“এইটাই তো যথেষ্ট ভালো। কেউ কী কখনো চিন্তা করতে পারবে পাসওয়ার্ড হচ্ছে গিলা-কলিজার বাটি”-সঞ্জয় হি হি করে হাসতে শুরু করতে যাচ্ছিল কিন্তু সবাই এমনভাবে তার দিকে চোখ পাকিয়ে তাকাল যে সে সুবিধা করতে পারল না।
মিম্মি জিজ্ঞেস করল, “আমরা এখন কী করব?”
সঞ্জয় বলল, “পুলিশকে খবর দেব।”
রূপা মাথা নাড়ল, বলল, “উঁহু! শুনিসনি ওরা পুলিশকে মাসে মাসে টাকা দেয়। পুলিশের কাছে যাওয়া যাবে না।”
“সব পুলিশ তো খারাপ না। শুনিসনি ত্যাড়া পুলিশ আছে”
“তুই দেখে বুঝবি কোন পুলিশ ভালো আর কোন পুলিশ ত্যাড়া?”
সঞ্জয় মাথা নাড়ল, বলল, “না–”
রাজু বলল, আমাদের মনে হয় এখন বড়দের জানানোর সময় হয়েছে। ব্যাপারটা আমাদের হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে।”
“কাকে জানাবি?”
“আপুকে দিয়ে শুরু করি। আপু যখন দেখবে তার মোবাইলের সব টাকা খরচ করে ফেলেছি তখন আমার কাছে জানতে চাইবে কোথায় এত লম্বা ফোন করেছি। তখন বললেই হবে।”
রূপা বলল, “তোমার আপুর ফোনের টাকা–আর আমার আপুর ফোনটা আনতে হবে। যদি ফোনটা হারায় তা হলে আমি শেষ।” কথা শেষ করে রূপা গলায় পোচ দেবার ভঙ্গি করল।
রাজু মাথা নাড়ল, “ঠিক বলেছ। চল আগে গিয়ে ফোনটা নিয়ে আসি।”
চায়ের দোকানটার কাছাকাছি গিয়ে ওরা থেমে গেল। রাজু বলল, “আমাদের সবার যাওয়ার দরকার নেই। দুইজন যাই।”
“কোন দুইজন?”
“মোবাইল ফোনটা বেঞ্চের তলায় ফিট করেছিল রূপা। কাজেই রূপাকে যেতে হবে। সাথে আরেকজন।”
রূপা বলল, “মিম্মি, তুই আয়। দুইজনই মেয়ে হলে সন্দেহ কম করবে।”
“আমি?” মিম্মি কেমন জানি ভয়ে ভয়ে তাকাল।
“হ্যাঁ। সমস্যা কী? আমরা গিয়ে বেঞ্চের উপর বসব। তুই চা-সিংগারা অর্ডার দিবি, কথা বলবি, মানুষটাকে ব্যস্ত রাখবি। আমি বেঞ্চের তলায় হাত দিয়ে মোবাইলটা খুলে নেব।”
মিম্মি বলল, “ঠিক আছে।” তারপর বিড়বিড় করে বলল, “গিলা-কলিজার বাটি।”
রূপা বলল, “কী বললি?”
“না কিছু না। মনে নেই গোপন পাসওয়ার্ড? হঠাৎ মনে পড়ল। এইখানে এই পাসওয়ার্ড বলে ড্রাগ ডেলিভারি নিবে। মনে নেই?”
“হ্যাঁ হ্যাঁ। মনে আছে।”
“ডেঞ্জারাস জায়গা।”
“তোর ভয় লাগছে?”
“না, না। ভয় লাগবে কেন?” বলে মিম্মি দুর্বলভাবে হাসল। বিড়বিড় করে বলল, “গিলা-কলিজার বাটি! কী আজব।”
রূপা আর মিম্মি হেঁটে হেঁটে খোলা চায়ের দোকানটার কাছে যায়। দোকানি মানুষটা তার কেতলিতে গরম পানি ঢালছিল, তাদের দুইজনকে দেখে মুখ তুলে তাকাল।
চায়ের দোকানে আর কেউ নেই, দুইজনে তাদের বেঞ্চে গিয়ে বসে। রূপা সাবধানে হাত দিয়ে বেঞ্চের তলাটা পরীক্ষা করে। দোকানি মানুষটা তাদের দিকে তাকিয়ে আছে। রূপা কনুই দিয়ে মিম্মিকে একটা খোঁচা দিল, দৃষ্টিটা তার দিকে সরানোর দরকার। মিম্মি বলল, “আমাদের দেন দেখি
“কী দেব?”
মিম্মি হঠাৎ করে বলে বসল, “গিলা-কলিজার বাটি–” কথাটা শুনে রূপা পাথরের মতো জমে গেল, সিংগারা বলতে গিয়ে বলে ফেলেছে গিলা-কলিজার বাটি। কী সর্বনাশ। দোকানি মানুষটাকে দেখে মনে হল তার মাথার উপর বাজ পড়েছে। সে মুখ হাঁ করে মিম্মির দিকে তাকিয়ে আছে। মনে হয় নিশ্বাস নিতে ভুলে গেছে।
মিম্মি নিজেও ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে। সে নিজেও বুঝতে পারছে না কী ঘটে গেছে। রূপা টান দিয়ে মোবাইল ফোনটা খুলে নিয়েছে এখন আর এখানে থাকার দরকার নেই। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চলে যেতে হবে। দোকানি মানুষটা কয়েকবার চেষ্টা করে বলল, “তো-তোমরা? তোমরা?”
মিম্মি বোকার মতো মাথা নাড়ল, “হ্যাঁ আমরা।”
“তোমরা গিলা-কলিজার বাটি! কি আশ্চর্য!”
রূপা উঠে দাঁড়িয়ে বলল, “চল মিম্মি।”
“দাঁড়াও দাঁড়াও। তোমরা এসেই চলে যেও না। তোমরা ঠিক জায়গাতেই এসেছ। এইটাই সেই জায়গা। খালি বল দেখি এর পরেরটা কী?” রূপা বলল, “বরফের মতো গরম আগুনের মতো ঠাণ্ডা।”
দোকানি মানুষটা বোকার মতো মাথা নাড়তে থাকে। তাকে দেখে মনে হয় তার ঘাড়ের সাথে মাথার অংশটা ঢিলে হয়ে গেছে। মানুষটা তার ময়লা দাঁত বের করে হাসল তারপর টেবিলের তলা থেকে কার্ডবোর্ডের একটা বাক্স বের করে তাদের দিকে এগিয়ে দিল।
রূপা বুঝতে পারল এখন আর তাদের পিছিয়ে যাবার উপায় নেই। সে হাত বাড়িয়ে বাক্সটা হাতে নিল তারপর আর একটা কথা না বলে হাঁটতে শুরু করে।
রাস্তার অন্য পাশে রাজু আর সঞ্জয় দাঁড়িয়ে ছিল তারা তাদের দিকে এগিয়ে আসে, রাজু ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করল, “এইটা কী?”
রূপা বলল, “এখন কথা বলার সময় নেই। তাড়াতাড়ি হাঁট।”
রাস্তার পাশে মোড় নিয়ে ডান দিকে চলে যাবার আগে রূপা চোখের কোনা দিয়ে দেখল চায়ের দোকানের মানুষটা এখনো মুখ হাঁ করে তাদের দিকে তাকিয়ে আছে। মনে হচ্ছে নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না।
কিছুক্ষণ আগে যেরকম তারা চারজন মিথিলার মোবাইল ফোনটাকে মাঝখানে রেখে চারজন চারদিকে বসে ছিল এখন প্রায় ঠিক সেইভাবে মাঝখানে কার্ডবোর্ডের বাক্সটা রেখে চারজন চারদিকে বসে আছে। সবাই বাক্সটার দিকে তাকিয়ে আছে এবং তাদের দেখে মনে হয় তারা ঠিক বাক্সের দিকে নয় তারা বুঝি একটা মরা মানুষের দিকে তাকিয়ে আছে। সঞ্জয় বলল, “তোরা কেমন করে এটা করলি?”
মিম্মি মুখ কাচুমাচু করে বলল, “হঠাৎ করে মুখ ফসকে বের হয়ে গেল। আমি কী করব?”