”
রাজু বলল, “আহা-হা-রাগ করছ কেন?”
“তা হলে কী খুশি হব? আমাকে তোরা মিথ্যাবাদী বলবি আর আমি আনন্দে লাফাব? আমি কী ইচ্ছে করে মিথ্যা কথা বলেছি? আমি কী আমার নিজের জন্যে মিথ্যা বলেছি?”
রাজু বলল, আহা-হা-প্লীজ রূপা। শান্ত হও।”
রূপার প্রায় চোখে পানি এসে গেল। বলল, “রাজু আমি তোমার আম্মুর কাছে মিথ্যা কথা বলতে চাই না। তাই যে কয়টা কথা বলেছি তার সবগুলো করতে হবে, যেন কোনো কথাই মিথ্যা না হয়। বুঝেছ?”
“বুঝেছি।”
“স্মোক বম্ব বানাবার জন্যে যেই সব কেমিক্যালস লাগে আমাদের সেই কেমিক্যালস কিনতে হবে। আমাদের সায়েন্স প্রজেক্টে সেটা বানাতে হবে। বুঝেছিস সবাই?” রূপা প্রায় হিংস্র গলায় বলল, “বুঝেছিস?”
সবাই মাথা নাড়ল। মিম্মি ভয়ে ভয়ে বলল, “বুঝেছি।”
রাজু জিজ্ঞেস করল, “আর এই ড্রাগসগুলো?”
“যা ইচ্ছে তা করতে পার।”
রাজু বলল, “পরে ঠিক করব কী করা যায়, আপাতত লুকিয়ে রাখি।”
রাজু বাক্স থেকে কাঁচের বয়ামগুলো বের করে তার বইয়ের শেলফে বইয়ের পিছনে রেখে দিল।
ময়না খালার বাচ্চা দুটো এ সময় ঘরে ঢুকে বলল, ভাই তোমার বন্ধুদের নিয়ে নাস্তা খেতে এসো। সব ঠাণ্ডা হয়ে যাবে তা না হলে।
অনেক মজার মজার খাবার কিন্তু তারা এমনভাবে সেগুলো খেতে লাগল যে দেখে মনে হতে থাকে খাবার নয়, শুকনো খবরের কাগজ খাচ্ছে। ব্যাপারটা রাজুর আম্মুর চোখ এড়াল না, জিজ্ঞেস করলেন, “কী ব্যাপার? তোমাদের দেখে মনে হচ্ছে কিছু একটা নিয়ে তোমরা বেশ ডিস্টার্বড়!”
রূপা যেহেতু মিথ্যা কথা বলার দায়িত্বটি নিয়ে নিয়েছে তাই সে আবার দায়িত্ব নিল, তবে এবারে একটু অন্যভাবে বলল, “না খালাম্মা, আসলে আমার মনটা একটু খারাপ ছিল তো সেই জন্যে মনে হয় অন্যদেরও মন খারাপ হয়েছে।”