ছেলেটা একটা সিগারেট ধরাল, তারপর লম্বা একটা টান দিয়ে অনেকক্ষণ ধরে ধোঁয়া ছাড়ল তারপর উল্টো দিকে হাঁটতে শুরু করে।
রাজু তখন রাস্তা পার হয়ে ছেলেটার খুব কাছাকাছি চলে এলো, ছেলেটা তাকে লক্ষ করল না। রাজু বেশ কয়েক পা পিছনে থেকে তার পিছনে পিছনে হাঁটতে থাকে।
ছেলেটা হেঁটে হেঁটে রাস্তার পাশের খোলা একটা চায়ের দোকানে ঢোকে। যে মানুষটা চা তৈরি করছে তাকে জিজ্ঞেস করল, “বকর আইছে?”
মানুষটি চা তৈরি করতে করতে বলল, “আইছে।”
“কই?”
রাজু বকরের গলা শুনতে পেল, “এই যে! আমি এইখানে।”
রাস্তার পাশে একটা দেয়াল, বকর নামের মানুষটা দেয়ালের পাশে দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করছিল। প্রস্রাব শেষ করে প্যান্টের জিপ লাগিয়ে কাছে এসে বলল, “ব্যবসাপাতি কেমন চলছে?”
“ভালো না। রেগুলার কাস্টমার ছাড়া নতুন কেউ নেই।”
“এমনি এমনি কাস্টমার হয় না আক্কাইস্যা। কাস্টমার বানাতে হয়।”
“সেইটা তো চেষ্টা করছি, কিন্তু মালদার কাস্টমারের অভাব। সখ আছে মালপানি নেই।”
মানুষ দুটি মাথা ঘুরিয়ে রাজুকে দেখল তাই রাজুকে ভান করতে হল সে এই খোলা চায়ের দোকানে কোনো একটা কারণে এসেছে। সে বকর এবং আক্কাস নামের দুইজন মানুষকে পাশ কাটিয়ে এগিয়ে গিয়ে দোকানিকে বলল, “একটা সিংগারা দিবেন।”
দোকানি এক টুকরো খবরের কাগজে মুড়ে তাকে একটা সিংগারা দিল। রাজু দাম মিটিয়ে সিংগারাটা হাতে নিয়ে হেঁটে চলে আসে। এক্ষুনি বাসা থেকে এত কিছু খেয়ে এসেছে এখন এই সিংগারা খাওয়ার কোনো ইচ্ছে নেই। রাস্তার মোড়ে উদাস মুখে একটা ছোট বাচ্চা ধুলো দিয়ে খেলছে, তার মা কোথায় কে জানে। রাজু বাচ্চাটাকে সিংগারাটা দিয়ে হেঁটে হেঁটে বাসায় ফিরে এলো।
সোহেল তার ড্রাগস কার কাছ থেকে কিনে, কোথায় কিনে সেটা অন্তত আজকে জানতে পেরেছে। অন্তত দুইজন মানুষ আছে যার একজনের নাম বকর অন্যজন আক্কাস।
.
০৭.
রূপা বলল, “তোদের এখন খুবই জরুরি একটা কথা বলা হবে, তোরা কাউকে এই কথাগুলো বলতে পারবি না।”
দুপুরের ছুটিতে স্কুলের মাঠে রূপা আর রাজু, সঞ্জয় আর মিম্মিকে নিয়ে বসেছে। অন্য সময় হলে চারজনকে মাঠের মাঝে বসে থাকতে দেখলেই অন্যেরাও এসে বসে যেত। এখন সবাই জানে বিজ্ঞান ম্যাডাম সবাইকে বিজ্ঞানের প্রজেক্ট দিয়েছেন সবাই নিজের টিম নিয়ে বসে আলাপ-আলোচনা করছে। সবাই ধরেই নিয়েছে তারা তাদের প্রজেক্ট নিয়ে কথা বলতে বসেছে। আসলে রূপা আর রাজু ঠিক করেছে অন্য দুইজনকে সোহেলের কথাটা বলবে।
মিম্মি জিজ্ঞেস করল, “কী কথা?”
“আগে বল কাউকে বলবি না।”
“কাউকে বলব না।”
“যদি বলিস তা হলে তোদের জিব খসে যাবে কিন্তু।”
সঞ্জয় অধৈর্য হয়ে বলল, “ঠিক আছে, ঠিক আছে বাবা। কী বলবি বল।”
“রূপা মুখ গম্ভীর করে বলল, আমাদের পাঁচজনের টিম হচ্ছে মিরূসোরাস কিন্তু এখন পর্যন্ত আমরা হচ্ছি মিরূরাস-সোহেল নেই।”
মিম্মি বলল, “আমি তখনই বলেছিলাম সোহেলকে নিয়ে কাজ নেই।”
“তুই বলিসনি।”
“ভেবেছিলাম বলব। শেষ পর্যন্ত বলা হয়নি।”
সঞ্জয় বলল, “সোহেলের মাথা তো আউলে গেছে।”
রূপা মাথা নাড়ল, “আসলে মাথা আউলে যায়নি। সেইটাই বলতে যাচ্ছি।”
“বল।”
রূপা একটু গলা খাকারি দিয়ে বলল, “সোহেল এখন ড্রাগ এডিক্ট।”
মিম্মি আর সঞ্জয় চোখ বড় বড় করে তাকাল, তাদের কিছুক্ষণ লাগল বুঝতে রূপা কী বলছে। সঞ্জয় কয়েকবার চেষ্টা করল, ড্রা-গ-এ-ডি-ক্ট?”
“হ্যাঁ।”
মিম্মি বলল, “তা হলে সে আমাদের সাথে প্রজেক্ট করবে কেমন করে?”
রাজু বলল, “আসলে আমরা প্রজেক্ট নিয়ে চিন্তা করছি না। আমাদের এখন চিন্তা কেমন করে সোহেলকে বাঁচানো যায়।”
মিম্মি বলল, “এক্ষুনি হেডস্যারকে বলতে হবে। হেডস্যার পুলিশকে ফোন করে দিলে পুলিশ ধরে নিয়ে যাবে–”
রূপা বলল, “সোহেলকে পুলিশ ধরে নিয়ে যাবে?”
“নেওয়াই তো উচিত। ধরে নিয়ে শক্ত পিটুনি দেওয়া দরকার। পিটুনি হচ্ছে ড্রাগিদের সবচেয়ে ভালো ওষুধ।”
রূপা বলল, “আসলে আমরা তোদর ডেকেছি অন্য একটা কারণে।”
“কী কারণ?”
“আমরা ড্রাগ ডিলারদের ধরে পুলিশকে দিতে চাই।”
সঞ্জয় আর মিমি চোখ বড় বড় করে রূপার দিকে তাকাল।
মিম্মি বলল, “তুই ড্রাগ ডিলারদের চিনিস?”
রূপা বলল, “আমি চিনি না। রাজু চেনে।”
“তা হলে পুলিশকে বলে দিচ্ছিস না কেন?”
রাজু বলল, “আমি আসলে মাত্র দুইজনকে দেখেছি। দলে মনে হয় আরো অনেকে আছে। আমি যে দুইজনকে দেখেছি সেই দুইজন ফালতু টাইপের, যেটা লিডার সেইটাকে খুঁজে বের করে তারপর পুলিশে খবর দিতে হবে।”
সঞ্জয় ভুরু কুঁচকে বলল, “কেমন করে খুঁজে বের করবে?”
রাজু মাথা চুলকে বলল, “সেইটা নিয়ে তোদের সাথে কথা বলতে চাই। তোদের কোনো আইডিয়া আছে কী না।”
সঞ্জয় ভুরু কুঁচকে চিন্তা করতে থাকে, কিন্তু তার চিন্তা করার খুব বেশি অভ্যাস নেই তাই একটু পরেই হাল ছেড়ে দিল। বলল, “তোদের কোনো আইডিয়া আছে?”
রূপা বলল, “সবার আগে আমাদের সোহেলের সাথে কথা বলতে হবে।”
“সোহেলের সাথে?”
“হ্যাঁ।”
“কী বলবি?”
“আমরা তাকে বোঝানোর চেষ্টা করব, দেখব সে কী বলতে চায়।”
মিম্মি সরু চোখে একবার রূপার দিকে আরেকবার রাজুর দিকে তাকাতে লাগল। রূপা বলল, “মিম্মি–”
“কী?”
“তুই কিন্তু কাউকে কিছু বলতে পারবি না।”
“বলব না।”
“আমার গা ছুঁয়ে বল।” রূপা তার হাতটা বাড়িয়ে দিল। ”বল গা ছুঁয়ে।”