“গা ছুঁয়ে বললে কী হয়?”
“সেটা আমি জানি না, কিন্তু গা ছুঁয়ে বল।”
মিম্মি রূপার গা ছুঁয়ে বলল, “কাউকে বলব না।”
বিকেলবেলা স্কুল ছুটির পর চারজন সোহেলের বাসায় হাজির হল। দরজায় শব্দ করার পর আবার সেই মহিলা দরজা খুলে দিল। রূপা জিজ্ঞেস করল, “সোহেল আছে?”
“আছে।”
“আমরা সোহেলের সাথে কথা বলতে এসেছি।”
“হে মনে হয় ঘুমায়।”
“ঘুমালেও সমস্যা নেই, আমরা ডেকে তুলব।”
“মনে হয়, শরীরটা বেশি ভালা না।”
“সেইটাও আমরা দেখব।”
“তয় যান। বারান্দার শেষ ঘরটা।”
রাজু বলল, “আমরা চিনি। আমরা আগে আরেকবার এসেছিলাম। মনে নেই?”
মহিলাটা মাথা নাড়ল, বলল, “মনে আছে।”
বারান্দার শেষ মাথায় গিয়ে রূপা দরজাটা ধাক্কা দিল। দরজাটা বন্ধ, ভেতর থেকে তারা সোহেলের গলার স্বর শুনতে পেল, “কে?”
সঞ্জয় বলল, “আমরা। দরজা খোল।”
ভেতরে সোহেল হঠাৎ চুপচাপ হয়ে গেল। সঞ্জয় আবার বলল, “কী হল? দরজা খুলিস না কেন?”
খুট করে দরজা খোলার শব্দ হল, সোহেল দরজার সামনে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করল, “কী চাস?”
রূপা বলল, “ভেতরে ঢুকতে দে।”
“কেন?”
“তোর সাথে কথা আছে।”
“কী কথা?”
রাজু বলল, “আমাদের সায়েন্স প্রজেক্টের টিমের তুই একজন মেম্বার। প্রজেক্ট নিয়ে কথা বলতে হবে।”
সোহেল কিছুক্ষণ দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থেকে সরে দাঁড়াল, বলল, “আয়।”
চারজন সোহেলের ঘরে ঢুকল। আগেরবার ঘরটা যত এলোমেলো ছিল এখন ঘরটা তার থেকে বেশি এলোমেলো, অনেক বেশি নোংরা। সঞ্জয় বলল, “তোর ঘরটা পরিষ্কার করা দরকার।”
সোহেল এদিক-সেদিক তাকিয়ে বলল, ““।
রাজু বলল, “আমরা একটা সায়েন্স প্রজেক্ট নিয়ে কাজ করছি। তুমি আমাদের টিমে আছ। তুমি আর আমরা চারজন।”
সোহেল বলল, “হু–”
রাজু বলল, সায়েন্স ম্যাডামের কাছে আমাদের আইডিয়াটা কালকে জমা দিতে হবে। সেই জন্যে তোমার সাথে কথা বলতে এসেছি।”
সোহেল বলল, “হু–”
রূপা বলল, আমাদের তিনটা আইডিয়া আছে–অদৃশ্য আলো, স্মোক বম্ব আর আলোর সংমিশ্রণ। তোর কোনটা পছন্দ?”
সোহেল ভুরু কুঁচকে বলল, “হু–””কোনটা পছন্দ?”
“জানি না।”
সঞ্জয় বলল, “আমার ইচ্ছা স্মোক বম্ব। যখন ফাটাবি তখন ঘর অন্ধকার হয়ে যাবে ধোয়া দিয়ে। লাল-নীল ধোয়া।”
সোহেল বলল, “হুঁ“।
রূপা মুখ শক্ত করে বলল, “খালি হু হু করবি না। কথা বল।”
“কী কথা বলব?”
“আমরা কিন্তু তোর সব কথা জানি।”
সোহেল কেমন যেন চমকে উঠল, দেখতে দেখতে তার মুখটা শক্ত হয়ে উঠল, রূপার দিকে সরু চোখে তাকিয়ে বলল, “কী কথা জানিস?”
মিম্মি বলল, “তুই ড্রাগ এডিক্ট।”
সোহেল ঝট করে ঘুরে মিম্মির দিকে তাকাল, বলল, “কী বললি? কী বললি
রূপা বলল, “ঠিকই তো বলেছে।”
সোহেল বলল, “খুন করে ফেলব তোদের সবাইকে।”
রাজু সোহেলের ঘাড়ে হাত দিয়ে বলল, তুমি কেন মিছামিছি খেপে উঠছ। শান্ত হয়ে একটু বসো দেখি। বসো শান্ত হয়ে।”
সোহেল ঝটকা মেরে রাজুর হাত সরিয়ে দিয়ে বলল, “বের হয়ে যা তোরা। বের হয়ে যা এক্ষুনি।”
রাজু শান্ত গলায় বলল, “মিছামিছি রাগ করো না সোহেল। আমরা তোমাকে সাহায্য করতে এসেছি।”
সোহেল চিৎকার করে বলল, “আমার কারো সাহায্য দরকার নেই। তোরা বের হয়ে যা আমার রুম থেকে।”
“শোন সোহেল। খুব ইম্পরট্যান্ট। খুবই ইম্পরট্যান্ট।”দরকার নেই আমার ইম্পরট্যান্ট কথার। কোনো দরকার নেই।”
রূপা গলা উঁচিয়ে বলল, “আছে। শোন সোহেল, তুই খুব বিপদের মাঝে আছিস। ড্রাগ খুব ভয়ংকর জিনিস-এর থেকে বের হওয়া খুব কঠিন। বের না হলে তুই মরে যাবি।”
“আমার বেঁচে থেকে কী হবে?” হঠাৎ সোহেল হাউমাউ করে কাঁদতে লাগল। কাঁদতে কাঁদতে বলল, “আম্মা গো, ও আম্মা–তুমি কোথায় গেলে আমাকে ছেড়ে কোথায়-”
সোহেলের দিকে তাকিয়ে রূপার চোখে পানি এসে গেল।
.
রাজু বলল, “এই যে ভিডিওর দোকান আছে, সোহেল প্রথমে এখানে ঢুকেছিল।”
রাজু তিনজনকে নিয়ে এসেছে ড্রাগ ডিলারদের আস্তানাটা দেখানোর জন্যে। সোহেলকে অনেক কষ্ট করে শান্ত করে এসেছে। ওকে বুঝিয়ে-সুজিয়ে রাজি করিয়েছে সে যেন আবার স্কুলে আসা শুরু করে। স্কুলে নতুন ম্যাডাম খুব ভালো, ক্লাসে মোটেও বকাবকি করেন না। সোহেল আসতে রাজি হয়েছে কিন্তু আসলেই আসবে কী না কে জানে।
রাজু বলল, “ভিডিওর দোকানের পাশে যে রেস্টুরেন্টটা আছে সোহেল সেইখানে ড্রাগ ডিলারটাকে খুঁজে পেয়েছিল। সোহেল তার কাছ থেকে ড্রাগ কেনার পর ড্রাগ ডিলারটা ঐ খোলা চায়ের দোকানে গিয়েছে সেইখানে তার একটা পার্টনার আছে। মনে হয় এই চায়ের দোকানের মানুষটাও একই দলের।”
মিম্মি জিজ্ঞেস করল, “এখন আমরা কী করব?”
“এই জায়গাটাকে চোখে চোখে রাখলে মনে হয় ড্রাগ ডিলারকে পেয়ে যাব।”
“আমরা কীভাবে সারাক্ষণ চোখে চোখে রাখব? আমাদের স্কুল আছে না? বাসা আছে না?”
রাজু মাথা চুলকাল, “সেইটাই তো মুশকিল।”
রূপা বলল, “আমার মাথায় একটা আইডিয়া এসেছে।”
“কী আইডিয়া?”
“এইখানে বসে না থেকেই আমরা এইখানে নজর রাখতে পারব। যদি-”
“যদি কী?”
“আমাদের কাছে দুইটা মোবাইল ফোন থাকে।”
মিম্মি মুখ বাঁকা করল, “দুইটা মোবাইল ফোন?” আমার বাসায় আমাকে মোবাইল ফোন ধরতেই দেয় না।”
রাজু বলল, “আপুকে বললে আপু আমাকে ব্যবহার করতে দিতে পারে।”
রূপা বলল, “আমার আপুরও একটা মোবাইল ফোন আছে। আমাকে কখনো ব্যবহার করতে দিবে না। কিন্তু—”