শামস আবার বলল, “তোমার কী মাথা খারাপ হয়েছে? তারা আর্মড।”
রাতুল শামসের কথা পুরোপুরি উপেক্ষা করে বলল, “রাজা উপর থেকে ভুলিয়ে ভালিয়ে একজন করে নিচে আনবে, আমরা তাকে সবাই মিলে ধরব। আমাদের পক্ষে কাজ করবে দুটো জিনিস। এক, আমরা অনেকেই আছি। দুই. ওরা মোটেও জানে না যে আমরা এটা করব। সারপ্রাইজ ভ্যালু।”
শামস বলল, “আমি এসবের মাঝে নেই। তুমি তোমার নিজের লাইফকে রিস্কের মাঝে ফেলতে চাও সেটা তোমার ইচ্ছা। কিন্তু তুমি আমাদের লাইফকে বিপদে ফেলবে সেটা আমি হতে দেব না।”
সজল বলল, “রাতুল আমি রাজি।”
শান্ত বলল, “আমি রাজি স্পাইডার ভাইয়া।”
সাথে সাথে অন্য সব বাচ্চা হাত তুলে বলল, “আমরা রাজি। আমরা রাজি।”
রাতুল মুখে আঙুল দিয়ে বলল, “শ স স স… কোনো শব্দ না। ভেরি গুড। বাচ্চারা হলে আরো ভালো, সারপ্রাইজটা আরও বেশি হবে। এখন আমি বলি আমাদের কী করতে হবে।”
রাতুল গলা নামিয়ে ওদেরকে তার পরিকল্পনাটা বোঝাতে থাকে।
.
রাজা উপরে উঠে দেখল, যে চারজন ঘুমের ওষুধ খেয়েছে তারা কেমন যেন জবুথবু হয়ে বসে আছে। মেয়ে তিনজন ট্রলারের ভেতর বাঁধা। বদি বস্তার ভেতরে জিনিসগুলো বাঁধছে, রাজা তার কাছে গিয়ে ফিস ফিস করে বলল, “ওস্তাদ, আপনার সাথে একটা জরুরি পরামর্শ করতে পারি? গোপনে।”
বদি দাঁত বের করে হাসল। বলল, “আমার সাথে? গোপনে?”
“জে।” রাজা ষড়যন্ত্রীর মতো মুখ করে বলল, “কেউ যেন টের না পায়।”
“কী পরামর্শ? বল?”
“আপনি যদি কিরা কাটেন–কাউরে বলবেন না, তা হলে আপনারে বলব।”
বদি রাজার মাথায় চাটি মেরে বলল, “বদমাইশের বাচ্চা। তোর সাহস তো কম নয়! আমারে বলিস কিরা কাটতে!”
“আমি পুরা ব্যাপারটা বললেই আপনি বুঝবেন ওস্তাদ। শুধু বলেন, আমারে একটু ভাগ দিবেন।”
বদি এবারে চোখ সরু করে বলল, “কীসের ভাগ?”
“কাউরে বলবেন না তো? খালি আমি আর আপনে।”
“ঠিক আছে।”
“খোদার কসম?”
বদি বিরক্ত হয়ে রাজার মাথায় আরেকটা চাটি দিয়ে বলল, “বল কী বলবি? তোর জন্যে আমি কসম-কিরা কাটব? বেকুব কোথাকার!”
রাজা গলা নামিয়ে বলল, “নিচে একজন স্যারের কাছে এই রকম টাকার একটা বান্ডিল। মাদুরের তলায় লুকায়া রাখছে। সব পাঁচশ টাকার নোট।”
“সত্যি!” বদির চোখ লোভে চক চক করে ওঠে।
”জে ওস্তাদ। আপনি নিচে আসেন, আমি দেখায়া দেই।”
বদি এক মুহূর্ত চিন্তা করল, নসু ডাকাতকে কিছু না বলে এতগুলো টাকা নিজে নেওয়াটা বিপজ্জনক। কিন্তু এই রকম সুযোগ আর কখন পাবে? বদির যুক্তি-তর্ক লোভের কাছে হার মানল। সে রাজার দিকে তাকিয়ে বলল, “চল যাই।”
রাজা বদিকে পথ দেখিয়ে নিয়ে যায়। সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে একটু যেতেই দেখা গেল বাচ্চারা গায়ে গা লাগিয়ে বসে আছে। রাজা তাদের ভেতর দিয়ে জায়গা করে এগিয়ে যেতে যেতে গলা নামিয়ে বলল, “ঐ যে মোটা মতোন ফর্সা মানুষটা দেখছেন–”
রাজা তার কথা শেষ করতে পারল না। তার আগেই হঠাৎ করে একসাথে সব বাচ্চা বদির পা ধরে হ্যাঁচকা টান দেয় আর সে মুখ থুবড়ে পড়ে যায়। সাথে সাথে বিদ্যুৎ গতিতে সবাই তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল। কেউ কিছু বোঝার আগে একজন টান দিয়ে তার বন্দুকটা কেড়ে নেয়। একজন মুখের মধ্যে একটা কাপড় গুঁজে দেয় যেন শব্দ করতে না পারে। অন্যরা তাকে চেপে ধরে রাখে।
কে কী করবে আগে থেকে ঠিক করে রাখা ছিল। সবাই নিখুঁতভাবে তার দায়িত্ব পালন করল। আর দুই মিনিটের মধ্যে দেখা গেল বদি ডাকাতকে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে ফেলা হয়েছে।
শান্ত জিজ্ঞেস করল, “এখন এই ডাকাতকে কী করব স্পাইডার ভাইয়া?”
রাজা বলল, “বাইরে পানির মাঝে ফালায়া দেন। মারবেলের মতো টুপ করে ডুবে যাবে! ফিনিশ।”
রাজার প্রস্তাব শুনে বদি ডাকাত চমকে ওঠে। তার কিছু করার নেই। একটু নড়াচড়া করেই প্রতিবাদ করার চেষ্টা করল। রাতুল বন্দুকটা হাতে নিয়ে বলল, “খবরদার। যদি নড়াচড়া কর, আসলেই পানিতে ফেলে দিব।”
বদি ডাকাত নড়াচড়া বন্ধ করল। জাহাজের মাঝখানে একটা ডালার মতো আছে। সেটা খুললে জাহাজের খোলটা দেখা যায়। যখন অনেক মালপত্র আনতে হয় তখন সেটাতে ভর্তি করে আনা হয়। এখন সেটা খালি। কিছু তেলের ড্রাম, বাক্স এবং জঞ্জাল পড়ে আছে। সবাই মিলে ধরাধরি করে এনে বদি ডাকাতকে তার ভেতরে ফেলে দিয়ে ডালাটা বন্ধ করে দিল।
রাতুল রাজাকে বলল, “এখন যাও। আরেকজনকে নিয়ে এসো। পারবে না?”
রাজা দাঁত বের করে বলল, “পারুম স্যার।”
উপরে উঠে দেখা গেল চারজন ডাকাত ঘুমে ঢলে পড়ে গেছে। কালোমতোন ডাকাতটা, যাকে নসু ডাকাত কাউলা বলে ডেকেছে সে বেশ অবাক হয়ে ঘুমিয়ে থাকা ডাকাতগুলোকে জাগানোর চেষ্টা করছে। নসু ডাকাত নেই। মনে হয় ট্রলারে গেছে।
রাজা গিয়ে কাউলা ডাকাতকে ডাকল, “ওস্তাদ।”
কাউলা ঘুরে রাজাকে দেখে কেমন যেন ক্ষেপে উঠল। দাঁত-মুখ খিঁচিয়ে বলল, “দূর হ হারামজাদা।”
রাজা গালাগালি গায়ে মাখল না। বলল, “ওস্তাদ আপনার সাথে একটা গোপন কথা।”
“তোর সাহস তো কম না! আমার সাথে গোপন কথা!”
“শুনলে আপনি তাজ্জব হয়ে যাবেন ওস্তাদ।”
কাউলা মুখ খিঁচিয়ে ধমক দিয়ে বলল, “চুপ থাক।” তারপর একটা অশ্লীল গালি দিল।
রাজা বুঝতে পারল, কাউলাকে টাকার লোভ দেখিয়ে নেওয়া যাবে না। তার সাথে কথাই বলতে চাইছে না। রাজা তখন সরাসরি তার দুই নম্বর পরিকল্পনায় চলে গেল। কাউলার কাছাকাছি এসে সে থুঃ করে তার মুখে এক দলা থুথু ফেলে দিল।