“বাঘের বাচ্চা?”
“হ্যাঁ। কোনোদিন চিন্তা করি নাই নসু ডাকাতরে কেউ ধরতে পারবে। কিন্তু আমি এর কাছে পারলাম না। একেবারে বাঘের বাচ্চা। এর পা ধরে সালাম করা দরকার।”
পুলিশ তখন হ্যাঁচকা টান দিয়ে নসু ডাকাতকে অন্যদের সাথে টেনে সরিয়ে নিয়ে যায়। তৃষা ঘুরে শামসের দিকে তাকিয়ে ভুরু কুঁচকে বলল, “আসলে কী হয়েছিল শামস ভাই? আসলে কে আমাদের উদ্ধার করেছিল?”
তৃষা হঠাৎ প্রায় ছিটকে শামস থেকে সরে এল।
শামস আমতা আমতা করে বলল, “না মানে ইয়ে–”
তৃষা একদৃষ্টিতে শামসের চোখের দিকে তাকিয়ে থাকে আর অবাক হয়ে আবিষ্কার করে, সুদর্শন মানুষটি কী বিচিত্রভাবে দুমড়ে-মুচড়ে একজন অসুন্দর মানুষে পাল্টে যাচ্ছে!
.
রাজাকে বিদায় দিয়ে রাতুল খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে এগিয়ে যাচ্ছিল। হঠাৎ শুনতে পেল পেছন থেকে কে যেন চিৎকার করে ডাকছে–”রাতুল, রাতুল।”
রাতুল ঘুরে তাকাল। তৃষা ছুটতে ছুটতে আসছে। কাছে এসে সে খপ করে রাতুলকে ধরল। ছুটে এসেছে বলে এখনও হাঁপাচ্ছে। রাতুল জিজ্ঞেস করল, “কী হয়েছে তৃষা?”
“তুই… তুই…” তৃষা কথা বলতে পারল না। হঠাৎ ভেউ ভেউ করে কেঁদে ফেলল।
রাতুল অবাক হয়ে বলল, “কী হল? কাঁদছিস কেন?”
“আমাকে কেউ কিছু বলেনি।”
“কী বলেনি?”
“তুই সবাইকে বাঁচানোর জন্যে কী করেছিস! কী সাংঘাতিক কাণ্ড করেছিস! আমি কিছু জানতাম না। একটু আগে যখন নসু ডাকাত বলল–”
“নসু ডাকাত! কী বলেছে?”
“বলেছে, তুই বাঘের বাচ্চা। বলেছে, সবার তোর পা ধরে সালাম করা উচিত। বলেছে–”
তৃষা আবার কাঁদতে শুরু করে। রাতুল এদিক-সেদিক তাকিয়ে বলল, “তুই কান্না থামাবি? চারপাশে সবাই ভাবছে, আমি তোর সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেছি, আর তাই তুই কাঁদছিস। এক্ষুনি কান্না থামা। তা না হলে পাবলিক ধরে আমাকে পিটিয়ে দেবে।”
“তুই আমাকে ধরে একটু মায়া করে দে, প্লীজ–”
রাতুল হাত দিয়ে তৃষাকে জড়িয়ে ধরে বলল, “কাঁদিস না প্লীজ। তোকে কাঁদতে দেখলে আমার ভিতরে সব ওলটপালট হয়ে যায়।”
তৃষা চোখ মুছে বলল, “তুই আমাকে ধরে রাখ। তা হলে আমি আর কাঁদব না।”
রাতুল তৃষাকে শক্ত করে ধরে বলল, “এই যে ধরেছি।”
তৃষা তখন চোখ মুছে বলল, “আমি খুব বোকা।”
“ধুর! বোকা কেন হবি?”
তৃষা মাথা নেড়ে বলল, “আমি জানি, আমি আসলে খুব বোকা। কিন্তু তুই আমার চাইতেও বোকা।”
রাতুল বলল, “তা হলে বোকাই ভালো। আমি বোকা তুই বোকি। দুইজন বোকাবুকি!”
তুষা হি হি করে হাসল। দুজনে নিঃশব্দে খানিকটা হেঁটে যায়। একসময় রাতুল বলল, “তা হলে আমরা দুইজন আবার বন্ধু?”
তৃষা মুখ টিপে হাসল। বলল, “বন্ধু থেকে বেশি।”
রাতুল চোখ বড় বড় করে বলল, “বন্ধু থেকে বেশি?”
“হ্যাঁ।”
“কত বেশি? একটুখানি?”
তৃষা মাথা নাড়ল, “না। মনে হয় অনেকখানি।” রাতুল তৃষার চোখের দিকে তাকাল। তৃষা রাতুলের চোখের দিকে তাকিয়ে হঠাৎ চোখ নামিয়ে নেয়।
.
সদরঘাটের ব্যস্ত রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে রাতুলের মনে হল চারপাশে কোনো মানুষ নেই, ভিড় নেই, গাড়ি নেই। রিকশা, দোকানপাট–কিচ্ছু নেই। তার মনে হল, বুঝি শুধু তারা দুইজন হাঁটছে।
শুধু দুইজন।