রাজু একটা লম্বা দীর্ঘশ্বাস ফেলল, মিথিলা সেটা দেখে বলল, “তুই এরকম হতাশ হয়ে যাচ্ছিস কেন? তোর কে ড্রাগ খাচ্ছে?”
রাজু আর রূপা একসাথে বলল”না, না, কেউ খাচ্ছে না। তারা দুইজন একসাথে এত জোরে একই কথা বলল যে সবাই অবাক হয়ে তাদের দিকে তাকাল।
.
বিকেলবেলা যখন রূপা, মিম্মি আর সঞ্জয় বিদায় নিয়ে চলে আসছে ঠিক তখন রাজুর আব্বু তার কাজ থেকে ফিরে এলেন। কাঁচা-পাকা চুল, চোখে চশমা। সবাইকে দেখে হাসি হাসি মুখে বললেন”কী ব্যাপার? আমি আসছি আর তাই তোমরা চলে যাচ্ছ?”
মিম্মি মাথা নাড়ল, “না চাচা। আমরা অনেকক্ষণ ছিলাম।”
রূপা বলল, “বাসায় বলে এসেছি অন্ধকার হবার আগেই চলে আসব।”
“ঠিক আছে যাও। আবার এসো।”
“জি চাচা।”
রাজুর আব্বু রাজুর দিকে তাকিয়ে বললেন, “কী হল, তুই তোর বন্ধুদের বাসায় পৌঁছে দিবি না?”
রূপা আর মিম্মি বলল, “না, না, লাগবে না। আমরা নিজেরা যেতে পারব।”
“সেটা তো পারবেই। একশবার পারবে। তাই বলে রাজুর একটা দায়িত্ব আছে না? যা, রাজু তুই বন্ধুদের বাসায় পৌঁছে দে।”
কাজেই রাজুও ওদের সাথে বের হল। রাজু তখন ওদের সাথে গেল বলে ওদের পুরো ব্যাপারটাই সেদিন থেকে একেবারে অন্যরকম হয়ে গেল।
.
০৬.
চারজন একসাথে বের হবার পর থেকে মিম্মি কিছু একটা বলার জন্যে উশখুশ করছিল কিন্তু রাজু সাথে রয়েছে তাই বলতে পারছিল না! বড় রাস্তার মোড়ে এসে মিম্মি আর সঞ্জয় দুইজন দুইদিকে চলে গেল। সে কী বলতে চাইছিল তাই সেটা আর কেউ শুনতে পেল না।
রূপা তখন রাজুকে বলল, “রাজু আমি এখন একা একা চলে যেতে পারব। তুমি যাও।”
রাজু বলল, “তোমাকে আরেকটু এগিয়ে দিই।”
রূপা বলল, “তোমার আপুর কাছ থেকে ড্রাগের গল্পগুলো শুনে আমার শরীর কাঁটা দিয়ে উঠছিল।”
“ঠিকই বলেছ।”
“এখন সোহেলের কী হবে?”
“বুঝতে পারছি না। কী করব বুঝতে পারছি না।”
রূপা বলল, “আমার মনে হয় কী জান?”
“কী?”
“প্রথমে ওর আব্বুকে বলা দরকার। তারপর মনে হয় ওর আম্মুকে ফোন করা দরকার–”
হঠাৎ রাজু ঠোঁটে আঙুল দিয়ে বলল, “শ-স-স-স।”
রূপা রাজুর দৃষ্টি অনুসরণ করে তাকায়। দূরে সোহেল, হন হন করে হেঁটে আসছে। রাজু বলল, “চল লুকিয়ে যাই, দেখি কোথায় যায়।”
দুইজন তাড়াতাড়ি রাস্তার পাশে একটা দোকানের আড়ালে গিয়ে দাঁড়াল, না দাঁড়ালেও তাদের দেখত বলে মনে হয় না। সোহেল তাদের সামনে দিয়ে হেঁটে যেতে থাকে, এলোমেলো চুল, কুঁচকানো একটা টি-শার্ট। মুখটা শুকনো আর চোখের দৃষ্টি কেমন কেমন উদভ্রান্ত।
রূপা ফিসফিস করে বলল, “কোথায় যাচ্ছে?”
“জানি না।” রাজু সোহেলের দিকে তাকিয়ে রইল, তারপর বলল, “তুমি বাসায় যাও। আমি দেখি সোহেল কোথায় যায়, কী করে।”
“আমিও আসি তোমার সাথে।”
“না। দুইজন গেলে দেখে ফেলতে পারে। আমি একাই যাই।”
রূপা রাজি হল। এমনিতেই দেরি হয়ে গেছে এখন যদি সোহেলের পিছু পিছু যায় বাসায় যেতে আরো দেরি হয়ে যেতে পারে। রূপা তার বাসার দিকে রওনা দিল, রাজু দূর থেকে সোহেলের পিছু পিছু হেঁটে যেতে লাগল।
সোহেল বড় রাস্তা ধরে হেঁটে যেতে যেতে চৌরাস্তার মোড়ে এসে একটু দাঁড়াল, এদিক-সেদিক তাকাল, তারপর বাজারের দিকে হেঁটে যেতে থাকে। বাজারের কাছে একটা ভিডিওর দোকানের সামনে দাঁড়াল, এদিক-সেদিক তাকাল, তারপর ভিতরে ঢুকে গেল।
রাজু ঠিক বুঝতে পারল না এখন সে কী করবে, বাইরে অপেক্ষা করবে না কী ভেতরে ঢুকবে। তাকে অবশ্যি বেশিক্ষণ চিন্তা করতে হল না, তার কারণ সোহেল প্রায় সাথে সাথেই বের হয়ে এলো, আবার এদিক-সেদিক তাকাল, মনে হচ্ছে সে কাউকে খুঁজছে।
কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে সে আবার হাঁটতে থাকে। রাস্তার পাশে একটা চায়ের দোকানের ভেতর সে উঁকি দিল। হঠাৎ করে মনে হল সে যাকে খুঁজছে তাকে পেয়ে গেছে। লম্বা লম্বা পা দিয়ে সে ভেতরে ঢুকে গেল আর একটু পরেই সে আরেকজনের সাথে বের হয়ে এলো।
যার সাথে বের হয়ে এলো তার বয়স আঠারো-উনিশ বছরের বেশি হবে না, খুবই টাইট একটা জিন্সের প্যান্ট আর কালো একটা টি-শার্ট পরে আছে। টি-শার্টে মানুষের নরমুণ্ডুর একটা ছবি। ছেলেটির মাথায় বাহারি চুল, গলায় একটা চেন।
রাজু দূর থেকে দেখল সোহেল এই ছেলেটার সাথে কথা বলছে। ছেলেটা সোহেলকে কিছু একটা বোঝানোর চেষ্টা করছে, সোহেল বুঝতে চাইছে না। খানিকক্ষণ দুইজন কথা বলল, কিংবা বলা যেতে পারে তর্কবিতর্ক করল তারপর মনে হল সোহেল হাল ছেড়ে দিল। ছেলেটা তখন হাত পাতল, সোহেল পকেট থেকে বেশ কিছু টাকা বের করে গুনে গুনে কিছু টাকা ছেলেটার হাতে দিল। ছেলেটা তখন আবার টাকাগুলো গুনে গুনে পকেটে ঢোকাল। তারপর ছেলেটা চারদিকে চোখ ঘুরিয়ে তাকাল। রাজু তাড়াতাড়ি মুখ ঘুরিয়ে নেয়। কোথাও কোনো সন্দেহজনক কিছু নেই নিশ্চিত করে ছেলেটা পকেট থেকে ছোট একটা প্যাকেট বের করে, সেখান থেকে আরেকটি ছোট প্যাকেট বের করে সোহেলের হাতে ধরিয়ে দিল।
সোহেল প্যাকেটটা খুলে ভালো করে দেখল তারপর এদিক-সেদিক তাকিয়ে পকেটে ঢুকিয়ে ফেলল। ছেলেটার সাথে আবার কিছুক্ষণ কথা বলল তারপর যেদিক দিয়ে এসেছিল সেদিক দিয়ে হন হন করে হেঁটে যেতে শুরু করে।
রাজু তাড়াতাড়ি আরেকটা দোকানের ভেতরে ঢুকে গেল। সোহেল চলে যাবার পর রাজু বের হয়ে আসে, রাস্তার অন্য পাশে টাইট জিন্স আর কালো টি শার্ট পরা ছেলেটা এখনো দাঁড়িয়ে আছে। রাজু একটু চিন্তা করল এখন সে কী করবে, সোহেলের পিছু পিছু যাবে না কী এই ছেলেটা কী করে সেইটা বের করবে। সোহেল নিশ্চয়ই এখন বাসাতেই যাবে কাজেই তার পিছু পিছু গিয়ে সে নতুন কিছু জানতে পারবে না। কিন্তু এই ছেলেটার পিছু পিছু গেলে সে নতুন কিছু জানতেও পারে।